খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৫ : অভিযোগ ছিল শপথ নিয়ে আদালতে মিথ্যা বলা ও বিচার প্রভাবিত করার। লন্ডনের সাউথওয়ার্ক ক্রাউন আদালত সেই দুটি অভিযোগ থেকেই মুক্তি দিয়েছেন সাবেক নিউজিল্যান্ড অলরাউন্ডার ক্রিস কেয়ার্নসকে। তবে এই রায়ের ফলে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ থেকেও মুক্তি পেয়েছেন কেয়ার্নস। সাবেক কিউই অলরাউন্ডারের তাতে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছেন সন্দেহ নেই, কিন্তু ক্রিকেট থেকে যাবতীয় দুর্নীতি দূর করার লড়াইয়ে এটাকে একটা বড় আঘাত বলে মনে করেন ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
লন্ডনের আদালতে কেয়ার্নসের এই মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসেছিলেন নিউজিল্যান্ডের বর্তমান অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালাম, অস্ট্রেলিয়ার সাবেক অধিনায়ক রিকি পন্টিং। এসেছিলেন সাবেক কিউই ক্রিকেটার লু ভিনসেন্টও। বলার অপেক্ষা রাখে না, তাঁদের সবার সাক্ষ্যই ছিল কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে। ভিনসেন্টের সঙ্গে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তাঁর সাবেক স্ত্রীও। কিন্তু কিছুতেই নাকি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়নি যে কেয়ার্নস আসলেই ফিক্সিংয়ের সঙ্গে জড়িত ছিলেন!
রায়টাকে তাই কেয়ার্নসের জন্য উল্লসিত হওয়ার এক বিষয় বলে মনে করেন ডাইলিন ক্লিয়েভার। ক্লিয়েভার হচ্ছেন সেই সাংবাদিক, যিনি প্রথম তাঁর পত্রিকা নিউজিল্যান্ড হেরাল্ডে কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ম্যাচ আইসিসির ম্যাচ ফিক্সিং তদন্তের বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। তিনি মনে করেন, কেয়ার্নসের এই মামলায় ব্রেন্ডন ম্যাককালামসহ যেসব ক্রিকেটাররা সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গে যে ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে প্রশ্ন উঠতেই পারে, ভবিষ্যতে কোনো ক্রিকেটার ক্রিকেট-দুর্নীতির বিষয়ে কোনো তদন্তকাজে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেবে কি না!
শঙ্কা প্রকাশ করে এই সাংবাদিক বলেছেন, ‘কেয়ার্নসের মামলায় তাঁর আইনজীবীরা যেভাবে সাক্ষ্য দিতে আসা ক্রিকেটারদের চরিত্র হনন করেছেন, তাতে ভবিষ্যতে খেলোয়াড়েরা এই কাজটি করার আগে দুবার ভাববে।’
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল আথারটনের যুক্তিও এমনটাই। এই মুহূর্তে একজন ক্রিকেট বিশ্লেষক হিসেবে লন্ডন টাইমসের সঙ্গে যুক্ত আথারটন। তিনি বলেছেন, ‘কেয়ার্নসের মামলায় আদালত যে রায়টা দিয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ক্রিকেটের দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ওপর প্রভাব ফেলবে। সব মিলিয়ে এই মামলায় যা ফল এসেছে, তাতে খেলোয়াড় থেকে শুরু করে প্রায় সবাই এ ধরনের ব্যাপার আদালতে নিয়ে আসার ব্যাপারে উৎসাহ হারিয়ে ফেলবে।’
আইপিএলের সাবেক কমিশনার লোলিত মোদি ২০১০ সালে করা এক টুইটে কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগ এনেছিলেন। কেয়ার্নস অবশ্য মোদির বিরুদ্ধে ২০১২ সালে একটা মানহানি মামলা করে জিতে যান। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরে জানা যায়, আইসিসির দুর্নীতি দমন ইউনিট (আকসু) কেয়ার্নসের বিরুদ্ধে ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগ তদন্ত করছে।
ক্রিকেট ঐতিহাসিক গিডেওন হেই বলেছেন, আইসিসির এই দুর্নীতি দমন ইউনিট কিন্তু অনেক আগেই নিজেদের বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। তিনি মনে করেন, ভারতের সাবেক পেসার শান্তাকুমারন শ্রীশান্তের বিরুদ্ধে আইপিএলের স্পট ফিক্সিং অভিযোগ প্রমাণ করতে না পারার মধ্য দিয়েই আইসিসির এই সংস্থাটি সুনাম হারিয়েছে। কেয়ার্নসের মামলায় লু ভিনসেন্টের দেওয়া সাক্ষ্যের পরেও তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। অথচ ম্যাচ ফিক্সিংয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে এই ভিনসেন্টকে ক্রিকেট থেকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হেই অস্ট্রেলিয়ার একটি দৈনিকে লিখেছেন, ‘শ্রীশান্তের মামলাটি প্রমাণ করতে ব্যর্থ হওয়ার পর, এই আকসু, যদি তাদের অস্তিত্ব আদৌ থেকে থাকে, নিজেদের ওজন হালকা করে ফেলেছে।’
ব্রিটেনের ডেইলি টেলিগ্রাফ পত্রিকার বিশিষ্ট ক্রিকেট লেখক শিল্ড বেরি মনে করেন, কেয়ার্নসের মামলাটা হচ্ছে, ঘরের দরজা খুলে ভেতরে ঘটতে থাকা অনৈতিক কাজের অস্তিত্ব জানিয়ে দরজাটা মুখের ওপর সজোরে বন্ধ করে দেওয়া। তিনি বলেন, এর পর থেকে খুব বড় কিছু না ঘটলে সবাই ক্রিকেটের ম্যাচ ফিক্সিং, স্পট ফিক্সিংসহ অন্যান্য দুর্নীতির ব্যাপারে নির্লিপ্তই থাকবে।
রেডিও নিউজিল্যান্ডের ক্রীড়া সাংবাদিক স্টিফেন হেইসন কিছুটা রসিকতার সঙ্গেই বলেছে, ‘এই রায়ে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটারদের কিছুটা সুনামহানি হলেও একেবারে ধ্বংস হয়ে যায়নি।’ সূত্র:এএফপি।