খোলা বাজার২৪, সোমবার, ৭ ডিসেম্বর ২০১৫: দেশে বিরাজমান অস্থিরতার কারণে রাজধানীর নি¤œ আয়ের খেটে খাওয়া মানুষের আয় যথেষ্ট পরিমাণে কমে গেছে। ফলে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাজধানীতে বাস করা তাদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। অথচ এমনটি হওয়ার কথা ছিল না। দেশের অস্থিরতা সৃষ্টির পেছনে তাদের সাম্যাতম ভূমিকা নেই। দেশের রাজনৈতিক পালাবদলেও তা নেই। সরকার পরিবর্তনেও তাদের কিছু যায় আসে না। অথচ দেশের অস্থিরতায় তারাই সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। এই পরিস্থিতি থেকে তারা কবে নাগাদ মুক্তি পাবে তার কুল-কিনারাও তারা খুঁজে পাচ্ছে না। সরেজমিনে ঘুরে নি¤œ আয়ের সাধারণ মানুষের সাথে কথা বলে এসব চিত্র ফুটে উঠেছে।
এদিকে শুধু যে অস্থিরতার কারণেই আয় কমে গেছে তা নয়, আগামী ৩০ ডিসেম্বর পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে অসংখ্য মানুষ রাজধানী ছাড়ার কারণেও নি¤œ আয়ের মানুষের আয় অনেকাংশে কমে গেছে বলে মনে করেন অনেকেই। গত এক বছর আগেও ফুটপাতের চায়ের দোকানিদের প্রতিদিন ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকার বেচাকেনা হতো। অথচ এখন তাদের প্রতিদিন বিকিকিনি হয় ১ হাজার টাকা থেকে সর্বো”চ দেড় হাজার টাকা। শুধু যে চায়ের দোকানিদেরই বেচাকেনা কমে গেছে তা নয়, বেচাকেনা কমেছে ফুটপাতের জুতা, কাপড়, মুচি ও ব্যাগ বিক্রেতাসহ অসংখ্য নি¤œ আয়ের মানুষের।
এসব নি¤œ আয়ের একাধিক মানুষ ভারাক্রান্ত হৃদয়ে আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, আগের তুলনায় পরিশ্রম অনেক বেশি করি আয় যাতে বেশি হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, অতিরিক্ত পরিশ্রম করেও কোন লাভ হচ্ছে না। আগে মানুষ খুব সহজেই ২০/৩০ টাকা খরচ করতো। কিন্তু এখন করতে চায় না। কারণ মানুষের পকেটে টাকা নেই। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আমাদের পাশাপাশি অন্যান্য পেশার মানুষেরও আয় কমে গেছে।
তারা আরও বলেন, এমন একটা সময় পার করছি যখন দেশের সর্বক্ষেত্রে শুধুই অস্থিরতা। দু-বেলা ডাল-ভাত খেয়ে যে পরিবার-পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকবো তার কোন নিশ্চয়তা পাচ্ছি না। দেশ এভাবে চলতে থাকলে আমরা কেউই আগামী দিনগুলোতে ভালো থাকবো না।
পুরানা পল্টন মোড়ে জুতা পলিশ করেন স্বপন(৪০)। তিনি আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, এক বছর আগেও প্রতিদিন ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা আয় করতাম। অথচ এখন আয় করি ২শ’ থেকে আড়াইশ টাকা। এই টাকা দিয়ে ঘরভাড়া, পরিবারের খরচ মেটাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
মতিঝিলের ফুটপাতের চায়ের দোকানদার মোঃ জসিম উদ্দিন আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, আগে মানুষ নির্ভয়ে রাত বারোটা পর্যন্ত চায়ের দোকানে আসতো। কিন্তু হোসনি দালানে হামলার পর থেকে মানুষ রাতের বেলায় খুব একটা দোকানে আসে না। যে কারণে বেচাকেনাও কম হচ্ছে। আগে সকাল সাতটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কাজ করতাম। প্রতিদিন বেচাকেনা হতো ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। অথচ এখন ভোড় ৫টা থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত দোকান খুলে রাখলেও তার অর্ধেকেও বেচাকেনা হয় না। অধিক পরিশ্রম করেও কোন লাভ হচ্ছে না।
উত্তরার ফুটপাতের ব্যাগ বিক্রেতা মোঃ নাসির উদ্দিন আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, দেশে একনায়কতন্ত্র চলছে। আর এক নায়কতন্ত্রে আমরা কেন, কেউই ভালো থাকবে না। বর্তমানে ব্যবসা নেই বললেই চলে। গত বছরেও এই সময় প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকার ব্যাগ, ছাতা বিক্রি করতাম। অথচ এখন বিক্রি করি সর্বো”চ ১ হাজার টাকা।
ফার্মগেটের ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা মোঃ আবুল হাশেম আমাদের সময় ডটকমকে বলেন, দু-বেলা ডালভাত খেয়ে বেঁচে থাকবো তারও কোন উপায় খুঁজে পাচ্ছি না। ৬ মাস আগেও প্রতিদিন ৩/৪ হাজার টাকার কাপড় বিক্রি করতাম। আর এখন ১ হাজার টাকারই কাপড় বিক্রি হয় না। ছেলেমেয়ের পড়াশুনার খরচ কিভাবে চালাবো সেই চিন্তায় করছি।
তিনি আরও বলেন, দেশের এই পরিস্থিতিতে কেউই ঠিকভাবে কাজ কর্ম করতে পাচ্ছে না। যার কারণে টাকাপয়সা মানুষের পকেটে নেই। এখন প্রয়োজনেও মানুষ খরচ করতে চায় না।