খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫: রাজধানীর রায়েরবাজার বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক, পেশাজীবী, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি ও শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যরা।
যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেওয়ায় পাকিস্তানের সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন এবং যুদ্ধাপরাধী দল হিসেবে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি ছিল তাঁদের কণ্ঠে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ সোমবার সকাল সাড়ে সাতটা থেকে বধ্যভূমিতে নামে জনতার ঢল। শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গঠিত প্রজন্ম ‘৭১-এর সঙ্গে বধ্যভূমির স্মৃতিসৌধে আসেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই—যুদ্ধাপরাধীদের সম্পদ সফল রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার সরকার বাজেয়াপ্ত করবে এবং জামায়াতের রাজনীতি করার কোনো অধিকার থাকবে না। অচিরেই জামায়াতকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।’
পরে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিরুদ্ধে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদে একটি মানববন্ধন করে প্রজন্ম’৭১-এর সদস্যরা। সেখানে শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের ছেলে জাহীদ রেজা নূর ও তৌহীদ রেজা নূর, শহীদ ডা. আলীম চৌধুরীর মেয়ে ডা. নূজহাত চৌধুরী, শহীদ সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের ছেলে সুমন জাহিদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
ডা. নূজহাত চৌধুরী তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ‘আজকে ১৪ ডিসেম্বর অন্যরকম। কারণ আলবদর কমান্ডার মুজাহিদকে ফাঁসিকাষ্ঠে ঝুলতে দেখেছি। আমরা আশাবাদী বাকি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এ সরকার করবেন। তাদের যথাযোগ্য শাস্তি দেখতে পাব। শুধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচারই হচ্ছে না, নিজের অর্থায়নে আমরা পদ্মা সেতু করছি। তাই আজকের ১৪ ডিসেম্বর শুধু শোকের নয়, আমাদের অহংকারের।’
বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ চত্বরে মানববন্ধন করে সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম-মুক্তিযুদ্ধ ‘৭১। সেখানে ১৯৭১ সালে বাঙালির ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা ও বর্বরতার দায় অস্বীকার করে দেশটির সরকারের দেওয়া সাম্প্রতিক বিবৃতিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়।
শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন নৌপরিবহন মন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধী ১৯৫ জন পাকিস্তানিকে বিচার করবে বলে দেশটি নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা বিচার করে নাই ও আমাদের ন্যায্য হিস্যা দেয় নাই। আমরা এখন এই পর্যায়ে আন্দোলন শুরু করতে চাই, আমাদের ন্যায্য হিস্যা দিতে হবে। তারা আমাদের সম্পর্কে যে কটূক্তি করেছে, এর জন্য তাদের ক্ষমা চাইতে হবে।’
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন দলটির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সড়ক পরিবহনমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ ও দীপু মণি, কৃষি ও সমবায়বিষয়ক সম্পাদক খাদ্যমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমেদ হোসেন প্রমুখ।
পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন মাহবুব উল আলম হানিফ। পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালেই পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক ছেদ হয়ে গেছে। তাদের পরাস্ত করেই আমরা দেশ স্বাধীন করেছি। পাকিস্তান নিয়ে আমরা ভাবছি না। পাকিস্তান একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব। এই ব্যর্থ রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক থাকা না থাকা অর্থহীন।’
জামায়াত নিষিদ্ধের বিষয়ে হানিফ বলেন, ‘ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে জামায়াতের নিবন্ধন বাতিল হয়েছে। রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। শেখ হাসিনার ওপর আস্থা রাখুন। যুদ্ধাপরাধী, মৌলবাদী ও ধর্মান্ধ দল জামায়াতকে নিষিদ্ধ করে শেখ হাসিনা জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করবেন।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। তিনি বলেন, ‘যখন পাকিস্তানিরা বুঝে গিয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা মুহূর্তের ব্যাপার তখন তারা বেছে বেছে বুদ্ধিজীবীদের হত্যা শুরু করে, যেন বাংলাদেশ মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে। আজকে ২০১৫ সালে এসে তারা বলছে ১৯৭১ সালে তারা কোনো গণহত্যা চালায়নি। আমি মনে করি, এটা নির্জলা মিথ্যা। ১৯৭১ সালে তারা গণহত্যা চালিয়েছে। সে জন্য মনে করি—পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক রাখা উচিত নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট আজ অপরাহ্নে বসে পাকিস্তানের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পর্ক রাখার বিষয়ে পর্যালোচনা করবে।’
আরও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মুক্তিযোদ্ধা সুপ্রিম কমান্ড কাউন্সিল, আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন ছাত্রলীগ; বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি, শ্যামলী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসহ মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নানা সংগঠন ও রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বেলা বাড়ার সঙ্গে লোকে-লোকারণ্য হয়ে যায় স্মৃতিসৌধ এলাকা। ফুলে ফুলে ভরে যায় স্মৃতিসৌধের মূল বেদি।