Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

13খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫: মুসলিমদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া নিয়ে দেশটির রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বক্তব্য শুধু যুক্তরাষ্ট্রেই নয়, সমালোচিত হয়েছে বিশ্বব্যাপী।

শুধু অভিবাসীদের জন্যই নয়, যেসব ভ্রমণকারী এবং শিক্ষার্থী সাময়িক ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে আসতে চায় তাদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা দরকার বলে তিনি তার বক্তব্যে বলেন।

এ বিষয়ে নারী অধিকার কর্মী ডা. কান্তা আহমেদের একটি সাক্ষাৎকার নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সিএনএন। কান্তা আহমেদ বর্তমানে স্টেট ইউনিভার্সিটি অব নিউ ইয়র্কে অধ্যাপনা করছেন।
তার এই সাক্ষাৎকারে অন্যান্য জনপ্রিয় মুসলমান ব্যক্তিত্বের মধ্যে শুরুতেই উঠে এসেছে বাংলাদেশি স্থাপত্যবিদ ফজলুর রহমান খানের (এফ আর খান’র) কথা।

সাক্ষাৎকারের শিরোনাম ছিল, ‘ধরুন, মুসলিমদের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে, তবে কেমন দেখাতো যুক্তরাষ্ট্রকে?’

কান্তা আহমেদের কাছে প্রশ্ন ছিল, যদি ট্রাম্পের পরামর্শ বাস্তব হয়, তবে কী ঘটতো?

তিনি বলেন, ধরুন গত কয়েক দশক ধরে মুসলিমদের নিষেধাজ্ঞা চলছে, তবে কী সাংস্কৃতিক প্রভাব, অর্থনৈতিক সফলতা এবং অগ্রগতি হারাতে হতো যুক্তরাষ্ট্রকে?
স্থাপত্য বিষয়ে অগ্রগতি : মুসলিমদের ছাড়া শিকাগোর বিশাল বড় উইলস টাওয়ার (সাবেক সিয়ার্স টাওয়ার) কিংবা জন হ্যাংকক সেন্টার ভাবাই যায় না। ওই দুটি ভবনের নকশাই করেছেন প্রয়াত ফজলুর রহমান খান।

তার নকশা করা ১১০ তলা বিশিষ্ট সিয়ার্স টাওয়ার ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে বড় ভবন ছিল।

ফজলুর রহমান খান ১৯২৯ সালে বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেন এবং পড়াশুনার জন্য ফুলব্রাইট বৃত্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন। একজন ধর্মভীরু মুসলমান হিসেবে তিনি সৌদি আরবের জেদ্দাতে প্রায় ১০ হাজার হাজির যাতায়াত সুবিধা সংবলিত একটি হজ টার্মিনালেরও নকশা করেন।

ট্রফিবিহীন থাকতো হাউস্টন : অধুনাবিলুপ্ত যুক্তরাষ্ট্রের হাউস্টন কমেট ফুটবল টিম চারবার জিতেছে ডব্লিওএনবিএ ট্রফি এবং বেশ কয়েকবার জিতেছে এমএলএফ কাপ। ১৯৯৪ এবং ১৯৯৫ সালে জিতেছে এনবিএ চ্যাম্পিয়নশিপস।

এর পুরো কৃতিত্বটাই রকেট’র, যার আসল নাম হাকীম ওলাজুয়ন। হাকীম ছিল তার দলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খোলোয়াড়। খেলাধুলার মধ্যেও রমজানে রোজা রাখতেন হাকীম।

২০০৮ সালে ‘ইসলামিক সার্কেল অব নর্থ আমেরিকা’ তাকে এক সংবর্ধনা দেয়। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার সম্পর্কে বলা হয়, ‘ইসলামের নীতিগুলো ধারণ করে তিনি একইসাথে মুসলিম এবং মুসলিম যুবকদের জন্য উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন।’

তার ধর্মের কারণে যদি তাকে নাইজেরিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেওয়া না হতো তবে যুক্তরাষ্ট্র ফুটবলের এক নায়ককে হারাতো।

