Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

35খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫: এ নিয়ে তিনবার হলো! আগের দুইবার হারিয়েছিলেন, সবশেষ গতকাল তিনি অধিনায়কত্ব নিজে থেকে ছেড়েছেন বলেই সরকারি ভাষ্য। এটি অবশ্য বিশ্বাসযোগ্য, কারণ অধিনায়কত্ব থেকে এর আগেও একবার পদত্যাগ করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম। তাই প্রশ্নটা জোরেশোরেই উঠছে, অধিনায়কত্ব কী প্রতিক্রিয়া ঘটায় মুশফিকুর রহিমের মনে?

টেকনিক্যালি তিনি দলের সবচেয়ে সুগঠিত ব্যাটসম্যান। ক্রিকেটটা বোঝেন ভালো। আর অধিনায়কদের বেলায় প্রযোজ্য ‘স্টেটসম্যানশিপ’ আছে তাঁর। সততার কথা বলবেন? মুশফিক সামনের সারিতেই বসেন। এ যুগের ‘অর্জুন’ মাশরাফি বিন মর্তুজার বয়ানেই শুনুন, ‘ড্রেসিংরুম সংস্কৃতির পরিবর্তন নিয়ে অনেকে অনেক প্রশংসা করেন। এ পরিবর্তনটা এনেছে কিন্তু মুশফিক।’

জেমি সিডন্সের রেখে যাওয়া ‘অসম’ ড্রেসিংরুমে সমতা আনার কাজটা শুরু করেছিলেন মুশফিকুর রহিমই। নিজের ‘ওয়ার্কএথিক’ সামনে রেখে দলের সবার কাছ থেকে সেটা আদায় করে নিতেন তিনি। তা ছাড়া দলের বাকিদের কথা ভুলে নিজে বাড়তি কোনো সুবিধা নিয়েছেন মুশফিক—এমন অভিযোগ তাঁর শত্রুও করেন না। সেই তিনি কেন বারবার অধিনায়কত্ব ছাড়েন কিংবা হারান?

প্রথমবার মুশফিকের অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছিল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ ক্লাব শেখ জামাল ধানমণ্ডি। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক পদ থেকে তাঁকে সরিয়েছে বিসিবি। গতকাল বরিশাল বুলসের বিপক্ষে ম্যাচের আগে নাকি নিজে থেকেই অধিনায়কত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন মুশফিক। টসের সময় দলটির নতুন অধিনায়ক শহীদ আফ্রিদি জানিয়েছেন, ‘স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছিল না দেখে মুশফিক নিজেই অধিনায়কত্ব করতে চায়নি।’ ম্যাচের পর সুপারস্টারস কোচ সরোয়ার ইমরানের ব্যাখ্যাও একই, ‘মুশফিক নিজে থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে। আমি এমনটাই শুনেছি।’

হতে পারে টানা হারতে হারতে অবসাদে আক্রান্ত মুশফিক দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে নিজেকে কিছুটা ভারমুক্ত করতে চেয়েছেন। তা ছাড়া অভিজ্ঞ আফ্রিদি যেহেতু পাকিস্তানের টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক, সেহেতু শ্রেয়তর বিকল্প পেয়ে মুশফিককে ‘অব্যাহতি’ দিতে দেরি করেনি ফ্র্যাঞ্চাইজিও। সবচেয়ে বড় কথা, ক্লাব বা ফ্র্যাঞ্চাইজি কাকে অধিনায়ক রাখবে কী রাখবে না, সেটি পুরোপুরি তাদের এখতিয়ার। জাতীয় দলের অধিনায়ক নিয়োগ কিংবা বরখাস্ত করাটা যেমন বিসিবির অধিকার। কিন্তু মুশফিকের ক্যারিয়ারে বারবার একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়াতে সিলেট সুপারস্টারসের নেতৃত্ব পরিবর্তনটায় বিশেষত্ব রয়েছে। ২০১৩ সালে শেখ জামালের অধিনায়কত্ব তিনি হারিয়েছিলেন ক্লাব কর্তৃপক্ষের কর্তৃত্ব স্বীকার করেননি—এ অভিযোগে।

