Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

blp-dr.mustafizur-rahman-iran-pic-02_56381

খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৫।। ২০ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষ নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান শরিক জামায়াতের রাজনীতি, জনকল্যাণে লেবার পার্টির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ সম-সাময়িক  বিষয় নিয়ে কথা বলেন।
একান্ত সাক্ষাতকারে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান শীর্ষ নেতা ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান।
  • খোলা বাজার২৪।। মুজাহিদ ও সাকা দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েছিল। বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান: তারা ম্যাজিস্ট্রেট মারফত রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন- সরকারের পক্ষ থেকে এমন ঘোষণা দেয়ার পর আমরা উভয়ের পরিবারের পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হতে দেখেছি।  সাক্ষাৎ শেষে তাদের পরিবারের সদস্যরা বলেছেন যে, তারা রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেননি।  আমাদের ধরে নিতে হবে যে, তাদের পরিবার যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলোই সত্য।
মানুষের মাঝে ধুম্রজাল সৃষ্টি করার জন্য সরকার রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা’র বিষয়টিকে রাজনৈতিক রূপ দিয়েছে।যাতে করে এই ব্যক্তিদের ব্যাপারে জনগণের যতটুকু ভালোবাসা আছে সেখান থেকে তারা যেন আরও দূরে সরে যায়।  ট্রাইব্যুনাল তাদের শাস্তি দিয়েছেন এবং সরকার সেই শাস্তি কার্যকর করেছে।  সুতরাং আমি মনে করি না যে, মৃত ব্যক্তিদের নিয়ে কোনো রাজনীতি করা উচিত।
  • খোলা বাজার২৪।। জামায়াতের একটি বিতর্কিত দল, জামায়াত আজ পর্যন্ত সেজন্য জাতির কাছে ভুল স্বীকার করেনি।
 মোস্তাফিজুর রহমান ইরান:  জামায়াত আওয়ামী লীগের পুরানো বন্ধু ,আওয়ামী লীগের পরীক্ষিত বন্ধু হচ্ছে জামায়াত।জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন সময়ে যে ভূমিকা ছিল তার সকল দায়-দায়িত্ব দলটির তখনকার নেতৃত্বের ওপর বর্তাবে। সংগঠনের টোটাল দায়-দায়িত্ব বর্তায় তার নেতৃত্বের ওপরে। তাদেরতো বিচার করেছে,এখন সরকার চাইলে যেকোনো পদক্ষেপ নিতে পারে।
১৯৮৬ সালে এরশাদের বিরুদ্ধে বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে যাননি।অথচ তৎকালীন সময়ে এই জামায়াতে ইসলামীকে সাথে নিয়ে, তাদেরকে প্ররোচিত করে এরশাদের অধীনে ছিয়াশির নির্বাচনে শেখ হাসিনা অংশগ্রহণ করেছিলেন।১৯৯৫-৯৬ সালে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে এবং বিএনপিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে জামায়াতকে সাথে নিয়ে বিভিন্ন সভা-সমাবেশ, মিটিং-মিছিল করেছেন।জনগণের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার।,অনুমোদন দেয়া কিংবা রেজিস্ট্রেশন দেয়া-এসবের দায়-দায়িত্ব সরকারের।এখন সরকার যদি মনে করে,জামায়াত অপরাধী দল, সেক্ষেত্রে তারা ব্যবস্থা নিতে পারে,দলটিকে নিষিদ্ধ করতে পারে ।  এটা না করে আট বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ এই বিষয়টিকে বার বার সামনে নিয়ে আসছে।ট্রাইব্যুনালে তা প্রমাণিত হয় সেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ করা কিংবা সেটা করতে পারে রাষ্ট্র।  কিন্তু এটা না করে রাজনৈতিক ফায়দা নেওয়ার জন্য,সরকার জামায়াতকে ২০ দলীয় জোট থেকে বাদ দেয়া কথা বলছেন।
আওয়ামী লীগ মূলত তার ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য একটি একদলীয় শাসন কায়েমের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে প্রধান প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী জাতীয়তাবাদী শক্তি।  এই শক্তিকে দুর্বল করার জন্য সরকার কথাগুলো বার বার সামনে নিয়ে আসছে। আমরা দেখেছি-স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও মাহবুব-উল আলম হানিফের এলাকা থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের অসংখ্য মন্ত্রী-এমপিদের কাছে ফুল দিয়ে জামায়াতের অনেক নেতা আওয়ামী লীগে যোগদান করছে।বিএনপি-জামায়াতের কোনো নেতা-কর্মীকে যেন আওয়ামী লীগে নেয়া না হয়।  কারণ, যত অপকর্ম হচ্ছে আওয়ামী লীগের ভাষায় সব অপকর্ম অনু্প্রবেশকারীরা করছে। তারা একদিকে জামায়াতে ইসলামীকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চাইছে, আবার অন্যদিকে জামায়াতের নেতা-কর্মীদের দলে নিচ্ছে।
  • খোলা বাজার২৪।২০ জোটের একটি দলের প্রধান হিসেবে আন্দোলনের বিচার হবে , জোটের একজন নেতা হিসেবে বিষয়টিকে কিভাবে দেখছেন?
মোস্তাফিজুর রহমান ইরান: বিগত কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া আমাদের রাজপথে থাকতে বলেছিলেন এবং আমরা আমাদের সীমিত শক্তি নিয়ে রাজপথে থাকার চেষ্টা করেছি।৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে হারানো গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে ২০ দলীয় জোটনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আহ্বানে সাড়া দিয়ে আমি সহ আমার দলের অনেক নেতা জেল খেটেছে।
 বিশেষ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মানুষ মারা যাওয়ার দৃশ্য দেশবাসী দেখেছে, সেখান থেকে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্যই মূলত সরকার ২০ দলীয় জোটের ওপর এই পেট্রোল বোমা সন্ত্রাসের দোষারোপ করছে।  এখানে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী-এমপিদের বক্তব্যে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে, এই পেট্রোল বোমা সন্ত্রাস তাদের নিজেদের উদ্যোগে করা হয়েছে।  বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়ার জন্য এটি করা হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সরকারি দলের লোকদের অত্যাচারে আজকে আমাদের নেতা-কর্মীরা যেখানে বাসা-বাড়িতে থাকতে পারেন না, সেখানে তারা কিভাবে এ সমস্ত ঘটনা ঘটায়? সরকার  গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে স্তব্ধ করার জন্য কাজ করছে।  বিরোধী নেতৃত্বকে ভেঙ্গে দেয়ার জন্য আজকে নেতাদের বিরুদ্ধে পেট্রোল বোমার নামে মামলা দিয়ে ঘায়েল করার চেষ্টা করছে।  আমি মনে করি না যে, সরকার একাজে সফল হবে।  বিরোধী দলকে নির্মূল করে অতীতেও কোনো সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেনি, এ সরকারও পারবে না।
  •  খোলা বাজার২৪।। বিএনপির অনেকে মনে করেন,  বর্তমান প্রেক্ষাপটে জোটের আর কোনো প্রয়োজনীয়তা নেই। ব্যাপারটি কিভাবে  দেখছেন?
 মোস্তাফিজুর রহমান ইরান:  স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব নিরঙ্কুশ করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আমাদের ডেকেছিলেন।  আমাদের প্রধান কর্মসূচি ছিল ‘দেশ বাঁচাও, মানুষ বাঁচাও’।  এই উদ্দেশ্যে ১৮ দলীয় জোট পরবর্তীতে ২০ দলীয় জোটে পরিণত হয়।  প্রধান লক্ষ্য ছিল-আওয়ামী দুঃশাসন থেকে জাতিকে মুক্ত করা।  কে বা কারা বলেছেন- জোটের প্রয়োজন নেই।  সেটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার।  আমি মনে করি না যে, ২০ দলীয় জোটের প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে।  কারণ, যে উদ্দেশ্য নিয়ে জোট গঠিত হয়েছিল সেগুলো এখনো প্রতিষ্ঠিত হয়নি।
বেগম খালেদা জিয়ার দৃঢ় নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এই কথাগুলোকে সামনে নিয়ে আসছেন।  বাংলাদেশ লেবার পার্টি একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক সংগঠন।  ১৯৭৮ সালে লেবার পার্টি তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জোট জাতীয়তাবাদী ফ্রন্টে ছিল।  তবে যখন এ প্রশ্ন সামনে চলে এসেছিল যে, একই চিন্তা-চেতনার কারণে জোটকে বিলুপ্ত করে একটি দল গঠন করা হবে, তখন আমরা দেখেছি- অনেক দল জিয়াউর রহমানের সাথে একীভূত হয়ে গিয়েছিল।
আমরা মনে করি-কয়েকটি ইস্যুতে জোটবদ্ধ হয়েছি।  বিএনপির শতভাগ নীতি-আদর্শের সাথে যেমন আমাদের মিল নেই, তেমনি আমাদেরও শতভাগ নীতি-আদর্শ ও কর্মসূচির সাথে বিএনপিরও মিল নেই।