মার্কিন সুর-সঙ্গীতে ব্যতিক্রম ধারা : মার্কিন সঙ্গীতে ব্যতিক্রম ধারা সৃষ্টিকারী রে চার্লস এবং আরেথা ফ্রাঙ্কলিনের মতো শিল্পীরা ইতিহাসে স্থান পেতো না যদি আহমেদ এরদোগানের মতো সঙ্গীত পরিচালক না থাকতো।

যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টিক রেকর্ডের প্রতিষ্ঠাতা আহমেদ এরদোগান শুধু তাদেরকেই সঙ্গীতে তুলে আনেননি, রোলিং স্টোনস, লেড জেপেলিন এবং ক্রসবি, স্টিলস, নাশ ও ইয়াং-এর মতো গানের দলও সৃষ্টি করেছেন তিনি।

তুরস্ক থেকে তার কূটনৈতিক বাবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন আহমেদ এরদোগান। অ্যাম্বাসেডর হিসেবে তার বাবাকে যুক্তরাষ্ট্রে ঢুকতে দেওয়া না হলে সঙ্গীত জগতের এক পুরোধাকে হারাতো যুক্তরাষ্ট্র।
ডা. কান্তা আহমেদ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে মুসলিমদের এমন কিছু সফলতার ঘটনা আছে, যা শুনলে যে কেউ বলবে, ‘এগুলো এদেশকে অগ্রগামী করেছে।’

তিনি নিজেও একজন মুসলিম এবং চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শিক্ষা নিয়ে তিনি বিশ্বব্যাপী মানুষকে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তিনি একজন লেখিকাও।

ডোনল্ড ট্রাম্পের বক্তব্যকে ‘মার্কিন মূল্যবোধ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন’ বলেও মন্তব্য করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের একঘরে করে রাখার জন্য করা হচ্ছে। এ ধরনের কথা প্রত্যাহার করা উচিৎ। এটা বিপজ্জনক।’

মার্কিন সেনাবাহিনীতে মুসলিম : মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীতে একটি বড় অংশই আছে মুসলমান। তাদের ভূমিকাও কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। মার্কিন সেনাবাহিনীতে ধর্মীয় পরিচয় ব্যক্তিগত ব্যাপার হওয়ায় মুসলমানদের সঠিক সংখ্যা জানা যায় না। তবে ধারণা করা হয়, ৪ হাজার ৫০০ থেকে ৫ হাজারের মতো মুসলিম সদস্য আছে মার্কিন সেনাবাহিনীতে।
মঙ্গলবার পেন্টাগনের মুখপাত্র পিটার কুক বলেন, ‘অবশ্যই আমাদের মুসলমান সৈনিক আছে। এটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মাথা ঘামায় না।’

নিউ জার্সিতে অভিবাসী মাতাপিতার ঘরে জন্ম নেওয়া সেনা সদস্য করিম রাশাদ সুলতান খান ২০০৭ সালে ইরাক যুদ্ধে প্রাণ হারান। তার বাবা ফিরোজ খান বলেন, ‘তার মুসলিম ধর্ম বিশ্বাস তাকে ইরাক যুদ্ধ থেকে বিরত রাখতে পারেনি। আমিও তাকে থামাতে পারিনি। সে নিজেকে আমেরিকান হিসেবে ভেবেছিল এবং তার কাজ বেছে নিয়েছিল।’

যুক্তরাষ্ট্র হারাতো এক অনুপম কৌতুক কণ্ঠ : যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাস্টার অব নান’ কৌতুক অনুষ্ঠানের নির্মাতা আজিজ আনসারি এক জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। সাউথ ক্যারোলিনাতে জন্ম নেওয়া এই মুসলিম ব্যক্তিত্বের মা-বাবাকে যদি ভারত থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসতে দেওয়া না হতো তবে এই জনপ্রিয় ব্যক্তিত্বকে হারাতো দেশটি।
সূত্র : সিএনএন।