Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

49খোলা বাজার২৪,রবিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৫: রাজনীতিবিষয়ক যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী আন্ডার সেক্রেটারি টম শেনন বলেছেন, শান্তিপূর্ণ ও উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় জাতীয় বিতর্কের পথ সুগম হলেই বাংলাদেশসহ যে কোনো দেশের সম্ভাবনার পরিপূর্ণ বিকাশ হবে।
টম শেনন আজ রোববার দুই দিনের সফরে ঢাকায় এসে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কবিষয়ক এক সেমিনারে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতা ও শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেন। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বি আইআইএসএস) সংস্থার মিলনায়তনে এ সেমিনারের আয়োজন করা হয়। বি আইআইএসএসের পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মুন্সি ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন পররাষ্ট্রসচিব মো. শহীদুল হক। স্বাগত বক্তব্য দেন সংস্থার মহাপরিচালক মেজর জেনারেল এ কে এম আবদুর রহমান ।

টম শেনন তাঁর বক্তৃতার শুরুতে একাত্তরের ডিসেম্বরে স্বাধীনতার পরপরই সিনেটর কেনেডির ঢাকা সফরের প্রসঙ্গ টানেন । তিনি বলেন, ‘সিনেটর কেনেডি ওই সময় একটি জরুরী, সরল এবং আন্তরিক বার্তা পৌঁছে দেন, “আমি এখানে বলতে এসেছি যে, আমেরিকা বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেয় ।” তাঁর এই কালোত্তীর্ণ বার্তার সঙ্গে আমি শুধু যোগ করতে চাই বাংলাদেশ গুরুত্ব বহন করে ।’ তিনি বলেন, এ মাসের শেষে পৌর নির্বাচন হতে যাচ্ছে । আশা করছি, গণতন্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের প্রতিশ্র“তিকে আবারও নিশ্চিত করতে প্রত্যেকেই এই সুযোগের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার করতে চাইবেন । প্রত্যেকটি দেশ, সেটি যুক্তরাষ্ট্র হোক বা বাংলাদেশ তাদের সম্পূর্ণ সম্ভাবনা তখনই অর্জিত হয়, যখন জাতীয় বিতর্ক একটি শান্তিপূর্ণ এবং উন্মুক্ত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আসে ।

মার্কিন এই জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, আমাদের মতো গণতান্ত্রিক সমাজগুলোতে জনগণকে সুরক্ষা দেওয়ার অর্থ হচ্ছে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ ও মত প্রকাশের মতো রাজনৈতিক এবং মৌলিক অধিকারগুলো চর্চা করার সুযোগ করে দেওয়া । সহনশীলতা, সবার অংশগ্রহণ ও গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা এবং মৌলিক স্বাধীনতার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত । আর এসব হলো একটি স্থিতিশীল সমাজের ভিত্তি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের মূলে আছে এসব মূল্যবোধ ।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের প্রশংসা করে মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি বলেন, এ দেশের পোশাক শিল্প অধিকাংশ উন্নয়নশীল দেশের কাছে ঈর্ষার । তাই একটি শক্তিশালী এবং সম্মানজনক ‘ব্র্যান্ড বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে শ্রমিকদের অধিকার এবং নিরাপত্তা সুরক্ষিত হয়। তিনি বলেন, আঞ্চলিক যোগাযোগের ক্ষেত্রেও অনেক দিন ধরে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে এবং দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার শীর্ষ অর্থনীতিতে পরিণত হতে পারে । এ দেশ হতে পারে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক শক্তি কেন্দ্র এবং দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পণ্য ও জনগণের চলাচলের কেন্দ্রবিন্দু । যুক্তরাষ্ট্র ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অর্থনৈতিক করিডোর উদ্যোগের মাধ্যমে এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে ।

টম শেনন বলেন, ‘আমরা এমন একটি অভিন্ন লক্ষ্যে কাজ করছি, যেটা হলো অন্তর্ভুক্তিমূলক, সমৃদ্ধ ও নিরাপদ বাংলাদেশের জন্য সমর্থন দেওয়া। সহিংস উগ্রপন্থীরা এই স্বপ্ন লালন করে না । তারা একটি বিভক্ত, দুর্বল এবং বিশৃঙ্খল বাংলাদেশ চায়। ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির শতবর্ষের ঐতিহ্যকে তারা বর্বরতা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে ধ্বংস করতে চায় । আমাদের দুই দেশের জন্য এই হুমকি রয়েছে এবং এটিকে হটাতে পরাজিত করতে আমরা এক সঙ্গে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ।’

দুই দেশের ভবিষ্যতের অগ্রাধিকারের কথা উল্লেখ করে পরবর্তী মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি জানান, দুই দেশ এমন একটি ভবিষ্যতের জন্য কাজ করবে যেখানে শিশুরা সুস্থভাবে ও শিক্ষিত হয়ে গড়ে উঠবে; নারীরা পুরুষের পাশাপাশি শেখার সমান সুযোগ পেয়ে শিখতে পারে, কাজ করতে পারে এবং সফল হতে পারে; নাগরিকেরা কোনো রকম ক্ষতির শিকার হবেন এমন ভয় থেকে মুক্ত হয়ে তাদের অধিকার ও স্বাধীনতার চর্চা করতে পারে; যেখানে বিভিন্ন ধর্মীয় ও জাতিগত গোষ্ঠীগুলো তাদের পরিচয় ছাড়াই এক সঙ্গে ও সম্প্রীতির সঙ্গে বাস করতে পারে।