খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫: একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে ‘ধৃষ্টতাপূর্ণ বক্তব্যের জন্য পাকিস্তানকে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় পাকিস্তানের হাই কমিশনে চিঠি দিয়েছে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
সোমবার দুপুরে চিঠিটি পৌঁছে দেন ফোরামের চেয়ারম্যান বীর উত্তম কে এম সফিউল্লাহ।
এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ফোরামের সদস্য সচিব হারুন হাবীব ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান মো. হারুন অর রশীদ।
এর আগে সকালে রায়েরবাজার বদ্ধভূমিতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে একটি মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
এরপর সেখানে থেকে ১৫টি গাড়ি নিয়ে গুলশানের কূটনৈতিক পাড়ার দিকে অগ্রসর হয় একটি মিছিল।
পথে বনানী খেলার মাঠের কাছে তাদের মিছিলের গাড়িবহর আটকে দেয় পুলিশ। সেখান থেকে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের প্রতিনিধিদলকে পাকিস্তান হাই কমিশনে পৌঁছে দেয় পুলিশ।
চিঠি দিয়ে ফেরার পর ফোরামের সদস্য সচিব হারুন হাবিব সাংবাদিকদের বলেন, “কূটনৈতিক এলাকা হওয়ায় পুলিশ মিছিল নিয়ে আমাদেরকে সামনে যেতে দেয়নি। তবে আমাদের একটি প্রতিনিধিদলকে সেখানে পৌঁছে দেয়।”
“আমরা হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারির হাতে চিঠিটি দিয়ে চলে এসেছি। সেখানে কারও সঙ্গেই আমাদের কথা হয়নি।”
চিঠিতে বলা হয়েছে, “আমরা দৃঢ়ভাবে মনে করি, বাংলাদশে চলমান যুদ্ধাপরাধ বিচারের ব্যাপারে আপনার সরকারের প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্য পুরোপুরি অযৌক্তিক এবং তা স্পষ্টভাবে বাংলাদশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষপে।
“বাংলাদশের যুদ্ধাপরাধ বিচার নিয়ে অনাকাক্সিক্ষত বিবৃতি প্রকাশ করায় আমরা মনে করি, ইতিহাসের ক্ষতকে মোছা নয়, বরং আপনার সরকার দুই দেশের মধ্যে দূরত্ব বাড়াতেই কবেল সাহায্য করছে।
“এই বিবৃতিতে কেবল ১৯৭১ এর নিষ্ঠুরতাকে অস্বীকার করা হয়নি, একইসঙ্গে গণহত্যার সত্যকে ইচ্ছাকৃতভাবে বিকৃত করা হয়েছে। সে কারণে আমরা বাংলাদশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে আপনার সরকাররে হস্তক্ষপকে পরিপূর্ণ নিন্দায় প্রত্যাখান করছি।”
মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়েগত ২২ নভেম্বর প্রথম প্রহরে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের মৃতুদণ্ড কার্যকরের পর এক বিবৃতিতে উদ্বেগ জানায় পাকিস্তান।
এর আগেও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ও যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াত নেতাদের সাজা নিয়ে পাকিস্তানের রাজনীতিকরা অসন্তোষ প্রকাশ করেন।
এসবের প্রতিক্রিয়ায় ২৩ নভেম্বর পাকিস্তানের হাই কমিশনারকে তলব করে কড়া ভাষায় লেখা প্রতিবাদলিপি তুলে দেয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর এক সপ্তাহ পর পাকিস্তানে বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করা হয়।
এ সংক্রান্ত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত হাই কমিশনারকে তলব করে জানানো হয়েছে, “২৩ নভেম্বর ২০১৫ তারিখে দেওয়া প্রতিবাদলিপিতে বাংলাদেশ সরকারের ভিত্তিহীন ও ধারণাপ্রসূত দাবিগুলো প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান সরকার।”
চিঠি দিতে যাওয়ার আগে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, “সাম্প্রতিক কটূক্তি করার জন্য ক্ষমা না চাওয়া পর্যন্ত আমি বলব যে পাকিস্তানের সঙ্গে আমাদের সব কূটনৈতিক সম্পর্ক বন্ধ করা উচিত।