খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫: আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে কেন্দ্রের কথা মানছেন না আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা। বিশেষ নির্দেশনা এবং চাপ প্রয়োগ করেও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করাতে পারছে না আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বিদ্রোহী প্রার্থীদের নিয়ে বেকায়দায় আছি আমরা। শত চেষ্টা করেও তাদের (বিদ্রোহীদের) মনোনয়ন প্রত্যাহার করানো যাচ্ছে না।’
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, ‘একক প্রার্থীর পক্ষে দলীয় প্রধান সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার কথা বললেও শতাধিক পৌরসভায় বিভাজন এখনও স্পষ্ট। দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিবাদ মীমাংসা করতে না পারলে অন্যরা সুবিধা নেবে।’
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীদের দমাতে বেশ হিমশিম খেতে হচ্ছে সংগঠনটিকে। বিদ্রোহী প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার পক্ষ থেকেও কড়া নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠকও করেছেন। বৈঠকে বিভাগের সাংগঠনিক সম্পাদকদের এ ব্যাপারে বিশেষ তাগিদ দেয়া হয়। বিদ্রোহী দমাতে দফায় দফায় বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় নেতারাও।
জানা গেছে, গত শনিবার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর রোববার থেকেই কেন্দ্রীয় নেতারা মাঠে কৌশলী অবস্থান নিয়ে বিদ্রোহীদের মনোনয়ন প্রত্যাহারে দেন দরবার করে আসছেন। নির্বাচনী আচরণ বিধি লক্ষ্য রেখে নিজ নিজ এলকায় গিয়ে ঘরোয়া বৈঠক করছেন মন্ত্রী-সাংসদরও।
তবে শত চেষ্টা করেও মন টলানো যাচ্ছে না বিদ্রাহীদের। এ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদের মধ্যে থেকে ডজন খানিক প্রার্থী তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করছেন বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে অন্যান্য বিদ্রোহীরা কৌশলে কেন্দ্রের নির্দেশ এড়িয়ে চলছেন।
এরই প্রেক্ষিতে বুধবার আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ বিদ্রোহীদের উদ্দেশ্যে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। ওই দিন রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পর হানিফ বলেন, ‘২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রার্থীতা প্রত্যাহার না করলে বিদ্রোহীদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে’।
একই দিন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, “২৪ ঘণ্টার মধ্যে বিদ্রোহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে।”
এর আগে বিদ্রোহী প্রার্থী প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা হানিফ বলেছিলেন, ‘আমাদের হিসেব অনুযায়ী ৭১টি পৌরসভায় বিকল্প প্রার্থী রয়েছে। এটি নির্বাচনের কৌশলও বটে। এসব প্রার্থীরা ১৩ ডিসেম্বরের মধ্যে তাদের মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেবে বলে দল মনে করে। আশা করছি, মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন আমাদের আর কোনো বিকল্প বা বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। সংগঠনের নেতৃবৃন্দ নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে সেভাবেই কাজ করছেন।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এ ব্যাপারে বলেন,‘ নির্বাচনে বড় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকা স্বাভাবিক। তবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির ওপর ভরসা রেখে শেষ পর্যন্ত বিদ্রোহী প্রার্থীরা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াবেন। প্রার্থীতা প্রত্যাহারের এখনও সময় আছে এবং শেষ পর্যন্ত আমাদের কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না বলে মনে করি।’
উল্লেখ্য, আগামী ৩০ ডিসেম্বরর ২৩৫টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ৩ ডিসেম্বর ছিল মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষদিন। ১৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন।