Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫: অরক্ষিত ঢাকনাবিহীন ম্যানহোলে প্রাণ গেল একের পর এক শিশুর। গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর শাহজাহানপুরে ওয়াসার পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে জিহাদ নামে এক শিশুর মৃত্যুর এক বছরের মাথায় একই ধরনের দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাল নীরব। এসব মৃত্যুর দায় কে নিবে। এমন প্রশ্ন অভিভাবকদের। ম্যানহোল ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা শ্যামপুর শিল্প মালিক মালিক সমিতির বিচার না-হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন নিহত শিশু নিরবের স্বজন ও এলাকাবাসী। তাদের অভিযোগ, শিশু সিহাবের মৃত্যুর বিচার হলে শিশু নিরব ইসমাইলের মৃত্যু হতো না।

রাজধানীর মগবাজারের নয়াটোলা এলাকার পার্ক সংলগ্ন গ্রিনওয়ে গলিতে ২০১৪ সালের ৫ মে বিকালে ম্যানহোলে পড়ে অনন্যা নামে সাড়ে ৫ বছরের এক শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। পুলিশ তার লাশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

তিন বছর আগে কদমতলীর বরইতলার স্যুয়ারেজ লাইনের ম্যানহোলে পড়ে নিহত হয়েছিল পাঁচ বছরের শিশু সিহাব। তার লাশ মিলেছিল বুড়িগঙ্গায়। সিহাবের মৃত্যুর তিনবছর পর মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) একই স্যুয়ারেজের ম্যানহোলে পড়ে নিহত হলো নীরব নামের আরেকটি শিশু। তার লাশও মিলেছে বুড়িগঙ্গায়। এছাড়া, গত বছরের ২৬ ডিসেম্বর রাজধানীর শাহজাহানপুরের রেল কলোনিতে ওয়াসার একটি পরিত্যক্ত পাইপে পড়ে জিহাদ নামের একটি শিশুও মারা যায়। এলাকাবাসি এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করলেও তারা জানেন না, এর দায়ভার কার। কার কাছে পাবেন এর প্রতিকার।
এমন প্রশ্ন্ সবাই করছে।

২০১২ সালে আমাদের একমাত্র সন্তান সিহাব (৫) ম্যানহোলের ভেতরে পড়ে যায়। অনেক খোঁজাখুজির পরও তাকে পাইনি। পরে বুড়িগঙ্গায় তার লাশ পাওয়া যায়।

কান্না জড়িত কণ্ঠে শিরিন বেগম বলেন, ওই ঘটনার পরও এই এলাকার ম্যানহোলে কোনও ঢাকনা থাকে না। ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করার পর প্রায়ই ম্যানহোল খোলা থাকে।

সিহাবের মৃত্যুর তিনবছর পর ৭ ডিসেম্বর (মঙ্গলবার) একই স্যুয়ারেজ লাইনের ম্যানহোলে পড়ে নিহত হলো শিশু সাইফুল ইসলাম নীরব (৬)। তার লাশও মিলল বুড়িগঙ্গায়। শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের সব বর্জ্য বড়ইতলার এই স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে যায়। এই স্যুয়ারেজের একপাশ দিয়ে ছোট একটি খাল রয়েছে। খালের একপাশে শ্যামপুর মাঠ অন্য পাশে নিহত নীরব তার বাবা মায়ের সঙ্গে সবুজ মিয়ার বাড়িতে ভাড়া থাকত। তার বাবার নাম রেজাউল ইসলাম, মা নাজমা বেগম। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান ছিল নীরব।

স্যুয়ারেজ লাইনের প্রতিটি ম্যানহোল খুলে ভেতরে প্রবেশ করেন ফায়ার সার্ভিস। এরপর রাত ৮ টার দিকে তারা স্যুয়ারেজ লাইনের শেষ মাথা বুড়িগঙ্গায় যায়। সেখাস গিয়ে রাত ৮টা ২৫ মিনিটে আবর্জনা মোড়ানো অবস্থায় নীরবকে তারা উদ্ধার করে দ্রুত ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। ঢামেক হাসপাতালের সহকারী পরিচালক খাজা মো. আব্দুল গফুর রাত ৯ টা ৪১ মিনিটে বলেন, হাসপাতালে আনার তিন থেকে চার ঘণ্টা আগেই নীরবের মৃত্যু হয়েছে। তার পানিতে ডুবেই মৃত্যু হয়েছে বলেও জানান তিনি। নিহত নীরবের বাবা প্রাণ-আরএফএল কোম্পানিতে নারায়ণগঞ্জের ভুলতা গাউছিয়ায় কর্মরত। তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর।

এদিকে, অভিযোগ রয়েছে যে ম্যানহোলটিতে পড়ে নীরবের মৃত্যু হয়েছে, সেটি দীর্ঘদিন ধরে খোলা রয়েছে। শ্যামপুর শিল্পাঞ্চলের সব বর্জ্য ওই স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে বের হয়ে বুড়িগঙ্গায় পড়ে। এ বিষয়ে স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান শফিকুর রহমান সাজু বলেন, বিষয়টি আমরা শিল্প কারখানার মালিক সমিতিকে কয়েক দফা বলেছি। কিন্তু তারা বিষয়টি পাত্তা দেননি। তারা বিষয়টি আমলে নিলে এই শিশুটির এভাবে মৃত্যু হতো না।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য (এমপি) সৈয়দ ‍আবু হোসেন বাবলা। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি অতি মর্মান্তিক ও দুঃখজনক। ম্যানহোলে ঢাকনা যেন আর খোলা না থাকে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। এ ঘটনায় কেউ দায়িত্বে অবহেলা করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ সময় নিহত শিশু নীরবের পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা অনুদান দেন তিনি। একই সঙ্গে নীরবের পরিবারের সদস্যদের ঢাকা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও ২০ হাজার টাকা অনুদান দেওয়া হয়।
ডিএমপির ওয়ারী জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার নুরুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, এই ঘটনায় নিহতের পরিবার কোনও অভিযোগ দিলে তা গ্রহণ করা হবে। তারা অভিযোগ না দিলে পুলিশ একটি অভিযোগ দায়ের করবে। এর সুষ্ঠু তদন্ত করার জন্য। এখানে কারও দায়িত্বে অবহেলা ছিল কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।