Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

61খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০১৫: মাথাপিছু আয় ছাড়া অন্য খাতে উন্নতি করলেও মানব উন্নয়ন সূচকে গতবারের অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ।

মানব উন্নয়ন নিয়ে সদ্য প্রকাশিত জাতিসংঘের হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, মানব উন্নয়ন সূচকে পয়েন্ট গতবারের তুলনায় কিছুটা বাড়লেও ১৮৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ আগের ১৪২তম অবস্থানেই রয়েছে।

২০১৫ সালে মানব উন্নয়নে বাংলাদেশ শূন্য দশমিক ৫৭০ পয়েন্ট পেয়েছে, যা আগের বছর ছিল শূন্য দশমিক ৫৬৭ পয়েন্ট।

এক পয়েন্টকে ভিত্তি ধরে কোনো দেশ তার যত কাছাকাছি যায়, মানব উন্নয়নে তার ততটা উন্নতি হয়েছে বলে ধরা হয়।

রোববার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) সম্মেলনকক্ষে ‘মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন ২০১৫’ আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করা হয়।

অনুষ্ঠানের প্রধান আলোচক অর্থনীতিবিদ ড. ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদ বলেন, “মাথাপিছু আয় বাদে অন্যান্য সূচকে বাংলাদেশ অনেক দেশের চেয়ে ভাল করেছে। যেমন- স্বল্প ব্যয়ে খাবার স্যালাইন ও স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা তৈরিতে অসাধারণ সাফল্য অর্জন করেছে।”

এছাড়াও বিভিন্ন খাতে স্বল্প ব্যয়ের প্রযুক্তি ব্যবহারে বাংলাদেশের সফলতা উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ‘রোল মডেল’ হতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিবিদ।

“আমরা মানব উন্নয়ন সূচকে ভালো করছি। প্রতিবেদন অনুযায়ী মানব উন্নয়নে আমরা মধ্যম সারিতে রয়েছি। শুধু তাই নয়, ইতিমধ্যে আমরা মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছি।
“সরকার বলছে, আমরা নিম্ন-মধ্যম আয়ের সারিতে উন্নীত হয়েছি। কিন্তু আমাদের বলা উচিত, আমরা মধ্যম সারিতে উন্নীত হয়েছি।”

প্রতিবেদনে দেখা যায়, মানব উন্নয়ন সূচকে ৭৩তম হয়ে দক্ষিণ এশিয়ায় সবচেয়ে ভাল অবস্থানে রয়েছে শ্রীলংকা। এছাড়া ভারত ১৩০তম ও ভুটান ১৩২তম হয়ে বালাদেশের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে; আর নেপাল ১৪৫তম, পাকিস্তান ১৪৭তম ও মিয়ানমার ১৪৮তম হয়ে পিছিয়ে রয়েছে।

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) আবাসিক সমন্বয়ক পলিন তামাসিসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ মেজবাহউদ্দীন উপস্থিত ছিলেন।

‘মানব উন্নয়নের জন্য কর্ম’ শিরোনামের এই প্রতিবেদন তুলে ধরে ইউএনডিপির মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের পরিচালক সেলিম জাহান বলেন, প্রযুক্তি ব্যবহারের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ক্ষমতায়ন হয়েছে। এখন গ্রামের একজন নারী উদ্যোক্তাও মোবাইল ফোনের মাধ্যমে পণ্য সরবরাহ করছে।

“রানা প্লাজা ধসের পর পোশাক শ্রমিকদের জন্য শ্রম অধিকার আইন ও কর্মস্থলে নিরাপত্তার নিশ্চিতে বেশ কিছু ব্যবস্থা নেওয়া হলেও আরও অনেক কিছু করার বাকি আছে।”

এতে দেখা যায়, শূন্য দশমিক ৯৪৪ পয়েন্ট নিয়ে মানব উন্নয়ন সূচকের শীর্ষে রয়েছে নরওয়ে; তারপর যথাক্রমে অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ড, ডেনমার্ক, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাস্ট্র, কানাডা ও নিউজিল্যান্ডের অবস্থান।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বের ৭৩০ কোটি মানুষের মধ্যে ৪৮০ কোটি কর্মক্ষম। মোট জনসংখ্যার ৭৯ কোটি ৫০ লাখ মানুষ এখনও ক্ষুধাপীড়িত।
বিশ্বের ১৯০ কোটি শিশুর মধ্যে প্রতি ৫ মিনিটে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১১ জন শিশুর মৃত্যু হচ্ছে; প্রতি ঘন্টায় ৩৩ জন প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হচ্ছে।

প্রায় তিন কোটি ৭০ লাখ মানুষ এইচআইভি এইডস রোগে আক্রান্ত, যক্ষ্মায় আক্রান্ত এক কোটি ১০ লাখ মানুষ।

৬৬ কোটি মানুষ অস্বাস্থ্যকর উৎস থেকে খাবার পানি পান করে; অনুন্নত পয়ঃনিষ্কান ব্যবস্থায় রয়েছে ২৪০ কোটি মানুষ। প্রায় ১০০ কোটি মানুষ খোলা জায়গায় মলত্যাগ করে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বজুড়ে প্রাপ্ত বয়স্কদের মধ্যে ৭৮ কোটি এবং যুবকদের মধ্যে ১০ কোটি ৩০ লাখ মানুষ নিরক্ষর রয়েছে। এমনকি উন্নত দেশগুলোতেও ১৬ কোটি মানুষ নিরক্ষর। ২৫ কোটি শিশু জীবনযাবনের কোনো মৌলিক বিষয়ের উপর কোনো প্রশিক্ষণই পায়নি।

বিশ্বজুড়ে নারীদের আয় পুরুষদের চেয়ে ২৪ শতাংশ কম; বাণিজ্য ক্ষেত্রে প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় ২৫ শতাংশ নারী কর্মরত থাকলেও পদে ৩২ শতাংশ স্থানে নারী নেই। জাতীয় আইনসভার একক বা নিম্ন কক্ষের মাত্র ২২ শতাংশ রয়েছে নারীদের দখলে।

বিশ্বের মোট জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ মানুষের দখলে রয়েছে মাত্র ৬ শতাংশ সম্পদ। ২০১৬ সালের মধ্যে এই অনুপাত ৫০ শতাংশের জন্য এক শতাংশে গিয়ে ঠেকবে।