খোলা বাজার২৪, বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০১৫: যাদবপুরের দুই পড়ুয়া। স্নাতক স্তরের ওই দুই পড়ুয়ার মধ্যে রয়েছে প্রেমের সম্পর্ক। তাঁরা বিয়েও করতে চান। অথচ, তাঁদের বিয়েতে রয়েছে দুই পরিবারের তরফে চূড়ান্ত আপত্তি। শেষ পর্যন্ত অবশ্য পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও বিয়ে করলেন বি.এ. দ্বিতীয় বর্ষের ওই তরুণ এবং তরুণী।
কিন্তু, সংসার চলবে কীভাবে? কীভাবে-ই-বা তাঁরা বেঁচে থাকবেন? কেননা, তাঁরা কেউ-ই রোজগেরে নন। প্রেমের সম্পর্কের এক প্রকার পরিণতি হিসেবে তাঁরা বিয়ে করেছেন। কাজেই, জীবন এবং জীবিকার বিষয়টি তাঁদের কাছে তখন অন্যতম প্রশ্ন। শেষ পর্যন্ত, স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে-ই তাঁরা চুকিয়ে দিলেন পড়াশোনার পাট। এবং, তাঁরা যোগাযোগ করলেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে। কারণ, অন্য কোনও জীবিকা নয়। তাঁরা যৌনপেশায় অংশ নিতে চান।
শেষ পর্যন্ত, দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সম্মতিতে, জীবিকা হিসেবে যৌনপেশাকে বেছে নেন ওই তরুণী। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, ওই তরুণ এবং তরুণী রয়েছেন উত্তরবঙ্গের এক যৌনপল্লিতে। ওই তরুণী সেখানকার যৌনকর্মী। তবে, জীবন-জীবিকার টানে এ ভাবে ওই তরুণী উপার্জন করলেও, তাঁর ওই তরুণ স্বামী অবশ্য বেকার। দুই পরিবারের সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগও নেই। এবং, জীবন-জীবিকার টানে ওই তরুণী শেষ পর্যন্ত যৌনপেশাকে বেছে নিলেও, তাঁরা উভয়েই তাঁদের পরিচয় গোপন রাখতে চান বলেও জানা গিয়েছে। শুধুমাত্র এমন ঘটনাও নয়।
ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের এক পড়ুয়া। তিনিও পড়াশোনার পাট চুকিয়ে, জীবন এবং জীবিকার টানে বেছে নিতে চান যৌনপেশাকে। কারণ, পরিবারের সঙ্গে ওই ছাত্রীর এমন অশান্তি হয়েছে যে, তার জেরে তিনি যোগাযোগ করেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে। তিনি যেমন আর ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পাঠ শেষ করতে চান না। তেমনই, তিনি আবার বাড়িতেও ফিরতে চান না। যে কারণে, জীবিকা হিসেবে যৌনপেশাকে বেছে নেওয়ার জন্য তিনি নাছোড়বান্দা। এবং, এই ঘটনাও কলকাতার। তবে, শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই পড়ুয়াকে যৌনপেশায় অংশ নিতে হয়নি।
কেননা, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া ওই তরুণীর কাছ থেকে গোটা বিষয়টি জানার পর, দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির তরফে যোগাযোগ করা হয় তাঁর বাবার সঙ্গে। ওই তরুণীর বাবার অনুরোধ অনুযায়ী, সোনাগাছিতে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অফিসে বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। কারণ, তত সময়ে সেখানে পৌঁছতে চান ওই তরুণীর বাবা। এর পর, ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই পড়ুয়ার বাবা সেখানে পৌঁছলে, দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির তরফে তাঁকে দেখানো হয় ওই তরুণীর লিখিত আর্জি, জীবন-জীবিকার টানে কেন তিনি যৌনপেশায় অংশ নিতে চান। শেষ পর্যন্ত অবশ্য ওই তরুণীকে বোঝানো সম্ভব হয়। এবং, তার জেরেই, যৌনপেশায় অংশ না নিয়ে তাঁর বাবার সঙ্গে তিনি বাড়িতে ফিরে যান। শুধুমাত্র যেমন এই দুই ঘটনাও নয়। তেমনই, এই দুই কাহিনি আবার বিচ্ছিন্ন কোনও ঘটনাও নয়।
কেননা, আগেও যেমন এই ধরনের ঘটনার সম্মুখীন হতে হয়েছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটিকে। তেমনই, এখনও এই ধরনের বিভিন্ন ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের যৌনকর্মীদের অন্যতম ওই সংগঠনকে। তবে, অতীতের সঙ্গে বর্তমানের অন্যতম ফারাক, আগের তুলনায় এখন এই ধরনের অনেক বেশি ঘটনার সম্মুখীন হতে হচ্ছে দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটিকে। কারণ, আগের তুলনায় এখন আরও অনেক বেশি সংখ্যক উচ্চ শিক্ষিত মহিলা বেছে নিতে চাইছেন যৌনপেশাকে। এবং, যৌনপেশায় অংশ গ্রহণের জন্য তাঁরা যোগাযোগ করছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে। ওই সংগঠনের সচিব ভারতী দে-র কথায়, ‘‘শুধুমাত্র যাদবপুরের বি.এ. সেকেন্ড ইয়ারের ওই দু’টি ছেলে-মেয়ে নয়। শুধুমাত্র ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ওই মেয়েটিও নয়। আগের তুলনায় আমরা এখন এই ধরনের অনেক বেশি ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছি। ’’
