Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫: চট্টগ্রাম বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটির অভ্যন্তরে মসজিদসহ তিন স্থানে বোমা হামলার ঘটনায় দু’জনকে আটক করা হয়েছে। আটক দু’জনকে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।

এদিকে ঘটনার পর থেকে ঈশা খাঁ ঘাটির ওই মসজিদ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে সিএমপির সহকারী কমিশনার (বন্দর) জাহেদুল ইসলাম জানিয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে জুমার নামাজ চলাকালে এবং নামাজের পর পর বিএনএস ঈশা খাঁ ঘাঁটি জামে মসজিদ, নৌবাহিনী পরিচালিত নেভাল হাসপাতাল এবং ১ নম্বর নেভাল কলোনিতে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। মসজিদে বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে ঘটনাস্থল থেকে মুসল্লিরা দু’জনকে আটক করেন। আটককৃত দ্’ুজনই নৌ সদস্য বলে জানা গেছে। তারা হলেন- ভলপিকার মান্নান ও ব্যাটম্যান রমজান।

আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতরের (আইএসপিআর) বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, মসজিদে ককটেল বিস্ফোরণে ছয়জন আহত হয়েছেন। অবশ্য তিনটি বিস্ফোরণে এক কর্নেলসহ ১০ থেকে ১২ জনের মতো আহত হয়েছেন বলে স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।

বিস্ফোরণে আহতদের স্থানীয় নেভাল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। গুরুতর আহত একজনকে হেলিকপ্টারে করে চট্টগ্রাম সামরিক হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।

এদিকে জিজ্ঞাসাবাদে আটক দু’জনই ঘটনায় জড়িত থাকার দায় স্বীকার করেছে বলে পুলিশের ঊর্ধ্বতন সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা দু’জনই হামলার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। তবে কী কারণে তারা হামলা চালিয়েছে তা এখনো জানা যায়নি। সেই সঙ্গে তারা কোনো সংগঠনের সঙ্গে জড়িত কি-না তাও জানা যায়নি। তবে কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে তারা নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে কি-না বা তাদের পেছনে অন্য কোনো শক্তি আছে কি-না তা অনুসন্ধান চলছে।

সূত্র জানায়, আটক নৌবাহিনীর দুই সদস্যের মধ্যে ব্যাটম্যান রমজান টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে পাস করে এক বছর আগে নৌবাহিনীতে যোগ দেয়। নৌবাহিনীতে চাকরি নেয়ার সময় তার জমা দেওয়া সার্টিফিকেট জাল ছিল বলে পুলিশ জানায়। রমজানের গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরে। এ ছাড়া ভলপিকার মান্নানের গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলে। সে ছয় মাস আগে নৌবাহিনীতে যোগ দিয়েছে।

ঘটনার পর থেকে নৌবাহিনীর সদস্যরা পুরো ঘাঁটি এলাকা ঘেরাও করে রেখেছেন। র‌্যাব, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলেও তাদের প্রথমে নৌ ঘাঁটিতে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে ফায়ার সার্ভিস ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ভেতরে প্রবেশ করলেও সাংবাদিকদের প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। এ সব ঘটনার কোনো তথ্য জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করে নৌবাহিনী।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, প্রথম গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয় বিএনএস ইশা খাঁ ঘাঁটির অভ্যন্তরে জুমার নামাজ চলাকালে। এতে কর্নেল জাহিদ নামে নেভাল হাসপাতালের একজন চিকিৎসকসহ কয়েকজন আহত হন। কর্নেল জাহিদ নেভাল হাসপাতালের চক্ষু ডাক্তার বলে জানা গেছে।

দ্বিতীয় বিস্ফোরণ ঘটে নৌ ঘাঁটি গেটের বিপরীতে অবস্থিত ১ নম্বর নাবিক কলোনিতে। এখানে কেউ হতাহত হয়েছেন কি-না তা জানা যায়নি। তৃতীয় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে নামাজের পর নেভাল হাসপাতাল মসজিদের পাশে। এখানেও বেশ কয়েকজন আহত হন। ঘটনার পর পুরো পতেঙ্গা ইপিজেড এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নাবিক কলোনির গেট বন্ধ করে দিয়েছে নৌবাহিনীর নিরাপত্তাকর্মীরা।

সিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য বলেন, একটি মসজিদসহ দুই স্থানে বোমা বিস্ফোরণের খবর পেয়েছি। ঘটনাস্থলের আশপাশ থেকে আরও তিনটি অবিস্ফোরিত বোমা উদ্ধার করা হয়েছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।

আহতদের মধ্যেই কোনো একজনের শরীরে বোমা বাঁধা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করছে পুলিশ।

তবে নৌবাহিনীর কর্মকর্তারা এ বিষয়ে কোনো তথ্য প্রকাশ করছেন না। এমনকি ঘটনাস্থলে সাংবাদিক যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের আটকে দেওয়া হয়। বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাও সেখানে প্রবেশ করতে পারেননি। রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেখানে আলামত সংগ্রহের কাজ চলেছিল।

নৌ ঘাঁটির ভেতরে বিস্ফোরণের বর্ণনা দিয়ে ডিসি পোর্ট হারুনুর রশিদ হাজারী জানান, নামাজ শুরু হওয়ার পর প্রথম রাকাতেই এই হামলা চালানো হয়। সূরা ফাতিহা পড়ার পরই দুটি গ্রেনেড ছুড়ে এই হামলা চালানো হয়েছে। সেখান থেকে অবিস্ফোরিত তিনটি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, নৌ ঘাঁটির ভেতরে যে মসজিদটিতে হামলা চালানো হয়েছে সেটি অত্যন্ত সংরক্ষিত একটি এলাকা। সাধারণ লোকজনের সেখানে প্রবেশাধিকার নেই। বাংলাদেশে সামরিকবাহিনীর ওপর এ ধরনের হামলার ঘটনা খুবই বিরল। জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি এবং পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করে তোলার জন্যই এই হামলা চালানো হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।