Thu. Mar 13th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

64খোলা বাজার২৪, সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৫: একাধিক রাজ্যে বছরভর গণধর্ষিতা আয়েশা (নাম পরিবর্তিত)-র শুশ্রূষা ও নিরাপত্তায় গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে গুরু তেগবাহাদুর হাসপাতাল ও দিল্লি পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বার ডায়মন্ড হারবারের ওই কিশোরীকে পাচার ও গণধর্ষণের ঘটনায় বাংলার পুলিশ এবং সিআইডি-কেও কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিল মেয়েটির পরিবার। আয়েশার মায়ের অভিযোগ, রাজ্যের পুলিশ আর গোয়েন্দারা যথাসময়ে উদ্ধারের সক্রিয় চেষ্টা চালালে তাঁর মেয়ের হয়তো এই সর্বনাশ হতো না।

গত মঙ্গলবার আয়েশাকে দিল্লির তেগবাহাদুর হাসপাতালে ফেলে পালায় পাচারকারীরা। টানা ধর্ষণের জেরে মেয়েটির নিম্নাঙ্গ অসাড় হয়ে গিয়েছে। মারাত্মক সংক্রমণ ছড়িয়েছে গোপনাঙ্গে। ওই অবস্থায় তিন দিন হাসপাতালের শয্যায় কার্যত বিনা চিকিৎসায় পড়ে ছিল আয়েশা। পরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে দেখে মেয়েটির কাছ থেকে ফোন নম্বর জেনে হাসপাতালের চিকিৎসকেরা খবর পাঠান ডায়মন্ড হারবারে তার দিদির কাছে। বোনকে পাওয়া গিয়েছে জেনে বৃহস্পতিবারেই দিল্লি রওনা হন আয়েশার দাদা। এর মধ্যে রক্ত পরীক্ষা করে জানা যায়, মেয়েটির শরীরে এইচআইভি ভাইরাস বাসা বেঁধেছে। পাচার ও ধর্ষণে জড়িত অভিযোগে ধৃত আসলাম ওরফে জব্বার জানায়, সে এইচআইভি-তে আক্রান্ত। ঘটনাটি নিয়ে দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ইতিমধ্যে ওই নির্যাতিতার দেখভালের দায়িত্ব নিয়েছে দিল্লি মহিলা কমিশন।

আয়েশার খোঁজ পেলেও তার এই অবস্থার জন্য রবিবার রাজ্য পুলিশ ও সিআইডি-কে দায়ী করেছে মেয়েটির পরিবার। বছরখানেক আগে স্কুল থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয়ে যায় আয়েশা। কিছু দিন পরে সে মোবাইল থেকে বাড়িতে ফোন করে সব জানায়। পরিবারের অভিযোগ, ওই ফোন নম্বরটি পুলিশকে দেওয়া হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বাংলার পুলিশ তাকে উদ্ধার করতে উদ্যোগী হয়নি। আয়েশার মা এ দিন বলেন, ‘‘কয়েক মাস আগে, মেয়ের ফোন আসার পরেও যদি পুলিশ উদ্যোগী হতো, তা হলে মেয়ের এই দশা হতো না!’’

আয়েশা উদ্ধারে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে সিআইডি-র ‘অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট’ (এএইচটিইউ) বা মানুষ পাচার রোধ শাখার বিরুদ্ধেও। অভিযোগ, পাচার রোধ ও পাচার হয়ে যাওয়া নাবালক বা নাবালিকাকে উদ্ধার এবং তদন্তের জন্য প্রতিটি রাজ্যে এই ধরনের ইউনিট গড়া হয়েছে। অথচ আয়েশার অন্তর্ধানের কথা তার পরিবার প্রথমে মগরাহাট থানা এবং পরে ডায়মন্ড হারবার থানাকে জানানো সত্ত্বেও মামলাটি ওই ইউনিটের হাতে যায়নি।–আনন্দবাজার।

আয়েশার মায়ের অভিযোগ, ৮ ডিসেম্বর মেয়ের অন্তর্ধানের পরে স্থানীয় মগরাহাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। কিন্তু মেয়ের কোনও খোঁজই দিতে পারেনি তারা। কয়েক দিন পরে ফের মগরাহাট থানায় গেলে পুলিশ তাঁদের সোজা ডায়মন্ড হারবার থানা দেখিয়ে দেয়। তাঁরা তখন ডায়মন্ড হারবার থানায় যান। ওই থানার পুলিশও তাঁর মেয়েকে উদ্ধারের জন্য সক্রিয় ভাবে উদ্যোগী হয়নি, অভিযোগ আয়েশার মায়ের।
কী বলছে জেলা পুলিশ?

‘‘আমাদের তরফে কোনও গাফিলতি হয়নি। নিয়ম মেনেই মামলা রুজু করা হয়েছিল,’’ এ দিন বলেন দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার পুলিশ সুপার সুনীল চৌধুরী সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশিকা অনুযায়ী কোনও নিখোঁজ নাবালিকাকে তিন মাসের মধ্যে উদ্ধার করতে না-পারলে তো সিআইডি এবং তাদের অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিট বা তাদের জেলা শাখাকে সেটা জানাতে হয়। জেলা পুলিশ কি জানিয়েছিল? পুলিশ সুপার বলেন, ‘‘এই ধরনের কোনও নির্দেশিকার কথা আমি জানি না।’’

আয়েশা-মামলায় জেলা পুলিশ তাদের ত্রুটির কথা না-মানলেও এই তদন্তে যে গাফিলতি হয়েছেই, তা স্বীকার করছেন সিআইডি-র কিছু কর্তা। সিআইডি সূত্রের খবর, সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ১৮ বছরের কম বয়সি কোনও ছেলে বা মেয়ে নিখোঁজ হলে সেই বিষয়ে এফআইআর নিতে হবে এবং সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু করে দিতে হবে তদন্ত। কিন্তু আয়েশার ক্ষেত্রে তা করা হয়নি। শুধু তা-ই নয়, এর পরের ধাপেও (যেখানে অ্যান্টি হিউম্যান ট্রাফিকিং ইউনিটকে খবর দেওয়ার কথা বলা হয়েছে) অমান্য করা হয়েছে সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশ।

এক সিআইডি-কর্তা স্বীকার করেন, সংবাদমাধ্যমে প্রকাশের আগে পর্যন্ত আয়েশার নিখোঁজ হওয়ার কোনও খবরই তাঁদের কাছে ছিল না। কয়েক মাস আগে দিল্লি থেকে আয়েশা বাড়িতে ফোন করে তাকে উদ্ধার করতে বলেছিল। মোবাইল ফোনের সেই নম্বর আয়েশার পরিবার তুলে দেয় ডায়মন্ড হারবার থানার হাতে। নম্বর ট্র্যাক করে ডায়মন্ড হারবার থানার পুলিশ দিল্লি গিয়ে তাকে খুঁজে না-পেয়ে খালি হাতে ফিরে আসে। কিন্তু থানার পুলিশ তার পরেও সিআইডি-কে কিছু জানায়নি। সব মিলিয়ে গত এক বছর ধরে এ রাজ্যের থানা-পুলিশের গাফিলতিই আয়েশাকে এই শোচনীয় পরিণতিতে পৌঁছে দিয়েছে বলে সিআইডি-র ওই কর্তার অভিযোগ।