Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫ চেন্নাইয়ের সাম্প্রতিক বন্যা একটি ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেছে। তা হচ্ছে, ভারতের নগরগুলো বৃষ্টি, বন্যা, খরা ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো মারাত্মক ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত নয়। অথচ এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ ইদানীং ঘন ঘন আঘাত হানছে।

গত মাসের শেষদিক থেকে শুরু হওয়া প্রবল বর্ষণে দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্যের রাজধানী চেন্নাই হাবুডুবু খেয়েছে। সরকারি তথ্যমতে, বন্যায় ২৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বিমানবন্দরে থই থই পানি জমে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ট্রেন চলাচল। একরকম যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে শহরটি। এখন ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হচ্ছে চেন্নাই।

কেবল অতিবৃষ্টিতে বা বন্যায় নয়, অল্প বৃষ্টিতেও পানি জমে যায় চেন্নাইয়ের রাস্তায়। শহরের প্রায় সব সড়কের একই অবস্থা হয়। সেখানকার নামকরা হাসপাতাল, বাজার, স্কুল, কলেজে জমে যায় পানি। এই পানি নেমে যেতেও সময় লাগে বেশ এবারের বন্যায় চেন্নাইয়ের যাচ্ছেতাই অবস্থায় আবার প্রমাণ করেছে, এই রাজধানীটি অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠেছে। এর কারণ হলো, শহরের বেশির ভাগ ভবনই জলাভূমির ওপর নির্মিত। ভবনগুলো এমন জায়গায় নির্মিত যাতে জমে থাকা পানি সরতে পারে না। এ জন্য দায়ী দ্য করপোরেশন অব চেন্নাই ও চেন্নাই মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট অথরিটি।

চেন্নাই ভারতের চতুর্থ জনবহুল শহর। সেখানে ৪০ লাখের বেশি লোকের বাস। চরমভাবাপন্ন আবহাওয়ার এই শহরে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত পরিকল্পনা নেই। শহরের পরিকল্পনাবিদ, ভবনের নকশাবিদ ও প্রশাসকদের মধ্যে যোগাযোগের অভাব রয়েছে। ধরেই নেওয়া হয়, প্রাকৃতিকভাবে এসব সমস্যার সমাধান হবে।

চেন্নাইয়ের নগরভবন ও পৌর কর্তৃপক্ষ বলছে, সেখানকার তিন শতাধিক নালা, খাল ও জলাশয় বিলীন হয়ে গেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের খবরে জানা যায়, ২০ বছর আগে চেন্নাইয়ের যেসব এলাকায় নালা, খাল, নদী ছিল, এসব এলাকায় এখন সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। গড়ে উঠছে আবাসিক ভবন। একের পর এক কলকারখানা তৈরি হচ্ছে। চেন্নাই শহরেই দেড় লাখেরও বেশি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে। উধাও হয়ে যাচ্ছে জলাশয়।

এই বন্যায় চেন্নাইয়ের তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক ভেসে গেছে। কারণ এই পার্কটি এমন জায়গায় নির্মিত যেখানে দুটি আলাদা নালা থেকে পানি এসে মিলিত হতো। এর পর সেই পানি পাশের একটি ছোট নদীতে চলে যেত। পার্কটি তৈরি হওয়ার পর পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। শুধু তথ্যপ্রযুক্তি পার্ক নয়, শহরের বেশির ভাগ ভবনগুলো জলাভূমির ওপর নির্মিত। ভবনগুলো এমন জায়গায় নির্মিত যাতে পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ হয়ে গেছে। তাই বৃষ্টি হলেই পানি জমে বেশির ভাগ রাস্তায়।

চেন্নাইয়ের লেখক ও সমাজকর্মী নিত্যানন্দ জয়রমণের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, শহরের বিখ্যাত যানবাহন নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটিও অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত। এই ভবনের কারণে ওই এলাকায় জমে থাকা পানি নিষ্কাশিত হতে পারে না। সেখানকার নামকরা প্রকৌশল স্কুল আইআইটি মাদ্রাজ বনভূমির ৫২ একর জায়গা দখল করে গড়ে উঠেছে। এই বনে আট হাজারের বেশি গাছ ছিল।

জয়রমণের বিশ্লেষণ বলছে, এসব প্রকল্পের কোনোটিই স্থানীয় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন পায়নি। পরিবেশ সুরক্ষার ছাড়পত্রও পায়নি। পুরোটাই গড়ে উঠেছে অবৈধভাবে। আইআইটি মাদ্রাজ স্কুলের পাশে একটি ন্যাশনাল পার্ক গড়ে তোলার জন্য ২০০১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়েছে। কিন্তু তা কাজে আসেনি। পরিবেশ রক্ষার এ রকম ৩৯টি প্রকল্পেরই দৈন্যদশা দেখা গেছে।

চেন্নাইয়ে বন্যা বা জলাবদ্ধতার আরও একটা বড় কারণ প্লাস্টিক। প্লাস্টিক এমন এক জিনিস, যা সহজে নষ্ট হয় না। অথচ এর ব্যবহার দিন দিন বেড়েই চলেছে। এখানকার আবহাওয়া চরমভাবাপন্ন। গরম যেমন বেশি, তেমনি বৃষ্টিও বেশি। নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে প্লাস্টিকের বর্জ্য নদীতে গিয়ে মেশে। সেগুলো আবার চলে যায় শহরের পাশের সাগরে। সাগরে জোয়ার-ভাটার সময় সেই প্লাস্টিকের বর্জ্য আবার ফিরে আসে। মেরিনা সাগরসৈকতে গেলেই ব্যাপারটি বোঝা যায়। সৈকতে পড়ে থাকে নানা ধরনের প্লাস্টিকের বর্জ্য। সাগরের ঢেউয়ের সঙ্গেও ভেসে আসে প্লাস্টিক। প্লাস্টিক পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে দেয়। যে পথে পানি নিষ্কাশিত হবে সেখানে প্লাস্টিক জমে পানিপ্রবাহকে বন্ধ করে দেয়। ফলে অল্প বৃষ্টিতেই জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। কিন্তু এসব সমস্যা সমাধানে উদাসীন কর্তৃপক্ষ। বিবিসি অবলম্বনে