খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫: প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর দাবিতে ‘না’ বলে দিলেও এক সপ্তাহের মাথায় নিজেদের প্রয়োজনে নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধি সংশোধন করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন।
আইন প্রণয়নে সরকারের বিলম্বের কারণে বিধি করতে এবার বেশ তাড়াহুড়ো হয়েছে নির্বাচন কমিশনকে। ফলে মাঠ পর্যায়ে কাজ করতে গিয়ে বেশ কিছু ‘ছোটোখাটোদঅসঙ্গতি ধরা পড়েছে, যা শুধরাতে ভোটের মাত্র তিন সপ্তাহ আগে এই সংশোধনী।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, নির্বাচন বিঘিœত বা আইনি জটিলতা তৈরি হওয়ার মতো কোনো সমস্যা বিধিতে তারা পাননি। তবে কিছু ফরম ও প্রতীক সংক্রান্ত ‘করণিক ত্রুটি’ পাওয়া গেছে যা ভোটের আগে দূর করতে হবে।
সংশোধনীগুলো কমিশন সভায় উপস্থাপন করার জন্য ইতোমধ্যে খসড়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
“ইসির অনুমোদন পেলে শিগগিরই ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে, যাতে প্রতীক বরাদ্দের আগে (১৩ ডিসেম্বর) কোনো প্রশ্ন উঠতে না পারে। সেজন্য এসব সংশোধন গেজেট আকারেও জারি হতে পারে,” বলেন একজন কর্মকর্তা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ইসি কার্যালয় থেকে বের হওয়ার সময় সংশোধনীর বিষয়ে সাংবাদিকরা তার কাছে জানতে চান। কিন্তু এ বিষয়ে সব প্রশ্নই তিনি এড়িয়ে যান তিনি।
এ বিষয়ে ইসির যুগ্মসচিব (আইন শাখা) মো. শাহজাহান বলেন, “আমি এখনো বিস্তারিত সংশোধনী সম্পর্কে জানি না। ইসি অনুমোদন করলে আমাদের মাধ্যমে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে হবে। এখন প্রয়োজন না হলে ভোটের পরেও সংশোধন করা সম্ভব হবে বিধিতে।”
আর নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “একটু সমস্যা আছে। তবে এই মুহূর্তে কিছু বলতে পারছি না। বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে।”
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা নির্বাচন বিধির ছয়টি বিষয় সংশোধনের খসড়া প্রস্তুত করেছেন।
এগুলো হলো- প্রতীক বরাদ্দ সংক্রান্ত চারটি তফসিল সংশোধন, স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী সংক্রান্ত ১২ ধারার একটি উপধারা সংশোধন এবং নির্বাচনের কাজে ব্যবহৃত ছয় ধরনের ফরমে সংশোধনী।
বিদ্যমান বিধির ১৯ (১) (ক) উপধারায় মেয়র পদে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য দলীয় প্রতীক বরাদ্দের কথা বলা হয়েছে। এজন্য তফসিল-২ থেকে প্রতীক বরাদ্দের জন্য বলা হয়েছে ওই উপধারায়।
তফসিল-২ এর ১৯ (১) (ক) উপধারাটি উল্লেখ করা হয়নি। ফলে দলীয় প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে জটিলতার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে প্রস্তাবিত সংশোধনীতে বলা হয়েছে, ‘তফসিল-২ এর ‘বিধি ১৯ (১) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি ও বন্ধনী এর পরিবর্তে ‘বিধি (১৯) (১) (ক) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি, অক্ষর ও বন্ধনী প্রতিস্থাপিত হবে।
একইভাবে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের জন্য প্রতীক তালিকা তফসিল-৩ এর ক্ষেত্রে বিধির ১৯ (২) (খ) ধারা দ্রষ্টব্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। অথচ ১৯ (২) (খ) ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই উল্লেখ নেই।
এটি ১৯ (১) (খ) ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রতীক দেয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে সংশোধনীতে বলা হয়েছে- ‘তফসিল-৩ এর পর বিধি ১৯(২) (ক) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি ও বন্ধনী এর পরিবর্তে ‘বিধি (১৯)(১)(খ) দ্রষ্টব্য’ শব্দগুলি, সংখ্যাগুলি, অক্ষর ও বন্ধনী প্রতিস্থাপিত হবে।
একইভাবে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়ার বিধানেও ত্রুটি রয়েছে।
নির্বাচন কর্মকর্তারা বলছেন, আগামী ১৪ ডিসেম্বরের আগে এসব সংশোধনী আনা না হলে প্রতীক বরাদ্দের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়তে পারেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে কয়েকজন রিটার্নিং ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে মৌখিকভাবে এর ব্যাখা চেয়েছেন।
এছাড়া বিধি ১২ ধারায় স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রেও সংশোধনী আনা হচ্ছে।
এতে বলা হয়েছে, ইতোপূর্বে পৌরসভায় নির্বাচিত মেয়র ও চেয়ারম্যানরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ১০০ জন ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা দিতে হবে না। আগে এ ধারায় শুধু মেয়রদের বিষয়টি উল্লেখ ছিল।
প্রস্তাবে মনোনয়নপত্র, নির্বাচনে এজেন্ট নিয়োগসহ নির্বাচনের বিভিন্ন পর্যায়ে কাজে ব্যবহৃত ফরম ক, গ, জ, জ-১, ঢ ও ন নম্বর ফরমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করেছে কমিশন। অবশ্য এই সংশোধনী আনা হচ্ছে মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় শেষ হওয়ার পর।
বিএনপি ভোট পেছাতে আইন সংশোধন এবং আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি সংসদ সদস্যদের প্রচারে অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল ইসির কাছে।
গত ৩০ নভেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ তাদের জানিয়ে দেন, তফসিল ঘোষণার পর এ পর্যায়ে এসে কোনো সংশোধনী আনার সুযোগ নেই।