Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

52খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫: ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে তৎপর ইসলামী জঙ্গিদের সঙ্গে যোগসাজশের তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা।

সম্প্রতি গোয়েন্দা পুলিশ কয়েকজন সন্দেহভাজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় এই তথ্য পায়। আটক সন্দেহভাজনদের একজন এই তথ্য দিয়ে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন।

পাকিস্তান হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) পদে কর্মরত ওই কর্মকর্তার নাম ফারিনা আরশাদ।

জঙ্গিদের অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে গত জানুয়ারিতে এ দূতাবাসেরই মাযহার খান নামের এক কর্মকর্তাকে বহিষ্কার করা হয়।

এদিকে একই দেশের বংশোদ্ভূত ইউরোপীয় একটি দেশের দূতাবাসের কনিষ্ঠ এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধেও বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে তৎপরতার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও এলাকা থেকে ইদ্রিস শেখ নামের এক ব্যক্তিসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।

তিনি জানান, আটকদের মধ্যে ইদ্রিস ও মকবুলের কাছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তাদের।

মনিরুল বলেন, “ইদ্রিসের কাছে একটি ‘স্পাই মোবাইল’ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করতেন। একটি হাই কমিশনের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।”

মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে ১৬৪ ধারায় দেওয়া জবানবন্দিতে ইদ্রিস ওই নারী কর্মকর্তাকে পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন।

বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করে সাড়া পাওয়া যায়নি।

জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়ে গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা মনিরুল সেদিন বলেন, ইদ্রিস ১৯৮৫ সালে ভারত হয়ে পাকিস্তান যান। ১৯৯০ সালে পাকিস্তানি এক নারীকে বিয়ে করে সেখানেই বসবাস শুরু করেন।

পরে ২০০২ সালে সে দেশে ‘পাক-মুসলিম অ্যালায়েন্স’ নামে একটি রাজনৈতিক দলের হয়ে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিয়ে পরাজিত হন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশে একাই ফেরত এসে জেএমবির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।

“ইদ্রিস গত দুই বছরে ৪৮ বার পাকিস্তান গেছেন বলে তার পাসপোর্ট থেকে জানা গেছে,” বলেন মনিরুল।

ইদ্রিস শেখ জবানবন্দিতে যে তথ্য দিয়েছেন, তাতে দেখা যায়, তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী থানায়। তার বাবার নাম মৃত কাওসার শেখ।

৪৯ বছর বয়য়ী ইদ্রিস নিজেকে ব্যবসায়ী বলে পরিচয় দেন হাকিমের কাছে।

পাকিস্তানি কূটনীতিক ফারিনা আরশাদের সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়ে ইদ্রিস বিচারককে বলেন, তিনি ২০০৭ সালে স্থায়ীভাবে ঢাকায় চলে এসে প্রথমে কাপড়ের ব্যবসা শুরু করেন। ২০১২ সালের পরে এয়ার টিকেটিং ও ভিসা প্রসেসিংয়ের ব্যবসার সময় বাবুল এবং পরে তার মাধ্যমে কামাল নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কামাল তার কাছে নিজেকে ‘পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোক’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।

ঘনঘন টিকেট করিয়ে দেওয়ার কারণে বাবুলের কাছে তার অনেক টাকা বাকি পড়ে। এক পর্যায়ে বাবুল পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ফারিনা আরশাদের মোবাইল নাম্বার দেন। বাবুলের মাধ্যমেই মূলত ফারিনার সঙ্গে পরিচয় হয় বলে জবানবন্দিতে জানান ইদ্রিস।

তিনি বিচারককে আরও বলেন, ফারিনার সঙ্গে পরিচয়ের কিছুদিন পরই ঢাকা বিমানবন্দরে জাল ভারতীয় রুপিসহ ধরা পড়েন এক ব্যক্তি। পরে বাবুলের কাছে তিনি জানতে পারেন- ওই ব্যক্তি ফারিনার কারণেই ফেঁসে গেছেন।

ইদ্রিস জানান, তিনি প্রথমে শাহনাজ বেগম নামে পাকিস্তানের এক স্কুল শিক্ষককে বিয়ে করেছিলেন। ওই ঘরে মোহাম্মদ আদিল নামে এক ছেলে রয়েছে তার। পরে দেশে ফিরে ২০০০ সালে বাংলাদেশে তার পাশের গ্রামের মনোয়ারা বেগমকে বিয়ে করেন। এই সংসারে তার এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে।

সরকারি সূত্রগুলো বলছে, ইদ্রিস শেখকে উত্তরা থেকে আটকের পর তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় পরিচয় দেন।

ইদ্রিস এর আগেও গ্রেপ্তার হয়েছিলেন বলে সরকারি সূত্রের তথ্য। ২০১১ সালের ১ মে ইদ্রিসকে এক শীর্ষ জঙ্গির বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। সে সময় তার কাছ থেকে ৪৭টি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়; বিমানবন্দর থানায় একটি মামলাও হয়।

এবার গ্রেপ্তার হওয়ার পর হাকিমকে দেওয়া জবানবন্দিতে ইদ্রিস বলেন, একবার ৩০ হাজার টাকা দিতে এসে ফারিনা একটি ম্যাজেন্টা রংয়ের গাড়ি নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে তাকে ফকিরাপুলে নামিয়ে দেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ইদ্রিসের মোবাইল ফোনে নিজের নম্বর হিসেবে একটি বিদেশি নম্বর সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই নম্বরটি ক্যাপ্টেন অসীম নামের এক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তার। ওই পাকিস্তানি গোয়েন্দা দেশটির একটি বিমানবন্দরে ছদ্মবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত।

ইদ্রিসের মোবাইল ফোনে অপরপ্রান্তের কথা রেকর্ড করারও সুবিধা রয়েছে বলে ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান।