খোলা বাজার২৪,রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫: দলের সমর্থন না পেয়ে আসন্ন পৌর ভোটে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন এমন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীর সংখ্যা বিগত নবম ও দশম সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি হলেও মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিনে চিত্রটি পাল্টে যেতে পারে।
শেষ পর্যন্ত ‘দলীয় চাপে’র কাছে নতি স্বীকার করে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বড় একটি অংশ রোববার প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিনে ভোটের লড়াই থেকে সরে যেতে পারে বলে মনে করছেন নির্বাচনসংশ্লিষ্টরা।
প্রার্থিতার জন্য ১০০ ভোটারের সমর্থন তালিকা দেওয়ার শর্তের পরও এবার পৌর ভোটে সবশেষ দুটি সংসদ নির্বাচনের চেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন বলে শনিবার নির্বাচন কমিশন সচিবালয় থেকে সরবরাহ করা বৈধ প্রার্থীর তালিকা পর্যালোচনায় দেখা গেছে।
নির্বাচন কমিশনের নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখার উপ-সচিব সামসুল আলম জানান, ২৩৪ পৌরসভায় মেয়র পদে ৩৮৫ জন বৈধ স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন।
“৫০৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বাছাইয়ে ১১৮ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়। আপিল করে কেউ কেউ ফিরেছেন এবং মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় পার হলে সোমবার তাদের চূড়ান্ত সংখ্যা জানা যাবে।”
নবম সংসদে ১৪১ জন ও দশম সংসদে ১০৪ জন স্বতন্ত্র প্রার্থী ভোটে ছিলেন। বাংলাদেশে সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে সরাসরি ভোট হয়।
আওয়ামী লীগের প্রায় অর্ধশত ও বিএনপির অর্ধশতাধিক নেতা দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ ‘বিদ্রোহীদের’ সতর্ক করেছে- নির্ধারিত সময়ের মধ্যে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার না করলে তাদের দল থেকে আজীবন বহিষ্কার করা হবে। বিএনপিও তাদের ‘বিদ্রোহীদের’ বুঝিয়ে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, “স্বতন্ত্র প্রার্থী হলেও দল তাদের বহিষ্কারের হুমকি দিলে ইসির করার কিছু নেই। দলীয়ভাবে এ নির্বাচন হচ্ছে, দলগুলো একক প্রার্থী দিয়েছে; এখন দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় দলকেই কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে হবে।”
স্বতন্ত্র প্রার্থীদের একাংশের শেষ সময়ে দলীয় ‘চাপে’ সরে যাওয়া ছাড়া উপায় থাকবে না বলে মনে করেন তিনি।
১০ দিন পর ইসির তথ্য সরবরাহ
পৌর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিল থেকে বাছাই শেষ পর্যন্ত দশ দিনেও প্রার্থীদের ‘সঠিক’ সংখ্যা জানাতে পারেনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময়, ৫-৬ বাছাই ও ১৩ ডিসেম্বর প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ দিন।
শনিবার পর্যন্ত আপিলে কতজন প্রার্থিতা ফিরে পেয়েছেন তা নিশ্চিত করতে পারেনি কমিশন। মাঠ ও কেন্দ্রের ‘সমন্বয়হীনতা’ নিয়ে চরম অসন্তোষ ইসি সচিবালয়েও।
দলভিত্তিক তালিকা দিয়ে সামসুল আলম শনিবার জানান, মেয়র পদে দলীয় এবং স্বতন্ত্র মিলিয়ে এক হাজার ২১৩ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।এর মধ্যে ২০টি দলের ৭১০ জন মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন।
বাছাইয়ে আওয়ামী লীগের সাত, বিএনপির নয়জন ও জাতীয় পার্টির ছয়জনসহ ১১টি দলের ৩৯ জনসহ মোট ১৫৭ জনের মনোনয়ন বাতিল হয়েছে।
নির্বাচন কমিশনের দেওয়া তালিকা অনুযায়ী শনিবার পর্যন্ত বৈধ প্রার্থী রয়েছেন এক হাজার ৫৬ জন। যার মধ্যে দলীয় প্রার্থী ৬৭১ জন।
দলীয় প্রার্থীদের আওয়ামী লীগের ২৩১ জন, বিএনপির ২২৪ জন ও জাতীয় পার্টির ৮৫ জন রয়েছেন।
কাউন্সিলরদের একীভূত ‘সঠিক’ পরিসংখ্যানও করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী রয়েছে সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে।
মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রার্থীদের সঠিক পরিসংখ্যান দিতে সমস্যা হবে না এমন আশা প্রকাশ করে সামসুল আলম বলেন, “সোমবার সঠিক তথ্য দেওয়া সম্ভব হবে।”
১৪ ডিসেম্বর থেকে প্রতীক নিয়ে প্রচারে নামবেন প্রার্থীরা। ভোট হবে ৩০ ডিসেম্বর।