খোলা বাজার২৪, শনিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, এখন আর সরকার গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন বন্ধ করতে চাপ দেয় না। ৪০ বছর আগে বিজ্ঞাপন বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমের জন্য গুরুতর (সিরিয়াস) বিষয় ছিল। কেননা তখন শুধু সরকারি বিজ্ঞাপন আসত। কিন্তু এখন সেই অবস্থা নেই।
আজ শনিবার দুর্নীতিবিরোধী আন্তর্জাতিক সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) উদ্যোগে ‘অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতা ২০১৫’ এর পুরস্কার বিতরণ এবং ‘গণমাধ্যম ও সুশাসন’ শীর্ষক আলোচনায় প্রধান অতিথি গওহর রিজভী সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
গওহর রিজভী বলেন, ‘প্রেস ফ্রিডমের বাধা শুধু সরকারের কাছ থেকে আসছে, তা নয়। এর সঙ্গে অন্যরাও আছে। অনেক সংস্থা, অনেক ব্যক্তি আছেন। সেটার দিকেও আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।’ তিনি বলেন, আগের মতো এখন আর গণমাধ্যমে বাধা দেওয়ার উপায় নেই। একটা বন্ধ করে দিলে ৫০টা হবে। এ ছাড়া সঙ্গে রয়েছে ইন্টারনেট ও ফেসবুক। তিনি বলেন, সব সময় সব সরকার ও সব নেতা (লিডার) গণমাধ্যমের ওপর হস্তক্ষেপ করেন।
এক প্রশ্নের জবাবে গওহর রিজভী বলেন, ‘কোথা থেকে বাধা এসেছে, কেমন করে বাধা দেওয়া হয়েছে, সেটাও দেখতে হবে। আমি গণমাধ্যমে বাধা দেওয়ায় বিশ্বাস করি না।’ তিনি বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা পুরোনো আলোচনার বিষয়। তবে সব বাধা অতিক্রম করে বাংলাদেশের সাংবাদিকেরা খুব ভালোভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বলে আমি মনে করি। গওহর রিজভী বলেন, এমন কোনো দিন নেই যে গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে আমরা সে বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে খোঁজ-খবর করি না। গণমাধ্যম এসব সংবাদ প্রচার না করলে আমরা কোথা থেকে এটা করতাম।
গওহর রিজভী বলেন, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা শুধুমাত্র সরকারের দিক থেকেই বাধাগ্রস্ত হয় না। এ ক্ষেত্রে সম্পাদকদের ওপর মিডিয়ার করপোরেট মালিকদের খবরদারির বিষয়টিও গুরুত্ব দিয়ে দেখার সময় এসেছে।
অনুষ্ঠানে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘অনেক চ্যালেঞ্জ থাকার পরও আমাদের দেশের গণমাধ্যম ঝুঁকি নিয়ে ভালো কাজ করে যাচ্ছে। গণমাধ্যম সরকারের সহযোগী ও সহযোদ্ধা হিসেবেই কাজ করে থাকে। তাই গণমাধ্যম যেমন সরকারের ইতিবাচক তথ্য প্রচার করবে, তেমনি সরকারের সমালোচনাও করবে। এই সমালোচনা সরকারকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা আকবর আলি খান বলেন, ‘অনেক দুর্বলতা সত্ত্বেও বাংলাদেশের গণমাধ্যমের যে অর্জন, তা গর্ব করার মতো। বিশেষ করে, বিশ্বে সুশাসনের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচের দিকে হলেও এ দেশের গণমাধ্যমের অর্জন প্রশংসনীয়।’
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল। আলোচনায় অংশ নেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর, রাষ্ট্রবিজ্ঞানী দিলারা চৌধুরী, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান প্রমুখ।
এ বছর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা প্রতিযোগিতায় প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগ ক্যাটাগরিতে বিজয়ী হয়েছেন প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। ২০১৪ সালের ৬ এপ্রিল ‘বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে মুক্তিযুদ্ধের সম্মাননা ক্রেস্টের স্বর্ণের ১২ আনাই মিছে!’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রথম আলোয় প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনটিতে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদান রাখায় বিদেশি বন্ধু ও সংগঠনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া সম্মাননা ক্রেস্টে ১৬ আনা (১ ভরি) পরিমাণ স্বর্ণ না দিয়ে মাত্র সোয়া তিন আনা স্বর্ণ দেওয়ার চাঞ্চল্যকর জালিয়াতি ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়।
ইলেকট্রনিক মিডিয়া বিভাগে বিজয়ী যমুনা টেলিভিশনের ইনভেস্টিগেশন সেল এর সম্পাদক মিজান মালিক এবং নিজস্ব প্রতিবেদক সাজ্জাদ পারভেজের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন ‘১০ দিনে বিবিএ পাস’-এ বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার নামে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের প্রতারণা ও দুর্নীতির তথ্য তুলে ধরা হয়। এই প্রতিবেদনে সাহসিকতার সঙ্গে ভিডিওচিত্র ধারণ করায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক কাজী মোহাম্মদ ইসমাইলকেও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
এ বছরই প্রথমবারের মতো প্রবর্তিত ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চ্যানেল টুয়েন্টি ফোরের নিজস্ব প্রতিবেদক জি এম মোস্তাফিজুল আলম বিজয়ী হন। ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের দুর্নীতি’ শিরোনামে বিজয়ী প্রতিবেদনটিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা দুর্নীতি ও অনিয়মের চিত্র তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনটির ভিডিও চিত্রগ্রহণ প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখায় একই টেলিভিশনের ভিডিও চিত্রগ্রাহক জাহাঙ্গীর আলমকেও বিশেষ সম্মাননা দেওয়া হয়।
বিচারকদের বিবেচনায় মানসম্মত প্রতিবেদন না পাওয়ায় এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগ ও ‘জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন’ বিষয়ে প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে কাউকেই পুরস্কার দেওয়া হয়নি। বিজয়ী সাংবাদিকদের সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ টাকার চেক এবং দুজন ভিডিও চিত্রগ্রাহকের প্রত্যেককে পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক দেওয়া হয়।
বাংলাদেশে দুর্নীতি-বিষয়ক অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় পেশাদারি উৎকর্ষ সাধনের লক্ষ্যে ১৯৯৯ সাল থেকে প্রতিবছর টিআইবি এ পুরস্কার দিয়ে আসছে। টিআইবি জানায়, এ বছর প্রিন্ট মিডিয়া জাতীয় বিভাগে ২৩ টি, প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক বিভাগে পাঁচটি এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় ২৭টি সহ তিনটি বিভাগে মোট ৫৫টি প্রতিবেদন জমা পড়ে।
এ বছর প্রতিযোগিতার বিচারক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন, এটিএন বাংলার প্রধান সম্পাদক মনজুরুল আহসান বুলবুল ও দৈনিক প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম।