Tue. Aug 12th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

7খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে মন্ত্রী-সাংসদ ও প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানালেও অন্তত ৮-১০টি এলাকায় তা উপেক্ষিত হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনের মনিটরিং কমিটি জানতে পেরেছে।

গণমাধ্যমের প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের এসব তথ্য পেয়েছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা। তবে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে এ সংক্রান্ত কোনো তথ্যই বৃহস্পতিবার পর্যন্ত কমিশনে পৌঁছায়নি।

আনুষ্ঠানিক প্রচার শুরুর পর চার দিন পার হলেও কোনো রিটার্নিং কর্মকর্তা কিংবা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছ থেকে বিধি লঙ্ঘনের ব্যবস্থা সংক্রান্ত কোনো প্রতিবেদনও আসেনি।

দলীয় প্রতীকে প্রথম পৌর নির্বাচনে মাঠ কর্মকর্তাদের এই কাজ দেখে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বেশ ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে ভোট সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।

পৌর নির্বাচনের অনিয়ম ও বিধি লঙ্ঘন মনিটরিং কমিটির সভাপতি উপ সচিব রকিব উদ্দিন মণ্ডল বৃহস্পতিবার বলেন, “বিজয় দিবসে ভোটের প্রচারে না যেতে বলার পরও গণমাধ্যমে মন্ত্রী-এমপিদের বিধি-লঙ্ঘনে ক্ষুব্ধ হয়েছেন সিইসি।”

৩০ ডিসেম্বরের পৌর ভোট সামনে রেখে আচরণবিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে নানা উদ্যোগের কথা বলা হলেও তা দৃশ্যমান না হওয়ায় ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারাও হতাশা প্রকাশ করেছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, “বিধি লঙ্ঘন চলছেই। ঘটনার আগে কোনো ব্যবস্থা নেই, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে প্রতিবেদন চেয়ে কী হবে! কমিশনও কোনো আওয়াজ দিচ্ছে না।”

কর্মকর্তারা বলছেন, কমিশন এখন আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে ‘ক্ষোভ ঝাড়ার’ অপেক্ষায় রয়েছে।

১৯ ডিসেম্বর এই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা, বিভাগীয় কমিশনার, রিটার্নিং কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পুলিশের কর্মকর্তারা অংশ নেবেন।

ইসির নির্দেশনা প্রতিপালন করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে মাঠের সার্বিক অবস্থা এখন পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে ওই বৈঠকের আগে।

উপ সচিব রকিব মণ্ডল বলেন, “আচরণ বিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত সংবাদ ইসির নজরে আনার জন্য তোলা হয়েছে। প্রতিদিন তো ৮-১০টা করে পাচ্ছি।”

তিনি জানান, নরসিংদীর মনোহরদী, গাজীপুরের শ্রীপুর, রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ, মুন্সীগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, শেরপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহের নান্দাইল, বরগুনা, নড়াইলসহ কিছু এলাকায় প্রার্থী ও সাংসদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে ভোটের প্রচার করার সংবাদ এসেছে।

“রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এ পর্যন্ত ৩০-৪০টি অভিযোগের বিষয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কোনোটিরই প্রতিবেদন পাওয়া যায়নি,” বলেন ইসির উপ সচিব।

বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো ইসির পক্ষ থেকে তদন্তের জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

একে কমিশনের ‘দায় এড়ানোর চেষ্টা’ হিসেবে দেখছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসাইন। তার মতে, রিটার্নিং কর্মকর্তারা বাস্তবতার কারণেই চাপমুক্ত হয়ে কাজ করতে সক্ষম হবেন না।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের শঙ্কা আগেই করেছিল নির্বাচন কমিশন। সেজন্য সরকারি সুবিধাভোগী ব্যক্তিদের কঠোর নিষেধাজ্ঞা দিয়েও সাড়া না পেয়ে নিজেই অবস্থান পাল্টেছে সাংবিধানিক সংস্থাটি।

প্রতীক নিয়ে পৌর ভোটে প্রার্থীরা আনুষ্ঠানিক প্রচারে নামে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসে এবং তখনই বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠতে থাকে।

কিন্তু আগের দিন ১৩ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বলেছিলেন, বুদ্ধিজীবী দিবস ও বিজয় দিবসকে ঘিরে প্রার্থীরা যেন কোনো আচরণবিধি লঙ্ঘন না করেন, মিছিল বা শোভাযাত্রা করে প্রচার যেন না চালানো হয়।

মন্ত্রী-এমপিদের বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে যেতে বাধা নেই জানিয়ে তিনি বলেছিলেন, পৌর নির্বাচনী এলাকায় অনুষ্ঠানে উপস্থিতি হতে যারা ইসির কাছে অনুমতি চাইবেন, তাদের দেওয়া হবে। অনুমতি ছাড়া সুবিধাভোগী কেউ এ ধরনের অনুষ্ঠানে গেলে বিধিভঙ্গ হবে।

ইসির নির্বাচন পরিচালনা শাখার উপ সচিব সামসুল আলম জানান, ফরিদপুরের সাংসদ আবদুর রহমান এ সংক্রান্ত অনুমতি চেয়েছিলেন এবং তাকে তা দেওয়া হয়েছে।

বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে আর কোনো সংসদ সদস্যের সাড়া না পেয়ে শেষে ১৫ ডিসেম্বর রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নতুন নির্দেশনা পাঠায় ইসি।

ওই চিঠিতে বলা হয়, “পৌর নির্বাচনী এলাকায় বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান বা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্যসহ অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি উপস্থিত থাকতে পারেন। তবে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতে পারবেন না।

অন্যরকম