Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

খোলা বাজা8র২৪, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫: পৌরসভা নির্বাচনে আচরণ বিধি লংঘনের অভিযোগে সংসদ সদস্যদের কারণ দর্শাতে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে চিঠি দেওয়া হলেও দুই মন্ত্রীর বিষয়ে ব্যবস্থার ভার মাঠ কর্মকর্তাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।
তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বৃহস্পতিবার ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশনা পাঠায় কমিশন।
অথচ তিন দিন আগেই ঢাকা-২০, বরগুনা-২ ও নাটোর-২ আসনের সাংসদকে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শাতে ইসি সচিবালয় থেকেই সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়। তিন সাংসদই বুধবার ইসিতে নোটিশের জবাব দিয়ে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন।

এর আগেও গত এপ্রিলে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় তিন মন্ত্রীর ‘আচরণবিধি লংঘনের’ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তা নির্বাচন কর্মকর্তার ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে ওই মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সে সময় সমালোচনার মুখে পড়েছিল নির্বাচন কমিশন।

বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদে বিভিন্ন সময়ে মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ এলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। গত উপজেলা নির্বাচনে নিজের নির্বাচনী এলাকায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে প্রচারণায় অংশ নেওয়ায় শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমুর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘নালিশ’ করেছিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।

তথ্যমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রী পৌরভোটে প্রার্থীর পক্ষে গত রোববার ফুলপুর পথসভায় অংশ নেন বলে সংবাদের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সেখানকার রিটার্নিং কর্মকর্তাকে চিঠি পাঠায় কমিশন সচিবালয়। ‘দুই মন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্র চারণা’ শিরোনামে গত ৭ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

“পত্রিকায় প্রকাশিত আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইসিকে লিখিতভাবে জানানোর জন্যে অনুরোধ করা হলো,” বলা হয়েছে ইসির উপসচিব রকিবউদ্দিন মণ্ডল স্বাক্ষরিত চিঠিতে।

এখনও চিঠি পাননি বলে বৃহস্পতিবার রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে থাকা ফুলপুরের ইউএনও সুব্রত পাল জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “চিঠি পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”

সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা মোজাম্মেল হকও এখনো ইসির নির্দেশনা না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

এবার ২৩৪ পৌরসভায় অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, ইউএনও এবং জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্বে আছেন।

দুই মন্ত্রীর আচরণ বিধি ‘লংঘনের’ বিষয়ে নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে কেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সে বিষয়ে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে নির্বাচন কমিশনার আব্দুল মোবারক বলেন, এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।

তবে দুপুরে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, “আচরণবিধি অনুসরণে তিনজন সংসদ সদস্যকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছে। তবে দুই মন্ত্রীর বিষয়ে রিটার্নিং অফিসারকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।”

এরপরেও নির্বাচনী এলাকায় কিছু ঘটলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।

“আরও যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে তাদের বিষয়ে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর বাইরে কিছু করা হবে না,” বলেন ইসি সচিব।

মন্ত্রীদের বিষয়ে নিজেরা ব্যবস্থা না নিয়ে ইসি সচিবালয় মাঠ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সংস্থাটির একজন কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা বলেন, “ইসি পত্রপত্রিকার নিউজ দেখে সাংসদদের নোটিশ দেয়, আর মন্ত্রীর বিষয়ে নীরব প্রতিষ্ঠানটি। মাঠকর্মকর্তারা এ নিয়ে কী করবেন?”

ইসি এভাবে অন্যের কাঁধে দায়িত্ব চাপালে ভোটের আগামী দিনগুলোতে কী অবস্থা দাঁড়াবে তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন অনেকে।

“কেন্দ্র থেকে দায় অন্যের ওপর ছেড়ে দিলে মাঠ কর্মকর্তাদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ মন্ত্রী মহোদয়ের নজরে আনতে পারি আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি। সামনে যাতে কোনোভাবে আচরণবিধি লঙ্ঘন না করে সেজন্য এটা করা যায়,” বলেন একজন মাঠ কর্মকর্তা।

ইসির উপসচিব সামসুল আলম জানান, ইসি সচিবালয়ের দুই জন কর্মকর্তাকে পত্রিকা মনিটরিংয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা প্রতিদিন এ সংক্রান্ত খবর পর্যালোচনা করে বিধি লংঘনের কোনো ঘটনা ঘটলে তা ইসির নজরে আনবেন।

সরকারি সুবিধাভোগী অতিগুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। দলীয় প্রধানদেরও পথসভা ছাড়া কোনো কিছু করার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে পৌর নির্বাচনে অংশ নেওয়া ২০টি দলকেও এরইমধ্যে চিঠি পাঠিয়েছে ইসি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪ পৌরসভায় ভোট সামনে রেখে বুধবার থেকে প্রতীক ছাড়া পথসভা ও ঘরোয়াসভাসহ প্রচার শুরু হয়েছে। তবে প্রতীক নিয়ে আনুষ্ঠানিক প্রচারণা ১৪ ডিসেম্বর থেকে শুরু হবে।