খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫: দেশের কৃতী সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যাকারীদের বিচার হচ্ছে এবং বিচারের রায় কার্যকর হচ্ছে—এই স্বস্তি নিয়েই জাতি আজ শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করছে। দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে দেশবাসীর দাবি ছিল, বুদ্ধিজীবীদের খুনি ও গণহত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের বিচার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর গণহত্যায় জড়িত জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর হওয়ার মধ্য দিয়ে এই গণদাবি পূরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল।
বাঙালি জাতির জীবনে ১৪ ডিসেম্বর এক বেদনাঘন দিন। বাঙালিরা যেন মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে, সে জন্য তারা বেছে বেছে দেশের শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী, দার্শনিক, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, শিল্পী, সংগীতজ্ঞসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের নিষ্ঠুর নির্যাতন করে হত্যা করে। পাকিস্তানি ঘাতক সেনাবাহিনীকে এই হত্যাকাণ্ডে সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছিল তাদের এ দেশের সহযোগী রাজাকার-আলবদরের দল।
বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া খ্যাতিমান এই বুদ্ধিজীবীদের হাত-পা-চোখ বাঁধা মৃতদেহ পাওয়া গিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পরে রায়েরবাজারের ইটখোলা ও মিরপুরসহ বিভিন্ন বধ্যভূমিতে। নিখোঁজ হয়ে যাওয়া মানুষগুলোর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ পাওয়ার পর উন্মোচিত হয় বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা। বেদনা ও বিস্ময়ে স্তম্ভিত হয়ে পড়ে বিশ্ববিবেক।
বিজয় উৎসবের আগে এই দিনটিতে জাতি বরাবর গভীর বেদনার সঙ্গে স্মরণ করে আসছে স্বাধীনতার জন্য আত্মদানকারী শহীদ বুদ্ধিজীবীদের। মিরপুর ও রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে বরাবরের মতোই আজ সোমবার সকাল থেকে নামবে অগণিত মানুষের ঢল।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচি: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠান দিনভর বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে। সূর্যোদয়ের ক্ষণ থেকেই রায়েরবাজারের শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দিতে যাবে বিভিন্ন সংগঠন।
দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বেলা তিনটায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একই সময়ে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।
ভোর সোয়া ছয়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ভবনগুলোতে কালো পতাকা উত্তোলন, বুদ্ধিজীবীদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করা হবে।
দিবসটি উপলক্ষে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে ফুল দেওয়া শেষে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১ সকাল সোয়া ১০টায় পাকিস্তান কর্তৃক বাঙালি গণহত্যার দায় অস্বীকার করার প্রতিবাদে মানববন্ধন করবে। মানববন্ধন শেষে বেলা ১১টায় পাকিস্তান দূতাবাসে প্রতিবাদলিপি দেওয়ার জন্য দূতাবাসের দিকে রওনা হবে।
এ ছাড়া বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করবে বাংলাদেশ রুখে দাঁড়াও, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, গণজাগরণ মঞ্চ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, বঙ্গবন্ধু গবেষণা পরিষদ, ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) ভাসানী, জাতীয় জনতা পার্টিসহ বিভিন্ন সংগঠন।