খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫: জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান বলেছেন, মানুষকে যদি আমরা স্বাধীনতার সুযোগ করে দিতে না পারি তবে আমাদের অনেক অর্জন ম্লান হয়ে যাবে।
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর সিরডাপের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আয়োজিত ‘কনসালটেশন অন সেকেন্ড সাইকেল ইউপিআর রিকমেন্ডেশনস: স্ট্যাটাস অব ইমপ্লিমেন্টেশন’ শীর্ষক দুই দিনের অনুষ্ঠানের সমাপনী অধিবেশনে সভাপতির বক্তব্যে মিজানুর রহমান এই কথা বলেন।
মিজানুর রহমান বলেন, মানুষের মনে অনেক ব্যথা, বেদনা, ক্ষোভ, বঞ্চনার কথা রয়েছে। কোনো কিছু লুকিয়ে রাখা ঠিক নয়। মন খুলে কথা বলতে পারলে সমস্যা চিহ্নিত করা যায়। সবাই মিলে ঐক্যবদ্ধভাবে চেষ্টা করার মধ্যে দিয়ে অনেক কঠিন সমস্যারও উত্তরণ ঘটানো যায়।
মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের অনেক অর্জন আছে। আমরা বছরের প্রথম দিনে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর হাতে বিনা মূল্যে পাঠ্যবই তুলে দিয়ে বিশ্বে অনন্য নজির সৃষ্টি করেছি। বিধবাদের, বয়স্কদের, প্রতিবন্ধীদের, মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা দেওয়া হচ্ছে। ইউরোপের দেশগুলো যেমন করে শরণার্থীদের সামনে তাদের সীমান্ত বন্ধ করে দিয়েছে, আমরা রোহিঙ্গাদের সামনে তেমন করে দরজা বন্ধ করিনি। তিনি বলেন, এসব অনেক অর্জন ম্লান হয়ে যায় যখন আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানোর প্রতিশ্র“তি দিয়েও তা বন্ধ করতে পারি না। এ ছাড়া নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকারের ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা রয়েছে। দুই বছর আগে এ ক্ষেত্রে আমরা যতটা অগ্রগতি অর্জনের কথা ভেবেছিলাম তা অর্জন করতে পারিনি। মানবাধিকারের ক্ষেত্রে আমরা যেন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে মাথা উঁচু করে কথা বলতে পারি সে ব্যাপারে ইউপিআর সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।
জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে সর্বজনীন পরীক্ষণ পর্যালোচনা (ইউপিআর) হয় প্রতি চার বছর পরপর। এতে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন প্রতিটি দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে। ২০০৯ সালে প্রথম এবং ২০১৩ দ্বিতীয় পর্যালোচনা অনুষ্ঠিত হয়। দ্বিতীয় পর্যালোচনায় বাংলাদেশে বাংলাদেশ যে প্রতিবেদন দিয়েছিল, তার ওপর বিভিন্ন দেশ ১৯৬টি সুপারিশ করেছিল। ওই সুপারিশগুলোর বাস্তবায়নের খতিয়ান জেনেভায় ২০১৭ সালের পর্যালোচনায় তুলে ধরতে হবে। সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন পরিস্থিতি কেমন তা তুলে ধরেতেই মানবাধিকার কমিশন মধ্যবর্তী পর্যায়ে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি নারী ও শিশু বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, দেশের জনসংখ্যার একটি প্রধান অংশ শিশু ও নারী। তাদের অধিকার সুরক্ষা করা মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার একটি বড় অর্জন। এমডিজি ও এসডিজিতে নারীর অধিকার ও ক্ষমতায়নের বিষয়টি সরকার বিশেষ গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দিয়েছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে নারী ও শিশুদের জন্য আলাদা করে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। অনেক পুরোনো আইন সংশোধন করে নতুন আইন করা হচ্ছে। মেয়েদের বিয়ের বয়স প্রসঙ্গে তিনি বলেন ১৬ বছর নয়, বিয়ের বয়স ১৮ বছরই করা হবে। এ নিয়ে যে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে তা নিরসন করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য কাজী রিয়াজুল হক, সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ফশ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত ইউয়ান ফ্রিসেল ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক (জাতিসংঘ) মুস্তাফিজুর রহমান।
এ আগে আজ ‘শিশু সুরক্ষা’, ‘ধর্মীয়, জাতিগত সংখ্যালঘুদের অধিকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম’, ‘নারীর অধিকার : সিডও সনদ ও বাংলাদেশ’ এবং ‘ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর অধিকার: প্রতিবন্ধী, দলিত, শরণার্থী, তৃতীয় লিঙ্গ এবং অন্যান্য সংখ্যালঘু’ বিষয়ে পৃথক চারটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।