খোলা বাজার২৪,রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫: সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে। মধ্য কলকাতার হো চি মিন সরণির ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশনস (আইসিসিআর) ভবন নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা। ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি আসবেন সেখানে। উদ্বোধন করবেন বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের সম্প্রতি আঁকা ছবি নিয়ে আয়োজিত একক চিত্র প্রদর্শনী ‘শান্ত’র।
সন্ধ্যা সোয়া ছয়টায় রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি উপস্থিত হলেন আইসিসিআরে। শুনিয়ে গেলেন ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ, ৭ মার্চের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের নানা কথা। বললেন বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে থাকা গভীর সম্পর্কের কথা। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করলেন তিনি।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ সম্পর্কে রাষ্ট্রপতি বললেন, সৃজনশীল মনের এক শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ। আজ তাঁর নাম ও যশ ছড়িয়ে পড়েছে গোটা বিশ্বে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাঁর আঁকা ছবিতে ফুটে উঠেছে মুক্তিযুদ্ধের নানা দিক। কলকাতার ছবিপ্রেমীদের প্রদর্শনী দেখার আমন্ত্রণ জানিয়ে প্রদর্শনীর সফলতা কামনা করেন তিনি। এর আগে তিনি প্রদীপ জ্বালিয়ে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন।
আইসিসিআর ভবনের বেঙ্গল গ্যালারিতে আজ শনিবার থেকে শুরু হওয়া এই চিত্র প্রদর্শনী চলবে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত। প্রদর্শনীতে স্থান পেয়েছে শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা ৪০টি ছবি। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল কেশরীনাথও উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, পৃথিবী আজ অশান্ত। চিত্রকলাই পারে এই অশান্তি দূর করে শান্তির বাতাবরণ তৈরি করতে। পরে শিল্পী তাঁর আঁকা রাষ্ট্রপতির একটি প্রতিকৃতি তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ বহু বছর ধরে ফ্রান্সে অবস্থান করছেন। এই প্রথিতযশা শিল্পী গত বৃহস্পতিবার রাতে কলকাতার গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারিতে কলকাতার চিত্রশিল্পীদের সঙ্গে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যোগ দেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলকাতার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পীসহ প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষও। শাহাবুদ্দিন আহমেদ সর্বশেষ কলকাতায় এসেছিলেন ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদের আঁকা ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির প্রতিকৃতি। সেই প্রতিকৃতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব, শিল্পী শাহাবুদ্দিন ও বিশিষ্টজনরা। ছবি: ভাস্কর মুখার্জিশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘৪১ বছর ধরে ফ্রান্সে আছি। কিন্তু মন পড়ে থাকে আমার জন্মভিটে বাংলাদেশেই। কলকাতার এই চিত্র প্রদর্শনীর পর আমি দেশে যাব।’
ফ্রান্সের জঙ্গি হামলার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সে এক বীভৎস দৃশ্য! ভাবতেই পারছি না এমন একটা হামলা হতে পারে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে। প্যারিস বিশ্বের চিত্রশিল্পীদের শহর। ভাবছিলাম, প্যারিসেও এ ধরনের হামলা হতে পারে?’ প্রথম আলোর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফ্রান্সে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা ভালো আছেন। এখন পর্যন্ত তাদের ওপর কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এ ধরনের কাপুরুষোচিত সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, কোনো শিল্পী এই ধরনের ন্যক্কারজনক হামলার নিন্দা না করে পারেন না।
প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা গৌতম ঘোষ প্রথম আলোকে বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন আহমেদ আমাদের বাঙালির গর্ব। তাঁর আঁকা ছবির মধ্য দিয়ে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন।’
গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির কর্ণধার স্মিতা বাজোরিয়া বলেন, ‘শাহাবুদ্দিন আহমেদ এক উচ্চ মাত্রার চিত্রশিল্পী। ২২ বছর আগে ভারতে এই শিল্পীর প্রথম চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয়েছিল এই গ্যাঞ্জেস আর্ট গ্যালারির মাধ্যমে। আমাদের আর্ট গ্যালারিতেও প্রদর্শনী হবে। চলবে ১৫ ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত। এরপর আমরা এই প্রদর্শনী ঢাকার শিল্পকলা একাডেমীতে করতে যোগাযোগ করেছি ঢাকার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।
