Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

32খোলা বাজার২৪,বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫: আজ থেকে ঠিক পাঁচ বছর আগের কথা। তিউনিসিয়ায় এক যুবক নিজের গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছিলেন। প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন পুলিশের দুর্নীতির। সে আগুন ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা তিউনিসিয়ায়, আরব বিশ্বের অনেক দেশে। এনেছিল ‘আরব বসন্ত’। সেই বসন্তের অগ্নিশিখা আরব বিশ্বের সব মানুষের মনে যে আশা-আকাক্সক্ষার আলো জ্বেলেছিল, তা কি আজও দীপ্যমান?

২০১০ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিউনিসিয়ার সিদি বাওজিদ এলাকার ফুটপাতের সবজিবিক্রেতা বাওয়াজিজি আত্মাহুতি দেন। ২৬ বছর বয়সী এই যুবকের আত্মাহুতির খবর দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। তিউনিসিয়ার মানুষ শুরু করেন আন্দোলন। তীব্র আন্দোলনের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হন দেশটির প্রেসিডেন্ট জয়নাল আবেদিন বেন আলী। দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা বেন আলীর শাসনামলের ইতি ঘটে। তিউনিসিয়ার বিপ্লবে উদ্বুদ্ধ হয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতাসীন থাকা শাসকদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে বাহরাইন, মিসর, লিবিয়া, সিরিয়া ও ইয়েমেনে। এই ‘আরব বসন্ত’ কয়েকটি দেশের শাসকদের ক্ষমতাচ্যুত করতে সক্ষম হয়।

বাওয়াজিজির আত্মত্যাগের পাঁচ বছর পর এসে সংগত কারণেই প্রশ্ন উঠেছে, কী পেয়েছে তিউনিসিয়া?

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজেছে আল-জাজিরা। এক প্রতিবেদনে তারা বলছে, বেন আলীর পতনের পর নতুন একটি সংবিধান পেয়েছে তিউনিসিয়া। ২০১৪ সালে দেশটিতে জাতীয় নির্বাচন হয়েছে। দেশটিকে গণতন্ত্রের পথে নিয়ে যেতে অবদান রাখার স্বীকৃতি হিসেবে এ বছর শান্তিতে নোবেল পেয়েছে ‘ন্যাশনাল ডায়ালগ কোয়ার্টেট’। আর সাধারণ মানুষ? তারা চরমভাবে হতাশ হয়েছে বলেই প্রতিবেদনটিতে বলা হচ্ছে।

যে স্থানটি থেকে আরব বসন্তের সূচনা, সেই সিদি বাওজিদের বাসিন্দা ও আন্দোলনকারী রামজি আবদৌলি হতাশ গলায় বলেন, ‘আমরা স্বপ্ন দেখেছিলাম। ভেবেছিলাম, বেন আলীর পতনের পর আমাদের বাস্তবিক অর্থে অনেক পরিবর্তন হবে। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তা হয়নি।’ শুধু আবদৌলিই নন, এমন হতাশার কথা জানালেন সিদি বাওজিদের বেশির ভাগ বাসিন্দা। তাঁদের বক্তব্য, জীবন আগে যেমন ছিল, এখনো তেমনই আছে। প্রত্যাশিত কোনো পরিবর্তন আসেনি তাঁদের জীবনে।

আন্দোলনের সময় কর্মসংস্থানের দাবিটি বেশ জোরালো ছিল। তবে বর্তমানে দেশটিতে বেকারত্বের হার অনেক বেশি। দেশটির জাতীয় পরিসংখ্যান কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০১৪ সালে বেকারত্বের হার ছিল ১৬ শতাংশ। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে ধারণা করা হয়। কাজ না পেয়ে নিজেদের বঞ্চিত ভাবছেন দেশটির তরুণেরা। ২৯ বছর বয়সী রামজি আবদৌলি বলেন, ‘সিদি বাওজিদের যুবকেরা বঞ্চিত, উপেক্ষিত ও কোণঠাসা। সামাজিক ন্যায়বিচার ও উন্নয়নের যে দাবি আমরা করেছিলাম, তা উপেক্ষা করা হয়েছে।’

১ কোটি ২০ লাখ মানুষের দেশটিতে বেকারত্বই এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় সমস্যা। এই সমস্যা থেকেই সন্ত্রাস-দুর্নীতির মতো বড় ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থ-বিষয়ক উপদেষ্টা সেলিম বাওহলাল বলেন, অতীতের প্রত্যাশা ও বর্তমানের হতাশা আসলে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার জটিলতায় হাবুডুবু। অল্প সময়ের উত্থান-পতনের মধ্যেই এটি চলতে থাকে। তিনি মনে করেন, শুধু আইনের শাসন দিয়ে এই হতাশা দূর করা যাবে না; সঙ্গে প্রয়োজন অর্থনৈতিক উন্নয়ন। তিউনিসিয়ার অর্থনীতি যতদিন নাজুক থাকবে, মানুষ ততদিন ক্ষুধার্ত ও ক্ষুব্ধ হতে থাকবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পড়াশোনার পরও চাকরি না পাওয়ার হতাশার কথা জানিয়ে আবদৌলি বলেন, শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী দেশটিতে চাকরির সুযোগ নেই। এই নিয়ে না ভেবে সরকারগুলো নিজেদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে ব্যস্ত। চরম দারিদ্র্যের কারণে অনেক যুবকই দেশ ছেড়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছেন, যোগ দিচ্ছেন জঙ্গিগোষ্ঠী ইসলামিক স্টেটে (আইএস)। তাঁর নিজের কিছু বন্ধুও এই দলে নাম লিখিয়েছে। এটি স্রেফ তারুণ্যের অপচয় বলে মন্তব্য করলেন তিনি।

সিদি বাওজিদের জিয়াদ আতিয়া নামের ২৩ বছর বয়সী এক সাংবাদিক বললেন, ধনীদের স্বার্থে দেশটির সাধারণ নাগরিকদের ব্যবহার করা হয়। স্বার্থ উদ্ধার হয়ে গেলে এসব সাধারণ মানুষকে ছুড়ে ফেলা হয়। তাঁরা হয়ে পড়েন কোণঠাসা, তাঁদের কথা ভুলে যাওয়া হয়। ২০১৪ সালে নতুন সরকার ক্ষমতায় এসে এমনটি করছে বলেই তিনি মনে করেন। এভাবেই হয়তো একদিন সব নীরব হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা তাঁর।

তবে আশাবাদী হতে চান আবদৌলি। তিনি সৎ উদ্দেশ্যসম্পন্ন রাজনীতিবিদ চান। তিনি চান, সিদি বাওজিদকে প্রাধান্য দেওয়া হোক। কারণ, তাঁর বিশ্বাস তিউনিসিয়ার ভবিষ্যৎ ওই অঞ্চলেই নিহিত।