একই বছর জিম্বাবুয়ে সফরের শেষভাগে নিজে থেকেই আকস্মিক জাতীয় দলের অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন মুশফিক। সঠিক কারণটি কোনো পক্ষই স্বীকার করেনি। তবে গুঞ্জন আছে, দলের ‘হেভিওয়েট’দের আচরণে রুষ্ট হয়েই নাকি অধিনায়কত্ব আর করবেন না বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সিলেট সুপারস্টারসের সঙ্গে সেরকম কোনো ঝামেলার ইঙ্গিত অন্তত দল গঠনের দিন ছিল না। উল্টো, ‘মুশফিকই আমাদের প্রথম পছন্দ’ বলে সুসম্পর্কের আবহ ছড়িয়েছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিক আজিমুল ইসলাম। কিন্তু দলের ব্যর্থতা এবং সবশেষ দেনা-পাওনা নিয়ে ফ্র্যাঞ্চাইজি বনাম অধিনায়কের টানাপড়েনে সম্পর্কের ব্যারোমিটার আর স্থির নেই বলেই খবর। কাকতালীয়ভাবে মুশফিকুর রহিমের অধিনায়কত্ব যাওয়া কিংবা ছেড়ে দেওয়ার সবগুলো কারণই প্রায় এক সুতোয় গাঁথা।

কখনো ম্যানেজমেন্টের কখনো-বা টিমমেটদের আচরণ প্রচণ্ড পীড়া দেয় তাঁকে। এটা বোঝা যায় যে, সমস্যার সঙ্গে সমঝোতা না করে সমাধান খোঁজেন মুশফিক। কিন্তু ব্যর্থ হন সিংহভাগ সময়, অধিনায়কত্বের মুকুট ফেলে সাধারণে মিশে যান তিনি। কখনো নিয়োগকর্তার ইচ্ছায়, কখনো-বা স্বেচ্ছায়। এই আসা-যাওয়ায় দল কিংবা খেলোয়াড় মুশফিক লাভবান হয়েছেন বটে, তবে অধিনায়ক মুশফিককে ঘিরে সংশয় ঘনীভূত হয়েছে ক্রমাগত। এমনিতেই মাঠে তাঁর কৌশলগত ভূমিকা নিয়ে জোরালো পক্ষ-বিপক্ষ রয়েছে। ম্যাচ পরিস্থিতির সঙ্গে নিজের চিন্তার গতিপথ বদলান না মুশফিক—এ যুক্তিকে পুঁজি করে সোচ্চার সমালোচকরা।

গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরের পর মুশফিকের কাছ থেকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি অধিনায়কত্ব নিয়ে নেওয়ার সময় এ বিষয়টি উঠেছিল বিসিবির আলোচনার টেবিলে। একই সঙ্গে আরো দুটি বিষয় ভূমিকা রেখেছিল ওই সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে। প্রথমত, জিম্বাবুয়ে সফরে তাঁর আচমকা অধিনায়কত্ব থেকে পদত্যাগের ঘোষণা ভালোভাবে নেয়নি বোর্ড। দ্বিতীয়ত, অধিনায়কত্বের চাপ নিতে পারেন না মুশফিক। বরং অধিনায়কত্বের ভারমুক্ত মুশফিকুর রহিমের কাছ থেকেই সেরাটা পায় দল, বিশ্বাস করে বিসিবি।

গত এক বছরে ওয়ানডেতে জাতীয় দলের নৈপুণ্য এ মতবাদকে আরো দৃঢ় ভিত্তি দিয়েছে। কাল সিলেট সুপারস্টারসের জয়ের মুখ দেখার দিনটি কি সে মতবাদেরই সবশেষ সাক্ষ্য-প্রমাণ হয়ে থাকল? সেটা সময়ই বলবে। তবে কার্যকারণে ‘সাধারণ’ মুশফিকই দলের জন্য ‘অসাধারণ’। শচীন টেন্ডুলকারও কখনোই ‘গ্রেট ক্যাপ্টেন’ হতে পারেননি। তবু তিনি আরাধ্য। মুশফিক অনুরক্তদের তাই হতাশ হওয়ার কিছু নেই; অমরত্বের দরজা খোলা রয়েছে তাদের প্রিয় তারকার সামনেও।