Fri. Mar 14th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

48খোলা বাজার২৪,বুধবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৫: ২৮ বলে ৩৯ করে ফাইনালের নায়ক হয়ে গেছেন অলক কাপালি। ৩৭ বলে ৫৩ রান করে ‘অচেনা’ ইমরুল কায়েস গড়ে দিয়েছেন জয়ের ভিত্তি। রোমাঞ্চকর ফাইনালটি জমিয়ে তুলেছে বরিশাল বুলসের পুঁজি। তাতে ৪৮ ও ৪৪ রানের জোগান দিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ ও শাহরিয়ার নাফীস।
গতকাল বিপিএলের তৃতীয় আসরের ফাইনালটির সব কেন্দ্রীয় চরিত্রে বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাই। যে লড়াইয়ে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন কুমিল্লা হলো বটে, কিন্তু এবারের বিপিএলের সামগ্রিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় বিজয়ী বাংলাদেশ। বাংলাদেশের ক্রিকেটই।

ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদি, তিলকারতেœ দিলশানের মতো টি-টোয়েন্টির বড় আন্তর্জাতিক তারকারা খেলেছেন। খেলেছেন দুর্দান্ত ফর্মে থেকে অবসর নেওয়া কুমার সাঙ্গাকারাও। আন্তর্জাতিক তারকাদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আলো ছড়িয়েছেন বাংলাদেশের ক্রিকেটাররাও।

বিপি​এলের শুরুর দিকে বিদেশি খেলোয়াড়রাই দাপ​ট দেখিয়েছে। কিন্তু শেষ অঙ্কে এসে দেখা যাচ্ছে, এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ রান করেছেন এমন চারজনের তিনজনেরই বাংলাদেশের। ১০ ইনিংসে ৩৪৯ রান নিয়ে শীর্ষে সাঙ্গাকারা। এবারের টুর্নামেন্টে তিন শর বেশি রান আর একজনেরই ব্যাটে আছে। অনেককেই চমকে দিয়ে সেই নামটি ইমরুলের। প্রথম দুই ম্যাচেই দুটো শূন্য। সব মিলিয়ে শূন্য তিন ইনিংসে। তার পরও সেই ইমরুলে ১২ ইনিংসে করেছেন ৩১২ রান। ‘সেমিফাইনাল’ আর ফাইনালে খেলেছেন ৬৭ রানের ইনিংস। ফাইনালে ৫৩। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুটো ম্যাচেই কুমিল্লাকে জিতিয়েছেন অনেকের চোখে টি-টোয়েন্টিতে অচল এই বাঁ হাতি ওপেনার।

খোদ জাতীয় দলের হয়েই টি-টোয়েন্টি খেলছেন চার বছর ব্রাত্য থাকার পর।

৩০০ রান হয়তো থাকত তামিম ইকবালের নামের পাশেও। ৯ ইনিংসে ২৯৮ রান করেছেন। গ্রুপ পর্বে এক ম্যাচে খেলেননি এবারের বিপিএলে একমাত্র ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনটি ফিফটি করা তামিম। সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহকের তালিকায় চারে আছেন ১২ ইনিংসে ২৭৯ রান করা মাহমুদউল্লাহ।

আবু হায়দার, বিপিএলে বাংলাদেশের ক্রিকেটের বড় পাওয়া। ছবি: প্রথম আলোএবারের বিপিএলে চার-ছক্কার খরা ছিল। বিপিএলে সর্বোচ্চ ১২টি ছক্কা মেরেছেন গেইল। ১০টি ছক্কা নিয়ে দুইয়ে আছেন ইমরুল। শুধু তা-ই নয়। ইমরুলের ব্যাটে এসেছে ৩২টি চারও। চার মারায় ইমরুলের ওপরে আছেন কেবল সাঙ্গাকারা (৩৫টি)। ইমরুল যেন বার্তা দিতে চেয়েছেন, ‘আমি শুধু টেস্ট ব্যাটসম্যান নই।’

তৃতীয় সর্বোচ্চ নয়টি ছক্কা মেরেছেন তামিম ও নাসির হোসেন। তামিমের ব্যাটে ছিল ২৯টি চারও। ব্যাটিংয়ে ‘টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যান’ ইমরুলকে আবিষ্কার করা এবারের বিপিএলে বড় প্রাপ্তি। বোলিংয়ে যেমন বড় পাওয়া আবু হায়দার নামের এক উঠতি তরুণ পেসারের মধ্যে আগামীর সম্ভাবনার ছবি দেখা।

ফাইনালটা উইকেটশূন্য গেছে। না হলে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি হতেন এই পেসারই। কেভন কুপারের ২২ উইকেট। হায়দারের ২১টি। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৮ উইকেট নিয়ে ব্যাটিংয়ের শূন্যতা মোছার চেষ্টা করেছেন সাকিব আল হাসান। তৃতীয় সর্বোচ্চ ১৭ উইকেট গত জিম্বাবুয়ে সিরিজে ফিরে নিজেকে প্রমাণ করা আল আমিনের। টুর্নামেন্টের একমাত্র হ্যাটট্রিকটিও তাঁর। মোশাররফ হোসেন ও আরাফাত সানি নিয়েছেন ১৬টি করে উইকেট।

মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট নিয়েছিলেন। প্রথম শিকারই ছিল সাঙ্গাকারা। ১২ ম্যাচের দশটিতেই উইকেট নিয়েছেন—এতটাই আশ্চর্য ধারাবাহিক ছিলেন এই ১৯ বছর বয়সী। টুর্নামেন্টের সবচেয়ে স্মরণীয় ছবিগুলোর একটি হয়ে আছে আবু হায়দারের ইয়র্কার সামলাতে না পেরে লেন্ডল সিমন্সের ভূপাতিত হওয়া। বাঁ হাতি পেসার, বেশ ভালো গতি, দুর্দান্ত ইয়র্কার, ক্যাচ মি ইফ ইউ ক্যান-এর উদযাপন, আক্রমণাত্মক শরীরী ভাষা—সব মিলিয়ে যেন প্যাকেজ। নিজেকে আরও শানিয়ে নিতে পারলে বাংলাদেশের ক্রিকেটে মুস্তাফিজের পর আরেকটি সম্পদ হতে পারেন আবু হায়দার।