Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

8খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২১ ডিসেম্বর ২০১৫: যৌনদাসী হিসেবে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর ধর্ষণ থেকে শুরু করে সব ধরনের নির্মম নির্যাতন চালানো হয় ২১ বছর বয়সী ইরাকি নারী নাহিদা মুরাদ বেইসি তাহা’র ওপর। সম্প্রতি জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে সেইসব ভয়াবহ নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের এ নারী।

মধ্যপ্রাচ্যে আইএস উত্থানের পর থেকে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের অনুসারীদের। নির্মম-নিষ্ঠুর আইএস জঙ্গি এ জনগোষ্ঠির পুরুষ সদস্যদের হত্যা করছে। আর নারীদেরকে ব্যবহার করছে যৌনদাসী হিসেবে।

ইয়াজিদি মেয়েদের বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে মন্তব্য করে দু:স্বপ্নের মতো কাটানো সেই দিনগুলোর বর্ণনায় তাহা বলেন, ‘গত বছর আগস্টের মাঝামাঝি আমাকে ইরাকের গ্রামের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে একটি বাসে মসুলের একটি বাড়িতে নিয়ে যায় আইএস জঙ্গিরা। ওই বাড়িকে আগে থেকেই জঙ্গিরা তাদের ঘাটি হিসেবে ব্যবহার করছিলো। সেখানে দেখি আমার মতো আরও হাজার খানেক নারী ও শিশুদের ধরে নিয়ে আসা হয়েছে।’

এর কিছুদিন পর তাকে একজন লোক নিয়ে যায় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘সে (লোকটি) আমাকে সুন্দর কাপড় এবং মেকআপ করার জন্য জোর করতে থাকে। তারপর আমাকে আইএস জঙ্গিদের এক পার্টিতে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই শুরু হয় ভয়াবহতা। প্রতি রাতেই আমার সঙ্গে চলতে থাকে যৌননির্যাতন।’

আমি পালাতে চেষ্টা করেছিলাম কিন্তু প্রহরীদের হাতে ধরা পড়ে যাই। ওই রাতের বর্ণনা দিতে গিয়ে তাহা বলেন, ‘রাতে সেই লোকটি আরও কিছু লোককে সঙ্গে নিয়ে আমার রুমে আসে। আমাকে শরীর থেকে কাপড় খুলে ফেলতে বলে। আমি যতোক্ষণ না জ্ঞান হারাই ততোক্ষণ পর্যন্ত আমার ওপর যৌননির্যাতন চলে।’

এমন নিমর্মতার বর্ণনা দিতে গিয়ে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে তাহা। এসময় ইসলামী টেস্টের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

এরই মধ্যে তার কয়েক ভাই আইএসের হাতে নিহত হয়েছেন। জীবন বাঁচাতে দেশান্তরি হয়ে জার্মানিতে বসবাস করছেন অন্যরা।

তাহার মুখে নির্যাতনের ভয়াবহ এ বর্ণনা শুনে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন।

জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ আইএস মধ্যপ্রাচ্যে সংখ্যলঘু ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের ওপর গণহত্যা চালাচ্ছে বলে উল্লেখ করে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিমিনাল কোর্টে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানায়।নিরাপত্তা পরিষদের বুধবার দেওয়া এক স্টেটমেন্টে বলা হয়, ‘আইএস মানবপাচারের মতো অপরাধের সঙ্গে জড়িত। যেটা ইতিপূর্বে থেকে লর্ডস রেজিস্টেন্স আর্মি এবং বোকো হারাম করে আসছে।’ এটাকে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গেও তুলনা করা হয়।

আইএস ইয়াজিদি সম্প্রদায়ের মানুষদের শত্রু হিসেবে গণ্য করে থাকে। এ সম্প্রদায়ের লোকেরা খ্রিষ্টান জরইস্ত্রিয়ানিজিম ও ইসলাম উভয় ধর্মেরই কিছু অংশ পালন করে থাকে। পাশাপাশি তারা ‘শয়তানে’র পূজাও করে।

সারাবিশ্বে এ সম্প্রদায়ের ৫ লাখের মতো অনুসারী রয়েছে। তারা মূলত উত্তর ইরাকের কুর্দিস্থানে বসবাস করে আসছে।
শুধুমাত্র ২০১৪ সালেই ৫ হাজার ইয়াজিদি নারী-পুরুষ ইসলামী টেস্টের জঙ্গিদের হাতে অপহৃত হয়। দেশান্তরী হতে বাধ্য হন ২ হাজারেরও বেশি মানুষ। (ওয়েবসাইট)