Thu. Jun 19th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

15খোলা বাজার২৪, মঙ্গলবার,২২ ডিসেম্বর ২০১৫: আসন্ন পৌর নির্বাচনে দলের মনোনীত ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘাত নিয়ে শঙ্কিত আওয়ামী লীগ। দলটি মনে করছে, বিএনপি বা অন্য দলের প্রার্থীর চেয়ে নিজ দলের বিদ্রোহীরাই নির্বাচনে সংকট তৈরি করতে পারেন। কারণ, অন্তত ২০টি পৌরসভায় বিদ্রোহী প্রার্থীর পেছনে ২০ জন স্থানীয় সাংসদ কিংবা দলের প্রভাবশালী নেতারা ম“ দিচ্ছেন। ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয়ভাবে কয়েকজন সাংসদকে ফোন ও বৈঠক করে বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় করা অথবা তাঁদের পাশ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, পছন্দের প্রার্থী মনোনয়ন না পাওয়ার কারণেই সাংসদ বা দলের একাংশ বিদ্রোহীদের পক্ষ নিচ্ছে। আর অনেক জায়গায় দলের চাপে বিদ্রোহী সরে দাঁড়ালেও সাংসদের অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নামছেন না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, সাংগঠনিক সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় নেতারা পৌরসভায় নির্বাচন তদারক করছেন। তাঁরা প্রার্থী মনোনয়নের পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই বৈঠক করছেন। এসব বৈঠকেই বিদ্রোহীদের বিষয়ে এই মূল্যায়ন উঠে এসেছে। দলের সভানেত্রী শেখ হাসিনাকেও এসব মূল্যায়ন সময়-সময় জানানো হচ্ছে।

সূত্র আরও জানায়, পৌর নির্বাচনে দলের নিয়োজিত নেতাদের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক বৈঠকে সাংসদ কিংবা আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের পরোক্ষ সমর্থন রয়েছে এমন কয়েকটি পৌরসভার বিষয়ে জোরালো আলোচনা হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌরসভার দলের মনোনীত প্রার্থীরা অভিযোগ করেছেন। এসব পৌরসভার মধ্যে রয়েছে গাজীপুরের শ্রীপুর, বরগুনা সদর, নীলফামারীর জলঢাকা, গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, নড়াইলের কালিয়া, মেহেরপুরের গাংনী, ময়মনসিংহের গৌরীপুর ও ত্রিশাল, মৌলভীবাজারের কুলাউড়া, সুনামগঞ্জের ছাতক, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড ও রাউজান, যশোর সদর, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ, শরিয়তপুরের নড়িয়া, মাদারিপুরের কালকিনি, দিনাজপুরের ফুলবাড়ী, পাবনার সাঁথিয়া ও নরসিংদী সদর।

একজন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, এসব পৌরসভার বাইরেও কিছু মন্ত্রী-সাংসদ নিজ নিজ এলাকায় বিদ্রোহী প্রার্থীকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করছেন। কিন্তু সম্পর্ক, প্রভাব ও দলীয় অবস্থানের কথা বিবেচনা করে তাঁদের ঘাটাতে চান না তাঁরা। কেন্দ্রীয়ভাবে প্রভাব নেই এবং চাপ দিয়ে বাগে আনা যাবে, এমন সাংসদদের বেছে বেছে বিদ্রোহীদের ব্যাপারে প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন তাঁরা।

একজন জ্যেষ্ঠ নেতা বলেন, সাত বিভাগে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার জন্য মন্ত্রী-সাংসদ নন এমন কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে সাতটি দল গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে অনেক নেতা বিভিন্ন পৌরসভায় চলে গেছেন। তাঁদের দলীয় প্রার্থীর পক্ষে ভোট চাওয়ার পাশাপাশি বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৭৬টি পৌরসভায় আওয়ামী লীগের ৮৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। কেন্দ্রীয়ভাবে সবাইকে বহিষ্কারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। দলের পদ আছেন এমন ৫৯ জনকে স্থায়ীভাবে কেন বহিষ্কার করা হবে না, তা জানাতে কারণ দর্শানোর চিঠি দেওয়া হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ মনে করছে, এত কিছুর পরেও অন্তত ২০০ পৌরসভায় দলের প্রার্থীরা এগিয়ে আছেন।

আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা বলেন, আসন্ন পৌর নির্বাচনের ভোট গ্রহণের দিন সংঘাতহীন রাখতে চায় সরকার। বিএনপিসহ বিরোধী দলের ভঙ্গুর ও মামলায় জর্জর অবস্থার কারণে তাদের নেতা-কর্মীরা প্রকাশ্যে মহড়া দিতে পারছেন না। এ অবস্থায় সংঘাতে যাওয়ার ক্ষমতা আছে একমাত্র আওয়ামী লীগের বিদ্রোহীদেরই। সারা দেশে প্রতিদিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘাত সেটাই প্রমাণ দিচ্ছে। এর মধ্যে বরগুনা সদর ও মেহেরপুরের গাংনীতে মুখোমুখি অবস্থানে চলে গেছে দুই পক্ষ।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মেহেরপুরের গাংনীতে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছিলেন এম এ খালেক। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে জয়ী হন মকবুল হোসেন। অর্থাৎ নৌকার প্রার্থীর পরাজয় ঘটে। এবার পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন মকবুলের অনুসারী আহম্মেদ আলী। আর এম এ খালেকের পছন্দের ও তৃণমূলের প্রার্থী আশরাফুল ইসলাম হয়েছেন বিদ্রোহী।

এই বিষয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আহম্মেদ আলী বলেন, আশরাফুল ইসলাম জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেকের প্রার্থী। তাঁকে বিএনপি-জামায়াতের লোকজন ভোট দিতে পারে। আওয়ামী লীগের কেউ ভোট দেবে না। অবশ্য এম এ খালেক বলেন, কেন্দ্র থেকে তাঁকে ফোন করে দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রার্থী অপছন্দ হলেও কিছু করার নেই।
গত রোববার আওয়ামী লীগের ধানমন্ডি কার্যালয়ে কেন্দ্রীয় নেতারা বৈঠক করেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের সাংসদ হাসিবুর রহমানের সঙ্গে। বিদ্রোহীদের নিষ্ক্রিয় করার জন্য নড়াইলে সাংসদ কবিরুল হক, চট্টগ্রামের এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরীকেও ফোন করেন ওবায়দুল কাদের।

জানতে চাইলে হাসিবুর রহমান প্রথম আলোর কাছে বৈঠকের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাঁর পছন্দের চেয়ে দলীয় সিদ্ধান্ত বড়। আর বিদ্রোহী প্রার্থী বহিষ্কার হয়ে গেছেন। এখন সবাই নৌকার পক্ষে মাঠে নেমেছেন। বিদ্রোহী প্রার্থী দলীয় প্রার্থীর বিজয়ে বাধা হতে পারবে না।

কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে সাংসদ হাসিবুর রহমানের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন পৌর সভাপতি আবদুর রহিম। কিন্তু দল থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় হালিমুল হককে। স্বাভাবিকভাবেই সাংসদ বিদ্রোহী প্রার্থীর প্রতি সহানুভূতিশীল।

নড়াইলের কালিয়া পৌরসভায় মেয়র পদপ্রার্থী সাকল্যে আটজন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগেরই পাঁচজন। দলের মনোনীত প্রার্থী ওয়াহিদুজ্জামান। আর বিদ্রোহীদের মধ্যে বর্তমান মেয়র এমদাদুল হক ও দলের নেতা মুশফিকুর রহমানের তৎপরতা বেশি। স্থানীয় সাংসদ কবিরুল হকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী প্রার্থী মুশফিকুর রহমানের পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আছে।

জানতে চাইলে কবিরুল হক বলেন, বিদ্রোহীদের অনেকেই তাঁর ঘনিষ্ঠ। কিন্তু কারও পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। ওবায়দুল কাদেরের ফোন পাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি তো আচরণবিধি ভেঙ্গে প্রচার করতে পারব না। দলের সবাই দলীয় প্রার্থীর পক্ষে কাজ করছে। যতই প্রার্থী থাকুক নৌকার বিজয় হবে।’
এ ছাড়া চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বসে গেছেন। কিন্তু এই পৌরসভা নিয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে আলোচনা হচ্ছে স্থানীয় সাংসদ শামসুল হক ভূঁইয়ার অনুসারীরা দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নামছেন না। নাটোরের গোপালপুরেও স্থানীয় সাংসদ আবুল কালাম তৃণমূলের মাধ্যমে ফিরোজ আহমেদ নামে একজনের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু দলের মনোনয়ন পান রোকসানা মুর্তজা। ফিরোজ বিদ্রোহী হয়ে পরে প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেন। কিন্তু সাংসদ ও দলীয় প্রার্থীর মধ্যে দূরত্ব রয়ে গেছে। দুই পক্ষের লোকজন গতকাল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন।