খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২ ডিসেম্বর ২০১৫ : বিশ্ব ব্যাংকের মানদণ্ডে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় কয়েকটি দাতাসংস্থা ও দেশ ঋণের ওপর সুদ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।
তিনি বলেছেন, সুদ বাড়ানোর এ ধরনের প্রস্তাব ‘প্রতিরোধ’ করা উচিৎ।
বুধবার ‘ইস্তাম্বুল কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন’ এর পর্যালোচনা খসড়া প্রতিবেদন উপস্থাপন সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মুহিত বলেন, “সম্প্রতি কয়েকটি দাতা সংস্থা আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার কথা উল্লেখ করে সুদের হার বাড়াতে নোটিশ দিয়েছে। সম্প্রতি জাপান সুদের হার নিয়ে কথা তুলেছে। আমি তাদের বলেছি, এখনই আমরা ওই পর্যায়ে যাইনি।”
বর্তমানে বিশ্ব ব্যাংক ০.০৭৫ শতাংশ, জাইকা ০.০১ শতাংশ এবং এডিবি ১ থেকে ২ শতাংশ পর্যন্ত সুদে বাংলাদেশকে ঋণ দেয়। মধ্যম আয়ের দেশের ক্ষেত্রে এই হার ৩ শতাংশ পর্যন্ত হয়।
মুহিত বলেন, বিশ্ব ব্যাংক তাদের সূচক অনুযায়ী বাংলাদেশকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ ঘোষণা করলেও জাতিসংঘের সংজ্ঞা অনুযায়ী বাংলাদেশের এখনো উত্তরণ ঘটেনি।
জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে নিয়ে তিন বছর পর পর পর্যালোচনা বৈঠক করে। ২০১৫ সালের সর্বশেষ বৈঠকেও বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়নি।
মুহিত বলেন, জাতিসংঘ সব সময় আগের বছরের তথ্যের ভিত্তিতে দেশগুলোর অবস্থান পর্যালোচনা করে বলে ওই বৈঠকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির প্রতিফলন হয়নি। “পরের বৈঠক হবে ২০১৮ সালে। ওই বৈঠকে জাতিসংঘের তালিকায় বাংলাদেশ মধ্য- নিম্ম মধ্যম আয়ের তালিকায় উন্নীত হবে। এরপর পর্যবেক্ষণের আওতায় আরও তিন বছর স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় রাখা হবে। সে হিসাবে আগামী ২০২১ সালের আগে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে পারবে না। আমরা স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে গেলে সুযোগ সুবিধা কম পাব।”
অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ২০২১ সালের মধ্যেই মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে আসছেন, তাও স্বীকার করেন মুহিত।
শেরেবাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে এই সভায় বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এতে মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব আলকামা সিদ্দিকী।
মুহিত বলেন, আমাদের দেশে এখনো প্রায় চার কোটি মানুষ দারিদ্র সীমার নীচে বাস করে। পৃথিবীর বহু দেশে চার কোটি মানুষই নেই।
“দারিদ্র্য বিমোচন এখনো আমাদের প্রধান টার্গেট। দারিদ্র্য বিমোচনই এখনো প্রাধান্য পাচ্ছে। তাই পাওয়া উচিৎ।”
বৈঠকের এক পর্যায়ে মন্ত্রী বলেন, “আমাদের শিক্ষা খাত এখনো বিশঙ্খল (হরিবল) অবস্থায় রয়েছে। যখনই কোনো একটি কলেজ জাতীয়করণ হয়, তখন শিক্ষকরা ঢাকায় চলে আসতে চান। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ। এখন থেকে জাতীয়করণ হলে শিক্ষক বদলি করতে না পারার সুপারিশ রাখা উচিৎ।’
বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, “বিশ্ব ব্যাংকসহ বিশ্বের অন্যান্য দেশ আমাদের নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের স্বীকৃতি দিয়েছে। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই। বাংলাদেশের অগ্রগতি বিস্ময়কর। আমরা স্বল্পোন্নত দেশ, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি।”
এই অবস্থায় রপ্তানির বাজার বাড়ানোর পাশপাশি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপর জোর দেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
“যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বহু উন্নত দেশে আমরা শুল্ক ও কোটামুক্ত রপ্তানি সুযোগ রয়েছে। সম্প্রতি চিলি আমাদের এ সুযোগ দিয়েছে। শিগগিরই ব্রাজিল ও তুরস্কেও আমাদের এ সুযোগ পাওয়ার কথা রয়েছে।”
মূল প্রবন্ধে আলকামা সিদ্দিকী বলেন, জাতিসংঘের ‘কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি’ (সিডিপি) স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার জন্য যে তিনটি সূচক ঠিক করে দিয়েছে, তার দুটো বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পূরণ করেছে।
“আমাদের মাথা পিছু আয় এক হাজার ২৪২ ডলারের বেশি। অর্থনীতির ঝুঁকি ৩২ শতাংশের নিচে থাকতে হবে, এই সূচকে আমরা ২৫ দশমিক ১ পয়েন্টে রয়েছি। তবে মানবোন্নয়ন সূচকে প্রয়োজনীয় ৬৬ দশমিক ২৪ পয়েন্টের বিপরীতে আমাদের অর্জন ৬৪।”
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দিন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ড. এম আসলাম আলম, বিবিএস সচিব কানিজ ফাতেমাসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।