Tue. May 6th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

76খোলা বাজার২৪, বৃহস্পতিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০১৫: তখন মধ্যদুপুর। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ব্যস্ত নগরীতে ব্যস্ত সবাই। কারো দিকে খেয়াল করার মতো সময় নেই। রাজধানীর বাসাবো’র বৌদ্ধ মন্দির এলাকায় দায়িত্ব পালন করছিলেন পুলিশ সার্জেন্ট রফিক। ট্র্যাফিক নিয়ন্ত্রণ করার জন্য সিগন্যাল দেন তিনি। এসময় একটি সাদা রঙের মাইক্রোবাস সিগন্যাল অমান্য করে।

সার্জেন্ট রফিক ওই মাইক্রোবাসকে সিগন্যাল মানার জন্য ইশারা করেন। কিন্তু ওই মাইক্রোবাসটি সিগন্যাল অমান্য করেই চলতে শুরু করে। এসময় সার্জেন্ট রফিক নিজের মোটর সাইকেলে উঠে পড়েন। মনে হচ্ছিল মাইক্রোবাসটির মধ্যে কোনো গড়মিল রয়েছে। মোটর সাইকেল স্টার্ট করতেই মাইক্রোবাস অনেকদূর চলে গেছে। হাল ছাড়েন নি রফিক। খিলগাঁও ফ্লাইওভারের নিকট মাইক্রোবাসটিকে প্রায় ধরেই ফেলেছিলেন। কিন্তু রফিক ব্যর্থ হন সেখানে। একাই একটা দলকে ধাওয়া করে ধরে ফেলা কিভাবে সম্ভব? এরইমধ্যে টার্ন করে গাড়িটি চলে যায় আনসার ভিডিপি সদর দপ্তরের সামনে। মধ্যদুপুরে রাস্তার মাঝে দাঁড়িয়ে দায়িত্বপালনকারী সার্জেন্ট রফিক যথার্থই ক্লান্ত ছিলেন।

কিন্তু এই মাইক্রোবাসকে কোনোভাবেই হাতছাড়া করা যাবে না। যেভাবেই হোক ধরতেই হবে। কিসের ক্লান্তি? ক্লান্তি ভুলে নতুন উদ্যমে গাড়ির গতি বাড়িয়ে দেন এই সার্জেন্ট। এবার একেবারে আনসার ভিডিপি সদর দপ্তরের কিছুটা সামনে গিয়ে মোটর সাইকেলের ব্রেক কষেন। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে ‘যেন বাস্তব নয় সিনেমার ঘটনা দেখছি।’ মোটর সাইকেল থেকে নেমেই দৌঁড়ে একজনকে জাপটে ধরেন রফিক। ততক্ষণে বাকি আরও কয়েকজন দ্রুত নেমে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়। রফিকের এই কাণ্ডে কি ঘটতে পারতো? পালিয়ে যাওয়া দুর্বৃত্তদের হাতে অস্ত্র ছিল। সেসবের ভয় রফিককে স্পর্শ করে নি। এসময় রফিকের সাহসিকতা দেখে এগিয়ে আসেন স্থানীয়রা।

মাইক্রোবাসের ভেতর উঁকি দিয়ে দেখা মেলে একজনকে হাত-পা বেঁধে ফেলে রাখা হয়েছে। যেমন গোয়েন্দা কাহিনিগুলোতে হয় আর কি! এই খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়রা আরো দুইজনকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ধরে ফেলে। মাইক্রোবাস থেকে হাত-মুখ বাঁধা অবস্থায় যাকে উদ্ধার করা হয় তাঁর নাম খলিলুর রহমান। তিনি একজন ব্যবসায়ী। খলিলুর জানান, তাঁকে পুলিশের ভয় দেখিয়ে গাড়িতে তুলে নেয় দুর্বৃত্তরা। সার্জেন্ট রফিক জানান, প্রথমেই আমার মনে সন্দেহ সাদা এই মাইক্রোবাসে কাউকে অপহরণ করা হচ্ছে। আমি যখন ওদের মাইক্রোবাসের সামনে মোটর সাইকেল ব্রেক কষি তখন যারা পালিয়ে যাচ্ছিল তাদের শরীরে ছিল ডিবি পুলিশের অনুকরণে জ্যাকেট। ডিবি পরিচয় তারা ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে নিয়ে যাচ্ছিল। আটককৃত মাইক্রোবাসটি (ঢাকা মেট্রো গ ১৪-৯১২৭) জব্দ করা হয়েছে।

সার্জেন্ট রফিক জাপটে ধরে যাকে আটক করেন তার নাম আবুল হাসেম ব্যাপারী। বাড়ি চাঁদপুর জেলার হাজিগঞ্জে। পরে স্থানীয়রা আরও দুইজনকে আটক করেন। এরা হলো- নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও এলাকার আব্দুল মোমেন ও নোয়াখালীর কাশেম। উদ্ধার হওয়া ব্যবসায়ী সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যায় নি। তাঁকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ঢাকা কলেজ থেকে ইংরেজি সাহিত্যে মাস্টার্স সম্পন্ন করে ২০১০ সালে পুলিশে যোগদান করেন রফিক। পুরো নাম রফিকুল ইসলাম। বাড়ি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের বাঘাবাড়িতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়েই এই অপহরণকারী দলকে ধরে আলোচনা আসেন তিনি। কেন এই ঝুঁকি নিলেন? এমন প্রশ্নের জবাবে রফিক বলেন, আমার এটা দায়িত্ব। আমার দায়িত্ব আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা দিয়েই করে গেছি। দায়িত্ব পালনের সময় আমাকে কোনো ভয় স্পর্শ করে না।

খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাইনুল হোসেন পিপিএম কালের কণ্ঠকে জানান, ‘রফিকুল ইসলাম তাঁর দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে দুঃসাহসিক কাজ করে ফেলেছেন। এই কাজ অনেক প্রসংশার দাবি রাখে। তাঁর কাজে পুলিশ বাহিনীর অন্যান্য সদস্যরাও অনুপ্রাণিত হবে। আটককৃতদের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলাও দায়ের করা হয়েছে বলেও তিনি জানান।’