Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

64খোলা বাজার২৪,শনিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৫: ময়মনসিংহের ফুলপুর পৌরসভায় আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর সভায় দুই মন্ত্রী বক্তব্য দিলেও তারা নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করেননি বলে তদন্ত প্রতিবেদনে বলেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা।
তবে নির্ধারিত সময়ের আগেই পথসভার মাধ্যমে প্রচার চালানোর চেষ্টা করায় মেয়র প্রার্থী শশধর সেনকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ সংবাদমাধ্যমে আসার পর গত ১০ ডিসেম্বর এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয় নির্বাচন কমিশন।

ইসির আচরণবিধি প্রতিপালন সংক্রান্ত মনিটরিং কমিটির সদস্য সচিব মো. শাহ আলম শনিবার বলেন, “এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। প্রতিবেদনে দুই মন্ত্রীর আচরণবিধি ভঙ্গের সত্যতা পাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয়েছে।”

রোববার কমিশনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরা হবে বলে জানান তিনি।
নাম প্রকাশে অস্বীকৃতি জানিয়ে কমিশনের এক কর্মকর্তা বলেন, “রিটার্নিং কর্মকর্তার পাঠানো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পত্র-পত্রিকায় তথ্যমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের যে অভিযোগ এসেছে এর সত্যতা পাওয়া যায়নি। ওই এলাকায় নির্বাচনী সমাবেশের পাশ দিয়ে দুই মন্ত্রী তাদের গন্তব্যস্থলে যাচ্ছিল, তখন তাদেরকে ডেকে কিছু বক্তব্য দিতে বলেন।

“ফলে দুই মন্ত্রী বক্তব্য রাখেন। তবে ওই বক্তব্যে নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের মতো কিছু ছিল না।”

‘দুই মন্ত্রীর আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণা’ শিরোনামে গত ৭ ডিসেম্বর একটি দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, শেরপুর থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তথ্যমন্ত্রী ইনু ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় পৌরসভা নির্বাচনে এক প্রার্থীর পক্ষে পথসভায় অংশ নেন। পরে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানও ওই সভায় অংশ নিয়েছিলেন।

এই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়ার পরদিন গণমাধ্যমে বিবৃতি পাঠিয়ে বিধি ভঙ্গের অভিযোগ নাকচ করেন তথ্যমন্ত্রী।

“আমি নির্বাচনী আচরণবিধি সম্পর্কে সম্যক অবগত এবং বিধি-বিধানের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল।”

তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো ওই বিবৃতিতে বলা হয়, “এ বিষয়ে সুস্পষ্টভাবে জানানো যাচ্ছে যে, তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু গত ৪ ডিসেম্বর শুক্রবার রাতে ময়মনসিংহের ফুলপুর উপজেলায় ভাষাসৈনিক শামছুল হক চত্বরে বিজয়ের মাস উপলক্ষে আয়োজিত পথসভায় যে বক্তব্য রাখেন, সেখানে পৌর নির্বাচন সংক্রান্ত কোনো বক্তব্য ছিল না।

তদন্ত প্রতিবেদন সম্পর্কে জানতে চাইলে ফুলপুর পৌরসভার রিটার্নিং কর্মকর্তা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুব্রত পাল শনিবার বলেন, ইসির নির্দেশনা পাওয়ার পর একজন কর্মকর্তাকে দিয়ে এ বিষয়ে তদন্ত করা হয়।

“তদন্তে দুই মন্ত্রীর নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের সত্যতা পাওয়া যায় নি। তাই মন্ত্রীদ্বয়কে আর কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি।

“তবে নির্ধারিত সময়ের আগে প্রার্থীর প্রচারণা করার সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী প্রচারণা করার চেষ্টা করেছেন। বিধিভঙ্গের জন্য এ প্রার্থীকে শোকজ করা হয়েছে।”

ওই প্রার্থী ইতোমধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশের জবাব দিয়েছেন বলেও জানান তিনি।

আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় পৌরভোট সামনে রেখে ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রতীক ছাড়া প্রচারণার সুযোগ পান মেয়র প্রার্থীরা।দুই মন্ত্রী ফুলপুরে যে পথসভায় বক্তব্য দেন তা এই সময়ের আগেই হয়েছিল।

প্রার্থীর জবাবে সন্তুষ্ট না তাকে জরিমানা করা হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, “ইসির আইন-শৃঙ্খলা বৈঠকে আমি ঢাকায় আছি। পরে জবাব পর্যালোচনা করে ব্যবস্থা নেব।”

দুই মন্ত্রীর বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগের বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়ার তিন দিন আগেই তিন সাংসদকে বিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে কারণ দর্শাতে ইসি সচিবালয় থেকেই সরাসরি চিঠি দেওয়া হয়। তিনজনই ইসিতে নোটিশের জবাব দিয়ে ‘দুঃখ’ প্রকাশ করেন।

মন্ত্রীদের নিয়ে নির্দেশনার পর থেকে আচরণবিধি লঙ্ঘন সংক্রান্ত অন্তত ৪০টি বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরমধ্যে প্রথম কোনো তদন্তের প্রতিবেদন এলো।

মন্ত্রী-এমপিদের বিষয়ে নিজেরা ব্যবস্থা না নিয়ে এভাবে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ওপর ছেড়ে দিয়ে নির্বাচন কমিশন দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুল হোসাইন।

বিএনপির পক্ষ থেকেও কমিশনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে শক্ত অবস্থান না নেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে।

তবে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আসা প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ শনিবার আইন-শৃঙ্খলা সভায় রিটার্নিং কর্মকর্তাদের আচরণবিধি লঙ্ঘনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে নির্দেশ দেন।

“বিধি ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন। সেই সঙ্গে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিয়ে ইসিকে অবহিত করতে হবে,” বলেন তিনি।

চাটখিলের তদন্ত প্রতিবেদন রোববার

নোয়াখালীর চাটখিল পৌরসভায় বিএনপি প্রার্থীকে জোর করে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে।

বিএনপির এ অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ইসির আইন শাখার উপসচিব ওই এলাকায় গিয়ে কাজ করছেন।

তদন্ত কর্মকর্তাকে ২০ ডিসেম্বরের মধ্যে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ জানিয়েছেন।