খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫: ঢাকার পাকিস্তান দূতাবাস এখন ষড়যন্ত্রের আখড়া ও নব্য কাশিমবাজার কুঠিতে পরিণত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। তিনি বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানিরা পরাজয়ের গ্লানি এখনো ভুলতে পারেনি। তারা বাঙালি জাতিকে ধ্বংস করার যড়যন্ত্রে এখনো লিপ্ত রয়েছে।’
আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচার স্বাধীনতা হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে শাজাহান খান এসব কথা বলেন। ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনাদের প্রতীকী বিচারে ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’-এর আত্মপ্রকাশ উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে আগামী বছরের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি নাগরিকের প্রতীকী বিচার, গণসংযোগের অংশ হিসেবে আগামীকাল শনিবার বিভিন্ন সংগঠনের সঙ্গে মতবিনিময়, ৩ জানুয়ারি মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ ও ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর ফাঁসি বহাল ও কার্যকরের দাবিতে গণ-অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন শাজাহান খান। দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ‘আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ গণবিচার’ ধারাবাহিক আন্দোলন কর্মসূচি দেবে বলেও জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ৫০১ জনকে নিয়ে একটি আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এতে আহ্বায়ক পদে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, যুগ্ম আহ্বায়ক সাংবাদিক আবেদ খানসহ নয়জন এবং সদস্যসচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা ওসমান আলী, সাংবাদিক অঞ্জন রায় ও কামাল পাশা চৌধুরী; সহকারী সদস্যসচিব শমী কায়সার ও কামরুল আলম রয়েছেন।
সংগঠনটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে লিখিত বক্তব্যে শাজাহান খান ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনার বিচার ও দেশটির কাছে বাংলাদেশ সরকারের পাওনা আদায়ে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ সৃষ্টি, পাকিস্তানি যারা বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল, তাদের দ্রুত পাকিস্তানে ফেরত, পাকিস্তান দূতাবাসের ষড়যন্ত্রকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক বিবেচনা, যেসব চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীর কবর সরকারি স্থানে আছে, তা স্থানান্তর এবং জঙ্গি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত গঠনের মাধ্যমে গণজাগরণ সৃষ্টিসহ আরও কয়েকটি লক্ষ্যের কথা উল্লেখ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে নৌ-পরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘ঢাকার পাকিস্তানি দূতাবাসের ভিসা কর্মকর্তা মাজহার খান ও তারপর সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে জঙ্গি নেটওয়ার্ক মনিটর করছেন এবং জাল মুদ্রার ব্যবসায় পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। যাতে বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা বিনষ্ট হয় ও অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা যায়।’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি সেনার প্রতীকী বিচারের প্রক্রিয়ার কথা উল্লেখ করেন আবেদ খান।
তিনি বলেন, সরাসরি আদালত গঠনের এখতিয়ার এবং বিদেশি নাগরিকের বিচারেরও অধিকার তাদের নেই। এ জন্য শহীদ জননী জাহানারা ইমামের গণ-আদালতের আদলে বিচারপদ্ধতি তারা অনুসরণ করবেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখানে বিচারকদের সমন্বয়ে একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করব এবং তাদের পক্ষে কথা বলার জন্যও আইনজীবীও নিয়োগ করা হবে। অর্থাৎ, একটি ট্রাইব্যুনালের স্বাভাবিক যে চরিত্র থাকে, সেটা অবিকৃত রাখতে চাই। সেখানে ১৯৫ জন পাকিস্তানি নাগরিকের প্রতীকী বিচার সম্পন্ন করতে চাই।’
এ সময় শাজাহান খান যোগ করেন, ‘জাহানারা ইমাম যে প্রতীকী বিচার করেছিলেন, তা আজ বাস্তবে পরিণত হয়েছে। সুতরাং আমাদের এই জাগরণ ও আওয়াজ একদিন বাস্তবে পরিণত হবে বলে আমাদের বিশ্বাস।’