Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

4খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫: জঙ্গি ‘যোগসাজশের’ অভিযোগ ওঠার পর ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের কূটনীতিক ফারিনা আরশাদকে তার দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।
শাহজালাল বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশন পুলিশের ওসি জানান, বুধবার বেলা ১টা ৩৫ মিনিটে পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে ফারিনা ঢাকা ছাড়েন।
ফারিনা আরশাদ ফারিনা আরশাদ ফারিনা আরশাদ ঢাকায় পাকিস্তান হাই কমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি (রাজনৈতিক) পদে কর্মরত ছিলেন।
জঙ্গি অর্থায়নে জড়িত সন্দেহে এর আগে গত জানুয়ারিতে পাকিস্তান দূতাবাসের কর্মকর্তা মাযহার খানকে বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল।
এরপর সন্দেহভাজন কয়েকজন জেএমবি সদস্যকে জিজ্ঞাসাবাদ এবং ইদ্রিস শেখ নামে একজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ভিত্তিতে পাকিস্তানি এক নারী কূটনীতিকের জঙ্গি যোগসাজশের তথ্য পাওয়ার দাবি করে গোয়েন্দা পুলিশ।
একসময় পাকিস্তানে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত থাকা ইদ্রিস ঢাকার হাকিম আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে পাকিস্তান হাই কমিশনের ফারিনার সঙ্গে যোগাযোগ ও তার কাছ থেকে টাকা পাওয়ার তথ্য দেন। গত ১৪ ডিসেম্বর ওই খবর বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত হয়।
এর দুদিন পর এক প্রতিবাদ লিপিতে ওই সংবাদ ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করে পাকিস্তান হাই কমিশন।
ওই খবর ‘কাল্পনিক’ দাবি করে প্রতিবাদ লিপিতে বলা হয়, “জানা গেছে, এই ‘কাহিনীটি’ গণমাধ্যমে ফাঁস করেছে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা। আর গণমাধ্যমের একটি অংশ যাচাই না করেই খবরটি ছাপিয়ে দিয়েছে।”
পাকিস্তান হাই কমিশনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মুনতাসিরুল ইসলাম গত ১৬ ডিসেম্বর বলেন, “ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ সুনির্দিষ্ট কোনো রাষ্ট্রের নাম উল্লেখ করে বা বাংলাদেশে কর্মরত কোনো ডিপ্লোমেট বা কোনো কর্মকর্তার নাম উল্লেখ করে মিডিয়াতে কোনো তথ্য সরবরাহ করেনি।”
গত ২৯ নভেম্বর রাজধানীর উত্তরা ও খিলগাঁও এলাকা থেকে ইদ্রিস শেখ নামের এক ব্যক্তিসহ চারজনকে গ্রেপ্তারের পর গোয়েন্দা পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার মনিরুল ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরেন।
তিনি জানান, আটকদের মধ্যে ইদ্রিস ও মকবুলের কাছে পাকিস্তানি পাসপোর্ট পাওয়া গেছে। পাকিস্তান ও বাংলাদেশের মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত রয়েছে তাদের।
মনিরুল বলেন, “ইদ্রিসের কাছে একটি ‘স্পাই মোবাইল’ পাওয়া গেছে। এর মাধ্যমে তিনি দেশের বাইরে একটি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ এবং তথ্য আদান-প্রদান করতেন। একটি হাই কমিশনের এক নারী কর্মকর্তার সঙ্গেও তারা নিয়মিত যোগাযোগ রাখতেন।”
পরে ঢাকার মহানগর হাকিম আব্দুল্লাহ আল মাসুদের কাছে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেন ইদ্রিস; সেখানে তিনি ওই নারী কর্মকর্তাকে পাকিস্তান হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ হিসেবে চিহ্নিত করেন।
ফারিনার সঙ্গে পরিচয়ের বিষয়ে ইদ্রিস বিচারককে বলেন, তিনি ২২ বছর পাকিস্তানে কাটিয়ে বাংলাদেশে ফেরার পর এয়ার টিকেটিং ও ভিসা প্রসেসিংয়ের ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার সঙ্গে বাবুল নামের একজনের পরিচয় হয়, যার মাধ্যমে যোগাযোগ হয় কামাল নামের আরেকজনের সঙ্গে। কামাল তার কাছে নিজেকে ‘পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার লোক’ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন।
ঘনঘন টিকেট করিয়ে দেওয়ার কারণে বাবুলের কাছে তার অনেক টাকা বাকি পড়ে। এক পর্যায়ে বাবুল পাকিস্তানে চলে যান। সেখানে গিয়ে তিনি ফারিনা আরশাদের মোবাইল নাম্বার দেন। বাবুলের মাধ্যমেই মূলত ফারিনার সঙ্গে পরিচয় হয় বলে জবানবন্দিতে জানান ইদ্রিস।
তিনি বিচারককে বলেন, একবার ৩০ হাজার টাকা দিতে এসে ফারিনা একটি ম্যাজেন্টা রংয়ের গাড়ি নিয়ে বায়তুল মোকাররম থেকে তাকে ফকিরাপুলে নামিয়ে দেন।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, ইদ্রিসের মোবাইল ফোনে নিজের নম্বর হিসেবে একটি বিদেশি নম্বর সংরক্ষণ করা হয়েছে। সেই নম্বরটি ক্যাপ্টেন অসীম নামের এক পাকিস্তানি গোয়েন্দা কর্মকর্তার। ওই পাকিস্তানি গোয়েন্দা দেশটির একটি বিমানবন্দরে ছদ্মবেশ নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত।