খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫ : শেয়ারবাজারে ব্যাংকের অতিরিক্ত বিনিয়োগসীমা সমন্বয়ের বিকল্প পথ বাতলে দিলেন গভর্নর আতিউর রহমান। এ ক্ষেত্রে ব্যাংক মালিকদের প্রয়োজনে আগ্রাসী (অ্যাগ্রেসিভ) হওয়ারও পরামর্শ দেন তিনি। মতে, ব্যাংকের পরিশোধিত মূলধন (পেইড আপ ক্যাপিটাল) বাড়িয়ে বিনিয়োগ সমন্বয়ের সুযোগ রয়েছে।
আতিউর রহমান এ সময় বলেন, ‘২০১০ সালে পুঁজিবাজার যেভাবে উন্মাদের মতো এগোচ্ছিল, সে সময় বাংলাদেশ ব্যাংক কঠোর সিদ্ধান্ত না নিলে দেশের ৮-১০টি ব্যাংক পড়ে যেত। তাই ওই সময় কঠোর হয়ে পুঁজিবাজারকে যেমন বাঁচিয়েছি, ঠিক তেমনি মুদ্রাবাজারকে রক্ষা করেছি। এত দিন পর এসে এ কথা বলতে পারি।’
সেন্টার ফর নন-রেসিডেন্ট বাংলাদেশি (এনআরবি) আয়োজিত এক আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমান এসব কথা বলেন। রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল শনিবার ‘পুঁজিবাজার ও আবাসন খাতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এ আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। তাতে প্রধান অতিথি ছিলেন গভর্নর।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের চেয়ারম্যান কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গভর্নর বলেন, ‘এই ডিসেম্বর মাসে যদি ব্যাংকগুলোর পরিশোধিত মূলধন একটু বাড়িয়ে দেন, তাহলে বিনিয়োগসীমা যদি না-ও কমে, তারপরও অনুপাত (রেশিও) কমে যাবে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে এ বছর আপনারা একটু আগ্রাসী হন।’
গভর্নর আরও বলেন, ‘পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ সীমাসংক্রান্ত বিষয়টি যদি ব্যাংক কোম্পানি আইনের বিষয় না হয়ে আমার হাতে থাকত, তাহলে আমি এ মুহূর্তেই বলে দিতাম। কিন্তু এটি আইন। আইন বদলানোটা এত সহজ না। তাই আপনারা একটু চেষ্টা করেন মূলধন বাড়িয়ে বিনিয়োগের ক্ষেত্রটা একটু বাড়াতে। যদি শেষ মুহূর্তে কিছুতেই কাজ না হয়, তাহলে তখন বিকল্প পথ খুঁজে বের করা যাবে। তবে আমার মনে হয়, সেটির খুব বেশি দরকার হবে না। সবাই মিলে কাজ করলে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’
এ সময় গভর্নর জানান, ‘ব্যাংকের এক্সপোজার নিয়ে ভয়ের কিছু নেই। যাঁরা এ নিয়ে ভয় পাচ্ছেন, তাঁদের নির্ভয়ের জন্য বলতে পারি, পুঁজিবাজারে যেসব ব্যাংকের সীমার অতিরিক্ত বিনিয়োগ ছিল, সেসব ব্যাংক নিজেদের প্রয়োজনে তা ইতিমধ্যেই প্রায় সমন্বয় করে ফেলেছে। মাত্র কয়েকটি ব্যাংক এখনো সমন্বয় করে উঠতে পারেনি। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারাও সমন্বয় করে ফেলতে পারবে। আমরাও ব্যাংকগুলোর জন্য নতুন নতুন পথ বের করে দিচ্ছি।’
সেন্টার ফর এনআরবির সভাপতি এম এস সেকিল চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও বক্তব্য দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সদস্য পারভেজ ইকবাল, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান, আহসানুল ইসলাম, সাবেক সহসভাপতি আহমেদ রশীদ, মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নুরুল আমিন, ঢাকা চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হুমায়ুন রশীদ, আবাসন শিল্প মালিকদের সংগঠন রিহ্যাবের প্রথম সহসভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া প্রমুখ।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে শেয়ারবাজারে সূচক ও শেয়ারের দাম অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকায় একপর্যায়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগের লাগাম টেনে ধরা হয়। পরে বাজারে ধস নামলে বিনিয়োগকারীদের একটি অংশ বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে বিক্ষোভ করেছিল। এর বেশ কয়েক বছর পর গতকালের সভায় দীর্ঘ সময় তিনি শেয়ারবাজার নিয়ে কথা বলেন।
প্রবাসীদের জন্য বিশেষ সুবিধার ঘোষণা : অনুষ্ঠানে গভর্নর বলেন, এ দেশে আবাসন খাতের একটি বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে। যদিও এ খাতে নিয়ন্ত্রণের কিছু সমস্যা আছে। আবাসন খাতকে আরও ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। রিহ্যাবকে তার সুনাম বা ইমেজ বদলাতে হবে। সেটি করলেই তারা নিয়ন্ত্রকদের আনুকূল্য পাবে।
গভর্নর বলেন, ‘ভোগান্তি ছাড়া সময়মতো ক্রেতাকে ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেবেন—এমন নিশ্চয়তা পেলে ব্যাংকের মাধ্যমে এ খাতে প্রবাসীদের বিনিয়োগের একটি সুযোগ তৈরি করে দিতে চাই। এ ক্ষেত্রে নন রেসিডেন্ট টাকা অ্যাকাউন্ট বা নিটা হিসাব নামে প্রবাসীদের যে ব্যাংক হিসাব রয়েছে, তার মাধ্যমে যাতে প্রবাসীরা ফ্ল্যাট কিনতে পারেন, সেই সুযোগ দেওয়া হবে। নিটা হিসাব থেকে ২০ হাজার টাকার বেশি অর্থ উত্তোলন করা যায় না। সেটি তুলে দেওয়া হবে। খুব শিগগির এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। বিদেশে বসে যাতে প্রবাসীরা এ দেশে ব্যাংক হিসাব খুলতে পারেন, সে জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করছে।’ এ ছাড়া প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য অবসরকালীন বা পেনশন সুবিধা চালুর ইচ্ছার কথাও অনুষ্ঠানে জানান গভর্নর।
রিহ্যাবের লিয়াকত আলী ভূঁইয়া আবাসন খাতের জন্য স্বল্প সুদে ঋণসহায়তার দাবি জানালে গভর্নর এ সুবিধা দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানান।
অনুষ্ঠানে প্রবাসী বাংলাদেশি আল মামুন সরকার অভিযোগ করেন, এ দেশে আবাসন খাতে বিনিয়োগ করে প্রবাসীরা সবচেয়ে বেশি প্রতারিত হয়েছেন। তাই প্রবাসীদের বিনিয়োগে আহ্বান জানানোর আগে তাঁদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
সভাপতির বক্তব্যে সেকিল চৌধুরী বলেন, অনেক প্রবাসীর ব্যাংক হিসাব থেকে প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়া হয়। সরকারের বরাদ্দ করা জমি কিনেও অনেক প্রবাসী প্রতারিত হচ্ছেন। এমন চলতে থাকলে প্রবাসীরা এ দেশে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন না।