খোলা বাজার২৪, রবিবার, ৬ ডিসেম্বর ২০১৫ : আসন্ন পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে মেয়র পদে বিএনপি, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও উভয় দলের বিদ্রোহীসহ কমপক্ষে ৫৯ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। কাউন্সিলর পদেও বাতিল হয়েছে অনেকের প্রার্থীতা।
সারাদেশে মনোনয়ন বাতিলের তালিকায় বড়ো দু্টি দলের মধ্যে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা বেশি। আর বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে মনোনয়ন বেশি বাতিল হয়েছে ক্ষমতাসীন দলের। তবে মনোনয়নপত্র বাতিলের বিরুদ্ধে এসব প্রার্থী জেলা প্রশাসকের (আপিল কর্তৃপক্ষ) কাছে আবেদন করতে পারবেন।
রোববার শেষ দিনের বাছাইকালে বিকেল ৫টা পর্যন্ত আওয়ামী লীগের-৩ বিএনপির-৯ জাতীয় পার্টির-২ খেলাফত মজলিসের-২ জাসদের-১ ওয়ার্কাস পার্টির-১ স্বতন্ত্র ১৪ প্রার্থীসহ প্রায় ৩২ জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়।
যাচাই-বাছাই শেষে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকতারা বিভিন্ন অভিযোগে তাদের মনোনয়ন বাতিল করেন। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কাউন্সিলর প্রার্থীও রয়েছেন। সব মিলিয়ে গত দুদিনে ৮০ জনেরও বেশি প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
বরিশাল জেলার ছয়টি পৌরসভার মধ্যে উজিরপুরে ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মেয়র প্রার্থী মনিরুজ্জামানসহ ৫টি পৌরসভায় ১১জন কাউন্সিলর ও তিনজন সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
নরসিংদী পৌরসভার স্বতন্ত্র প্রার্থী জামায়াতে ইসলামী নরসিংদী পৌর শাখার আমির জহিরুল ইসলাম মানিক ও ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী আমিনুল ইসলামসহ সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থী মুন্নি আক্তারের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
পঞ্চগড় পৌরসভার স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী আমির মাওলানা আব্দুল খালেকসহ কাউন্সিলর পদের জাহিদুল ইসলাম, এটিএম হাসানুজ্জামান, নুর আলম, ওসমান গনি, রফিকুল ইসলাম, আব্দুল মালেক, আবু তালেবসহ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর রেহানা বেগম রেখা, খাদিজা হক মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়।
সিলেটের তিন পৌরসভায় বিএনপি ও জাতীয় পার্টির প্রার্থীসহ মোট ৬ জন মেয়র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে। গোলাপগঞ্জ পৌরসভার ৭ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে বিএনপি সমর্থিত গোলাম কিবরিয়া চৌধুরী শাহীন, জাতীয় পার্টি সমর্থিত সুহেদ আহমদ ও খেলাফত মজলিস সমর্থিত আমিনুল ইসলামের প্রার্থীতা বাতিল করেছে নির্বাচন কর্মকর্তা।
কানাইঘাট পৌরসভায় ১০ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সিরাজুল ইসলাম ও খেলাফত মজলিস সমর্থিত মাওলানা ইসলাম উদ্দিন এবং জকিগঞ্জ পৌরসভায় ৬ মেয়র প্রার্থীর মধ্যে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ফারুক আহমদের মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে।
এর আগে শনিবার মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের প্রথম দিনে কয়েকটি পৌরসভায় মেয়র পদে বিএনপি, জাতীয় পার্টি মনোনিত ও আওয়ামী লীগ-বিএনপির বিদ্রোহীসহ কমপক্ষে ২৭ জন প্রার্থীর মনোনয়ন বাতিল করা হয়। এছাড়া কাউন্সির পদেও বাতিল হয়েছে অনেকের।
মানিকগঞ্জ জেলার সিংগাইর পৌরসভার বর্তমান মেয়র অ্যাডভোকেট খোরশেদ আলম ভূঁইয়া জয়ের ছোট ভাই মোস্তাক আহম্মেদ ভূঁইয়া ভোটার তালিকা ত্রুটিপূর্ণের অভিযোগ এনে গত ২১ জুন হাইকোর্টে রিট করেন। বুধবার বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি একেএম শহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ ছয় মাসের জন্য এ পৌরসভার নির্বাচন স্থগিত করেন।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন ৩৩ জন কাউন্সিলর প্রার্থী। এদের মধ্যে ২৫ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর এবং আটজন সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর। অবশ্য এ অবস্থার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। তাদের অভিযোগ, সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে বাধা দেয়া হয়েছে।
আর মনোনয়নপত্র বৈধ হওয়ার পর বিভিন্ন পৌরসভায় বের হয় প্রার্থীর সমর্থকদের আনন্দ মিছিল।
এবারের পৌর নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন ১৩ হাজার ৬৮৯ জন প্রার্থী। এদের মধ্যে মেয়র পদে ১ হাজার ২২৩, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২ হাজার ৬৬৮ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন ৯ হাজার ৭৯৮ জন।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ১৩ ডিসেম্বর। এর পরদিনই প্রার্থীদের দেয়া হবে প্রতীক। তবে তার আগেই ৯ ডিসেম্বর থেকে চলবে প্রচার-প্রচারণা। ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।