Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

41খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের পর মিত্রবাহিনীকে নিজের দেশে ফেরাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘ঐতিহাসিক’ ভূমিকা রেখেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আসম হান্নান শাহ।

রোববার দুপুরে বিজয় দিবসের এক আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন।

হান্নান শাহ বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের শেষে যখন দেশবন্ধু বাংলাদেশে ফিরে আসলেন, উনি এই জাতির জন্য সবচেয়ে বড় উপকার যেটি করে গেলেন, সেটি যুদ্ধের পরপরই। সেটা হল উনি উনার ব্যক্তিত্ব দিয়ে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর (ইন্দিরা গান্ধী) কাছ থেকে আশ্বাস বা প্রতিশ্র“তি নিয়ে নিলেন কত দ্রুত ভারতীয় বাহিনী এখান থেকে চলে যাবেন।”

অখণ্ড বাংলার স্বপ্নদ্রষ্টা চিত্তরঞ্জন দাশকে ‘দেশবন্ধু’ বলা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক শেখ মুজিবুর রহমান বঙ্গবন্ধু হিসেবেই খ্যাত।

ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশে থেকে গেলে দেশের অবস্থা কাশ্মিরের মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সাবেক সেনা কর্মকর্তা হান্নান শাহ বলেন, “আপনারা কল্পনা করতে পারবেন না, যদি ভারতীয় বাহিনী এখানে থাকত এটা আবার কাশ্মিরের মতো একটা রাজ্য হয়ে যেত কিনা।”

তিনি বলেন, “জাতি তো এমনিতে কৃতজ্ঞ বঙ্গবন্ধুর কাছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সেদিন যদি উনি এটা না করতেন তাহলে কী অবস্থা হত। ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যেত। আরও যে কত বছর সংগ্রাম চলত, আরও কত লক্ষ মানুষ শেষ হয়ে যেত।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে স্বাধীনতা ফোরামের উদ্যোগে ‘বিজয় দিবসের অঙ্গীকার ও চলমান প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই আলোচনা সভা হয়।

বঙ্গবন্ধুর ভূমিকার প্রশংসা করেই আবার বক্তৃতায় জিয়াউর রহমানকে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ দাবি করে হান্নান শাহ বলেন, “ওই ঘোষণা আমরা সবাই শুনেছি, শেখ হাসিনা না কি শোনেননি।”

বক্তৃতায় পরে শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘বঙ্গবন্ধু’ সম্বোধন করে হান্নান শাহ বলেন, “যিনি গণতন্ত্রের মানসপুত্র, সেই বঙ্গবন্ধুকে দেখলাম যিনি আইয়ুব খান, মোনায়েম খান, ইয়াহিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন; যুদ্ধ ক্ষেত্রে নয়, বুদ্ধি দিয়ে রাজনীতি দিয়ে তিনি যুদ্ধ করেছেন।

“উনি অসহায়ের মতো কাদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে একদলীয় শাসন বাকশাল কায়েম করলেন যেখানে গণতন্ত্রের ‘গ’ থাকবে না। এটা আমরা বঙ্গবন্ধুর থেকে আশা করিনি।”

বাকশাল কায়েমের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য ‘কবর রচনা’ করা হয়েছিল বলে অভিযোগ করেন তিনি।

দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা প্রকাশ করে হান্নান শাহ বলেন, “আজকে কী অবস্থা! এখন রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে পরিস্থিতিটা আরও খারাপ। ন্যায় বিচারের জন্য আমাদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হচ্ছে।”

মুক্তিযুদ্ধে ভারতীয় বাহিনীর সহযোগিতার কথা ‍উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমরা পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্তি চেয়েছিলাম একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য। যারা লেখাপড়া করেন, দেখবেন, আমরা কোথাও কিন্তু আমরা স্বাধীনতা চাইনি। আমরা অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলাম। আমাদের ওপর পাকিস্তানিরা চাপিয়ে দিয়েছিল বলেই তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে আমরা মিত্র দেশের সহযোগিতা পেয়েছি। সেই সহায়তা নিয়ে আমরা যুদ্ধে বিজয়ী হয়েছি।”

তিনি বলেন, “একজন সাবেক সামরিক অফিসার হিসেবে বলছি, সেই সময়ে মিত্র বাহিনী না থাকলে কেবল মুক্তিযোদ্ধাদের এই দেশ স্বাধীন করতে ৫ থেকে আরও ৭ বছর লাগত। তারপর কী ভবিষ্যত হত, তা জানা যায় না।”

মিত্রবাহিনীর বিষয়ে এই সাবেক সেনা কর্মকর্তা বলেন, “ভারত কিন্তু কেবল আমাদেরকে সহায়তা করার জন্য সহযোগিতা করেননি। তাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল পাকিস্তানকে ভাঙতে হবে, তাদের পরাজিত করতে হবে। তাহলে পাকিস্তান দুর্বল হবে। তারা ভারতের জন্য একটা থ্রেট, তারা আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়াবে না।”

একই সঙ্গে ১৯৭৫ সালের আগে জাসদ ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে আনার জন্য ভারতীয় দূতাবাসকে আক্রমণ করেছিল বলেও অভিযোগ করেন আ স ম হান্নান।

আসন্ন পৌর নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে প্রশ্নাতীত মন্তব্য করে তিনি বলেন, “দুইজন মন্ত্রী গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালানোর ছবি পত্রিকায় আসলো। এরপরও নির্বাচন কমিশন বলে তাদের কাছে নাকি কোনো তথ্য প্রমাণ নাই। থাকবে কী করে, তারা তো কাজ করেন কর্তার ইচ্ছা কর্মের উপরে।”

“নির্বাচন কমিশন দাবি করেন, তারা নিরপেক্ষ। আমরা সবাই জানি, এই পর্যন্ত যত কর্মকাণ্ড হয়েছে, তারা একটি আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠান।”

সংগঠনের সভাপতি আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ, নয়া দিগন্তের সম্পাদক আলমগীর মহিউদ্দিন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার পারভেজ আহমেদ, জিয়া সাংস্কৃতিক সংগঠনের সভাপতি আবুল হাশেম রানা, জিয়া নাগরিক ফোরামের সভাপতি মিয়া মুহাম্মদ আনোয়ার প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।