Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

17খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫: সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা আধুনিকায়নে একটি সফটওয়ার চালু করা হয়েছে, যার মাধ্যমে চাকরির তথ্য দিয়ে নিজেদের বেতন-ভাতা বের করতে পারবেন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে আইবাস প্লাস প্লাস (রইঅঝ++) নামের এই সফটওয়ার উদ্বোধন করেন।

আইবাস প্লাস প্লাস হচ্ছে একটি কেন্দ্রীভূত সমন্বিত বাজেট প্রণয়ন, বাস্তবায়ন ও হিসাবরক্ষণ পদ্ধতির সফটওয়ার। এতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন ও অবসর ভাতা (পেনশন) নির্ধারণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী এই সফটওয়ারে ঢুকে জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বর, কর্মরত পদ, চাকরিতে যোগদানের তারিখ, কতগুলো টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড পেয়েছেন তার তথ্য এবং সর্বশেষ স্কেলের তথ্য দিলেই নতুন স্কেলে তার বেতন কত দাঁড়াচ্ছে তা চলে আসবে। একইভাবে মিলবে অবসর ভাতার তথ্য। স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওই কর্মকর্তা-কর্মচারী বেতন-ভাতা নির্ধারিত হয়ে যাবে এর মাধ্যমে।

অনুষ্ঠানে জানানো হয়, অনলাইনে তথ্য দেওয়ার পর তার বেতন কত নির্ধারিত হয়েছে তা এসএমএসের মাধ্যমে সাথে সাথেই জানানো হবে। একইসঙ্গে তিনি একটি ট্রাকিং নম্বর এবং চাকরির অবস্থানপত্র (বেতন নির্ধারণের সময় পর্যন্ত) পাবেন। এই অবস্থানপত্রের দুটো কপি প্রিন্ট দিয়ে স্বাক্ষর করে যার যার সংশ্লিষ্ট হিসাবরক্ষণ অফিসে পাঠাতে হবে।

তবে পেনশনারদের নিজেদের অনলাইনে তথ্য দিতে হবে না। পেনশনভোগী ব্যক্তি যে ব্যাংক বা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে পেনশন তোলেন সেখানে এনআইডির ফটোকপি ও পিপিও বইয়ের ফটোকপি জমা দিলে তারাই এসব তথ্য অনলাইনে দিবে।

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনই এই ব্যবস্থায় নিজেদের বেতন-ভাতা নির্ধারণ করতে পারবেন।

এই কাজটি করার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সময় বেঁধে দেওয়া হয়নি। সুবিধামতো সময়ে সঠিক তথ্য-উপাত্ত দিয়ে করার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থসচিব মাহবুব আহমেদ।

তথ্য দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, “অনেকের এনআইডিতে ভুল থাকতে পারে- নামের বা জন্ম তারিখের বা অন্য কোনো। সেগুলো সংশোধন করে অনলাইনে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে বেতন নির্ধারণ করবেন। তা না হলে একবার অনলাইনে তথ্য দিলে নিজেরা আর সংশোধন করতে পারবেন না। সংশোধনের জন্য একাউন্টস অফিসে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে সংশোধনের প্রমাণপত্র লাগবে।

“সেজন্য বলছি, কারোর চাকরির তথ্য ও এনআইডির তথ্যে গড়মিল থাকলে তা ঠিক করে নিয়ে আইবাস-এ তথ্য দিন।”

নতুন সফটওয়ারের মাধ্যমে কর্মীদের ও বিভিন্ন অফিসের বিল, কর্মীর ঋণ, জিপিএফ ইত্যাদি স্বয়ংক্রিয়ভাবে তৈরি হবে।

এর আগে সরকার নতুন বেতন কাঠামো (স্কেল) ঘোষণার পর মন্ত্রণালয়গুলোর সংশ্লিষ্ট হিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয় কর্মীদের বেতন ও পেনশন নির্ধারণ (ফিক্সেশন) করত। এতে অনেক সময় লাগার পাশাপাশি ভুল-ভ্রান্তিও থাকত। এছাড়া কোন পদে কতজন কর্মী কাজ করছেন, আগামী বছরে কোন পদে কত বেতন বাড়ছে বা কতজন অবসরে যাচ্ছেন এসব বিষয়েও সরকারের কাছে স্পষ্ট তথ্য থাকত না।

এই জটিলতা দূর করে সুষ্ঠুভাবে বেতন স্কেল বাস্তবায়ন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার লক্ষ্যে সরকার নতুন ব্যবস্থা চালু করেছে বলে জানান অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, “এতে ২৬৮ বছরের ব্যবস্থার পরিবর্তন হল। ১৯০ বছর ব্রিটিশরা তাদের মতো করে চালিয়েছে, এরপর ২৩ বছর চলে আরেকভাবে। তারপর থেকে আমরাই চালাচ্ছিলাম।

“আজকে যে ব্যবস্থা চালু হচ্ছে তা সরকারি চাকুরেদের অনেক সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সরকারও অনেক এগিয়ে যাবে।”

অনুষ্ঠানে অর্থ প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “কতটা ঠিক আমি জানি না। আমি শুনেছি আর্মিতে চাকরির শেষ দিনেই সকল পাওনা বুঝিয়ে দেওয়া হয়। তো আর্মির লোকেরা পারলে আমরা সিভিল প্রশাসনে কেন পারব না। আমি আশা করব আমাদের সচিবরা এই ব্যবস্থাও চালু করবে।”

পেনশন ভোগীদের পেনশন তোলার কাজ সহজ করতে পেনশনের টাকা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন অর্থ সচিব মাহবুব আহমেদ।

তিনি বলেন, “পেনশনারদের কষ্ট কমানোর জন্য সরকার পেনশনের টাকা ইলেকট্রনিক ফান্ড ট্রান্সফারের মাধ্যমে দিবে। এতে পেনশনারকে আর ব্যাংকে বা একাউন্টস অফিসে এসে লাইনে দাঁড়াতে হবে না। যার যার ব্যাংক একাউন্টে টাকা চলে যাবে।

“মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে তাদের জানানো হবে পেনশনের টাকা একাউন্টে জমা হয়েছে। প্রয়োজনমতো সেখান থেকে তিনি তুলে নিতে পারবেন। খুব শিগগিরই এ ব্যবস্থা চালু হবে।”

স্বতন্ত্র পে-স্কেল পাচ্ছে না বাংলাদেশ ব্যাংক

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য আলাদা পে-স্কেল হবে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত।

তিনি বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের আলাদা পে-স্কেল আর হবেই না। কারণ এর কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা হিসাব করে দেখেছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডেপুটি গভর্নর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পান। আর যারা আছে তাদের বিষয়ে আমরা হিসাব করে দেখেছি, আলাদা পে-স্কেলের কোনো প্রয়োজন নেই।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আলাদা পে স্কেল অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিক আবেদন জানিয়েছেন গভর্নর আতউর রহমান।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মীরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ভোগ করেন এবং আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রণ কাঠামো জোরদার করতে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামো দরকার বলে আবেদনে বলেছিলেন তিনি।