Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

37খোলা বাজার২৪,বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫: পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে টানাপড়েনের ইতিহাস মাথায় রেখেই নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মাণের কাজ শুরুর বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশ্ব ব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ কৌশিক বসু।

তিনি বলেছেন, “এটা আমরা সবাই জানি, ইট ইজ নট গুড হিস্ট্রি। এখন যেটা হচ্ছে সেটাকে আমরা স্বাগত জানাই। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, অনেক সময় ব্যাড হিস্ট্রি থেকে গুড নিউজ সৃষ্টি হয়।”

ঢাকা সফরের শেষ দিন মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন কৌশিক বসু।

২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারে ৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্ব ব্যাংকের। তারা প্রকল্পে ‘দুর্নীতির ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুললে দীর্ঘ জটিলতার পর বাংলাদেশ সরকার ওই অর্থায়ন ফিরিয়ে দিয়ে নিজেদের অর্থে প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করে।

গত ১২ ডিসেম্বর সেতুর মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “অনেকের ধারণা ছিল, কোনও কাজ করতে হলে কারও কাছে হাত পাততে হবে। এই মানসিকতা আমাদের পেয়ে বসেছিল। অন্যের সাহায্য ছাড়া কিছু করতে পারব না। অমুককে ধরেন- টাকা পাবৃঅমুককে অনুরোধ করেন- টাকা পাব।

“আমি বলেছিলাম, এটা বন্ধ করেন। আমরা কারও টাকা নেব না। নিজেদের টাকাতেই করব।”

সংবাদ সম্মেলনে পদ্মা সেতু নিয়ে প্রশ্নের জবাবে বিশ্ব ব্যাংকের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট কৌশিক বসু বলেন, “পদ্মা সেতু, যেটা সরকার এখন নিজস্ব অর্থে নির্মাণকরছেৃএইতো কাল না পরশু প্রধানমন্ত্রী এর মূল কাজ উদ্বোধন করলেন। সেটা একটা বিরাট সুখবর। এ কাজকে আমরা অবশ্যই স্বাগত জানাই।”
কলকাতায় বড় হওয়া কৌশিক বাংলাদেশকে দেখছেন এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগার’ হিসেবে। তিনি বলেছেন, ১৯৫০ সালে হংকং-সিঙ্গাপুরকেও ‘এশিয়ার টাইগার’ বলা হতো না। কিন্তু তারা এখন সেই জায়গায় চলে গেছে।

“বাংলাদেশের খুবই সম্ভাবনা আছে। অনেক দ্রুত বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ ইজ আ নিউ এশিয়ান টাইগার ইন দ্যা ওয়ার্ল্ড।

বাংলাদেশ ব্যাংকের আমন্ত্রণে চার দিনের সফরে ১২ ডিসেম্বর ঢাকায় আসার পর থেকে যতবারই গণমাধ্যমের সামনে এসেছেন, বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রশংসা করেছেন বিশ্ব ব্যাংকের এই কর্মকর্তা।

“গত ৩-৪ দিন আমি বাংলাদেশে ঘুরে দেখেছি। অনেকের সঙ্গে আলাপ করেছি, সরেজমিন ঘুরে দেখেছি। চারদিকে ঘুরে দেখেছি। আসলে স্ট্যাটিসটিকালি বাংলাদেশ যতটুকু এগিয়েছে দেখা যাচ্ছে, বাস্তবপক্ষে তার চেয়ে অনেক বেশি এগিয়েছে।”

কৌশিক বসু জানান, ঢাকার বাইরে একটি পোশাক কারখানা তিনি পরিদর্শন করেছেন। অনেক উন্নত দেশের কারখানায় যেভাবে কাজ হচ্ছে সেভাবেই এখানে কাজ চলতে দেখেছেন তিনি।

বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “এ ঘটনার মধ্য দিয়ে নতুন অংশীদার সৃষ্টি হয়েছে। অবকাঠামোসহ অন্যান্য খাতের উন্নয়নে বাংলাদেশের সঙ্গে বিশ্ব ব্যাংক একসঙ্গে কাজ করবে।”
বাংলাদেশ ‘চড়চড় করে’ এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে কৌশিক বসু বলেন, “আমি সবসময় আশাবাদী মানুষ নই। আমি জানি, বাংলাদেশের অনেক অর্থনীতিবিদ-বিশ্লেষকরাও অর্থনীতির সমালোচনা করে থাকেন। সেটা ভালো। কিন্তু এখন বাংলাদেশ যে জায়গায় চলে এসেছে তাতে সবাইকে কনফিডেন্স রাখতে হবে।”

লন্ডন স্কুল অব ইকোনোমিকসে অর্থনীতি শেখা এই বাঙালির মূল্যায়ন, ১০ বছর আগে যে বাংলাদেশ ছিল- তা এখন নেই।

“সাড়ে ৬ শতাংশের ওপর প্রবৃদ্ধি পৃথিবীর কম দেশেই অর্জিত হয়েছে। রপ্তানি আয় ও রেমিটেন্স বেড়েছে, এইতো কালকে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ আবার ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে।”

বাংলাদেশের দুর্বল দিক কোনটি- এ প্রশ্নে কৌশিক বসু বলেন, “অবকাঠামো এবং আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বাংলাদেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক রাস্তাঘাট হচ্ছে, এদিকে আরও মনোযোগ দিতে হবে। আমলাতান্ত্রিক জটিলতা নিরসনেও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানও সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।