Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

67খোলা বাজার২৪, বুধবার, ৯ ডিসেম্বর ২০১৫: পাঁচশ বছর আগে লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চির আঁকা পোট্রেট মোনালিসা সম্ভবত বিশ্বের সবেচেয়ে আলোচিত চিত্রকর্ম।

ফ্রান্সের ল্যুভ মিউজিয়ামে এখনও প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ শুধু মোনালিসার রহস্যময় হাসি দেখতে আসেন। কয়েক শ বছর ধরে মানুষ কম-বেশি বিশ্বাস করে আসছে দ্য ভিঞ্চির মোনালিসা ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যবসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট।খবর-বিবিসি’র।

তবে ফ্রান্সের একজন গবেষক গত দশ বছর ধরে গবেষণার পর বলছেন, প্রোট্রেটের রহস্যময়ী এই নারী অন্য কেউ ছিলেন। আর এই তত্ত্ব নিয়ে শিল্পী মহলে শুরু হয়েছে তোলপাড়।
দ্য ভিঞ্চি মোনা লিসার পোট্রেটটি নিয়ে কাজ করেছিলেন ১৫০৩ সাল থেকে ১৫১৭ সাল পর্যন্ত। শুরু করেছিলেন ইটালির ফ্লোরেন্সে, তারপর ফ্রান্সে।
কিন্তু ভিঞ্চি আসলে কার পোট্রেট তৈরি করেছিলেন সেই প্রশ্ন মোনালিসার হাসির মতই রহস্য হয়ে আছে। তবে মোটামুটি প্রতিষ্ঠিত যে ব্যাখ্যা তা হলো পোট্রেটের এই নারী ফ্লোরেন্সের তৎকালীন একজন সিল্ক ব্যাসায়ীর স্ত্রী লিসা গেরারদিনি।

কিন্তু সেই তত্ত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছেন প্যারিসের একজন বিজ্ঞানী পাসকাল কোট।
২০০৪ সালে ল্যুভ কর্তৃপক্ষ তাকে বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে এই পোট্রেটের ছবি তোলার সুযোগ করে দেয়। তারপর এত বছর ধরে বিশেষ আলো এবং লেন্সের প্রযুক্তি ব্যবহার করে গবেষণার পর এই বিজ্ঞানী বলছেন, পোট্রেটের নারী লিসা গেরারদিনি নন, অন্য কেউ।

”আমরা এখন যে কোনো পেইন্টিংয়ের ভেতরে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে পারি। শিল্পীর প্রতিটি পোজ এখন পেঁয়াজের খোসার মত পরতে পরতে দেখতে পারি। কোনো ছবি নিয়ে প্রথম থেকে পর্যায়ক্রমে শিল্পী কীভাবে এগিয়েছেন বুঝতে পারি।”

পাসকাল কোট বলছেন, তিনি দেখেছেন ক্যানভাসের মোনালিসার পেছনে তিনটি আলাদা আলাদা ইমেজ। তৃতীয় যে ইমেজটি তিনি খুঁজে পাচ্ছেন সেটি অন্য এক নারীর মুখ, তার ঠোঁটে কোনো হাসি নেই। এই বিজ্ঞানী একরকম নিশ্চিত ক্যানভাসে খালি চোখে না দেখতে পাওয়া সেই মুখই লিসা গেরারদিনির।

”দশ বছর আগ পর্যন্ত এটা কল্পনা করাই কঠিন ছিল, এই পোট্রেটের ক্যানভাসে মোট চারটি ধাপ ছিল। সবাই আপনাকে বলবেন, এই পোট্রেটটি একবারেই করা।”
এখন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে লিসা গেরারদিনির প্রোট্রেট কি পরে বদল করেছিলেন দ্য ভিঞ্চি? এখনকার চিত্রটি কি অন্য কোনো নারীর?
পেইন্টিংয়ের ইতিহাসবিদ অ্যান্ড্রু গ্রায়াম ডিক্সন বলছিলেন, পাসকাল কোটের এই তত্ত্ব গত একশ বছরে শিল্প জগতের সবচেয়ে সাড়া জাগানো খবর।
”আমি মনে করি নতুন এই আবিস্কার শিল্প জগতের ইতিহাসের পুকুরে বিশাল এক পাথর ছুঁড়ে মারার মত ঘটনা। মোনালিসা সম্পর্কে আমরা এতদিন ধরে যা বিশ্বাস করতাম, তাতে বড় ধরণের ঘা পড়েছে। আমি অন্তত এখন আর বলবো না যে ছবির ঐ নারী মোনালিসা। বরঞ্চ অন্য কেউ।”

তবে লিওনার্দো নিয়ে যারা গবেষণা করেছেন, তাদের অনেকেই নতুন এই তত্ত্বকে তেমন গুরুত্ব দিতে রাজি নন। অক্সফোর্ড বিশ্ব বিদ্যালয়ের আর্ট হিস্ট্রির অধ্যাপক মার্টিন কেম্প মানতে রাজি নন দ্য ভিঞ্চি, লিসা গেরারদিনির মুখের ওপর দিয়ে পরে অন্য কোন নারীকে এঁকেছিলেন।

”পাসকাল যে সব গবেষণা তথ্য হাজির করেছেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আগামী বছরগুলোতে এ নিয়ে বহু কথাবার্তা হবে। কিন্তু আমি মনে করি লিওনার্দো ফ্লোরেন্সের তৎকালীন প্রচলিত কায়দায় মোনালিসার পোট্রেট আঁকা শুরু করেন, যেটিতে হয়ত পরে তিনি ভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। পাসকাল তার গবেষণায় দেখেছেন ছবিটি আঁকার বিভিন্ন পর্যায়ে লিওনার্দো কী কী ভেবেছেন, কিভাবে এগিয়েছেন, কিন্তু মোনালিসার মূল পোট্রেট ঢাকা পড়ে গেছে, সেটা বিশ্বাসযোগ্য নয়।”

মোনালিসা নিয়ে বিজ্ঞানী পাসকাল কোটের সাড়া জাগানো এই তত্ত্ব নিয়ে ল্যুভ মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ কোনা মন্তব্য করতে রাজি হননি।