খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ৪ ডিসেম্বর ২০১৫ : বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার নতুন চক্রান্ত হচ্ছে বলে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে সৌদি আরবভিত্তিক গণমাধ্যম আরব নিউজ।
শুক্রবার প্রকাশিত গণমাধ্যমটির ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দলের (বিএনপি) ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন বয়কটের প্রেক্ষিতে রক্তাক্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পরপরই অস্থিতিশীলতার নতুন এ ক্ষেত্র তৈরী করা হচ্ছে।
রাজনৈতিক ওই সহিংসতায় প্রায় ১০০ মানুষ মারা যায়, যাদের সবাই ছিল সাধারণ নাগরিক বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।
আরব নিউজের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, ব্লগার, খ্রিস্টান যাজক এবং বিদেশি নাগরিকদের ওপর হামলার ঘটনা ভয়ানক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব হামলার পর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওয়েবসাইট ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ জানিয়েছে, জঙ্গি সংগঠন দায়েশ (আইএস) এসব হামলার দায় স্বীকার করেছে।
সম্প্রতি বাংলাদেশে জাপানের এক নাগরিক এবং ইতালির এক নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে। এতে গুরুতর আহত হয়েছে ইতালির আরেক নাগরিক। এমনকি উ”চ সম্মানপ্রাপ্ত সেনাবাহিনীও রেহাই পায়নি এসব হামলা থেকে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই প্রথম শিয়া মসজিদে হামলার কথাও উল্লেখ করা প্রতিবেদনটিতে।
প্রশ্ন উঠেছে, ১৬ কোটি মুসলমানের দেশে কি তাহলে দায়েশ আছে। যদিও বাংলাদেশ সরকার বারবার দায়েশের অস্তিত্ব প্রত্যাখ্যান করেছে এবং বলেছে, দেশের বাইরে থেকে নির্দেশনাপ্রাপ্ত হয়ে বিভিন্ন স্থানীয় গোষ্ঠি এসব হামলা চালাচ্ছে।
যদিও দায়েশের অস্তিত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, তবে আল কায়েদার সাথে সম্পর্কিত জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি), আনসারুল্লাহ বাংলা টিম এবং আল নুসরা ফ্রন্টের মতো জঙ্গি সংগঠনের কথা বলা হয়েছে। ২০০৫ সালে দেশের ৬৪টি জেলার ৩০০টি স্থানে বোমা হামলা ঘটিয়ে তাদের অবস্থান জানান দেয় জেএমবি।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের সামনে বলেন, বাংলাদেশকে বিদেশিদের জন্য অনিরাপদ প্রমাণ করতে দায়েশের অস্তিত্ব স্বীকার করার জন্য তার সরকার বড় ধরনের চাপে আছে। দারিদ্র্যকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ এলাকা থেকে দায়েশ সংগ্রহকারী অনেক বিদেশি নাগরিককে চিহ্নিত করা হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলাদেশকে বিদেশিদের জন্য নিরাপদ দাবি করে বলেন, নভেম্বর মাসেই প্রায় ১০ হাজার পর্যটক বাংলাদেশ ভ্রমণ করেছে। বর্তমানে দেশে ২ লাখ ২৪ হাজারেরও বেশি বিদেশি নিরাপদ পরিবেশে বাস করছে ও তাদের কাজ করছে।
রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার নিকোলেভ বলেছেন, বাংলাদেশ একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ এবং এদেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্র কোনো কাজে আসবে না।
বাংলাদেশে সম্প্রতি কয়েকটি বড় আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান হয়েছে। বাংলাদেশ সফর করেছে নেদারল্যান্ডসের রানী ম্যাক্সিমা। বিপিএলে বিদেশি খেলোয়াররা নিরাপদে খেলাধুলা করছেন। যদিও হাস্যকরভাবে অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দল তাদের বাংলাদেশ সফর বাতিল করেছে।
আরব নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, কোনো সন্দেহ নেই বাংলাদেশ একটি নিরাপদ এবং সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এদেশে বিভিন্ন ধর্মের লোক একসাথে বাস করে আসছে।
দায়েশ আছে কি নেই- এমন আন্তর্জাতিক ব্লেম গেমের মধ্যে বাংলাদেশ সম্ভবত এই প্রথম জাতীয় কোনো ইস্যুতে রাজনৈতিক ঐকমত্যে পৌঁছাল। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং সাবেক সেনাপ্রধান মাহবুবুর রহমানও কোনো জঙ্গি গোষ্ঠির অস্তিত্বের কথা উড়িয়ে দিয়েছেন।
আশা করা যায়, যারাই বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার এসব ঘটনায় জড়িত থাকুক, সরকার তাদের শাস্তির আওতায় আনতে সক্ষম হবে।