একই সঙ্গে ভারতী দে বলেন, ‘‘যৌনপেশায় নামার জন্য প্রতি মাসে এখন ২০০ থেকে ২৫০ জন মেয়ে আমাদের সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ডের সম্মুখীন হচ্ছেন। প্রাপ্তবয়স্ক এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক, দুই ধরনের মেয়েরাই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৯৮ শতাংশ এবং অপ্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ৯৬ শতাংশ মেয়ে নিজের ইচ্ছায় যৌনপেশায় নাম চাই ছেন। তবে, যৌনপেশায় নামার জন্য আমাদের সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড কখনও অপ্রাপ্তবয়স্ক কোনও মেয়েকে সম্মতি দেয় না। ’’ সেক্ষেত্রে কী হয়? কেননা, ওই অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলারা তাঁদের ইচ্ছায় যৌনপেশায় অংশ নিতে চাইছেন। তা হলে, ওই সব অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা কি তাঁদের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করেন? তাঁরা কি ফিরে যান তাঁদের বাড়িতে?
দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সচিব বলেন, ‘‘যৌনকর্মী হওয়ার জন্য অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা যখন আমাদের সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ডের সম্মুখীন হয়, সেই সময় আমাদের বক্তব্য জানার পরে তাদের অনেকে এমন কথা বলে যে, আমরা তাকে সুযোগ দিচ্ছি না তো কী হয়েছে, অন্য কোনও যৌনপল্লিতে সে যাবে। সেখানে সে যৌনপেশায় নামার সুযোগ পাবে। এ ক্ষেত্রে সেভাবে আমাদের করার কিছু থাকে না। কারণ, পশ্চিমবঙ্গের সব যৌনপল্লিতে এখনও আমরা পৌঁছতে পারিনি। দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির অধীনে যে সব যৌনপল্লি রয়েছে, সেই সব জায়গায় কোনও মতেই কোনও অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েকে যৌনপেশার জন্য সম্মতি দেবে না আমাদের সেল্ফ রেগুলেটরি বোর্ড। ’’ বহু অপ্রাপ্তবয়স্ক মহিলা যেভাবে নিজের ইচ্ছায় যৌনপেশায় নামার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিচ্ছে, তার পিছনে অন্যতম কারণগুলির মধ্যে দারিদ্র এবং বাড়িতে অশান্তির মতো বিষয় রয়েছে বলেও জানান তিনি।
যদিও, যৌনপেশায় অংশ গ্রহণের জন্য কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনও ছাত্রী অথবা উচ্চ শিক্ষিত কোনও তরুণী যে শুধুমাত্র দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে-ই যোগাযোগ করছেন, তাও নয়। এসকর্ট সার্ভিস সহ অন্য নানা উপায়ে তাঁরা যৌনপেশায় অংশ নিচ্ছেন। কখনও যেমন অর্থের প্রয়োজনে অথবা অতিরিক্ত অর্থের কারণে। তেমনই, কখনও আবার নিছক-ই যৌনসুখ উপভোগের কারণে তাঁরা যৌনপেশায় অংশ নিচ্ছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন অভিজাতশ্রেণির-ও চাকুরিজীবী মহিলা অথবা গৃহবধূ। তেমনই, শুধুমাত্র আবার মহিলারাও নন। যৌনপেশায় অংশ নিচ্ছেন পুরুষরাও। এবং, কলকাতায়-ও, এ ভাবে বিভিন্ন উপায়ে যৌনপেশায় অংশগ্রহণের হারও আগের তুলনায় এখন অনেক বেড়ে গিয়েছে।
কিন্তু, যৌনপেশায় অংশ নেওয়ার জন্য আগের তুলনায় আরও বেশি সংখ্যক উচ্চশিক্ষিত মহিলারা কেন যোগাযোগ করছেন দুর্বার মহিলা সমন্বয় কমিটির সঙ্গে? ভারতী দে বলেন, ‘‘অনেক সময় প্রেমের সম্পর্কে কোনও মেয়ে ফেঁসে যায়। অনেক সময় প্রেম করে বিয়ে করার পরে কিছু আর করার থাকে না। যেমন যাদবপুরের ওই দু’জন। যৌনকর্মী হিসেবে মেয়েটি উপার্জন করছে। অথচ, ছেলেটি কোনও উপার্জন করছে না। ওই মেয়েটির উপার্জনেই ছেলেটি চলছে। কিন্তু, অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এক সময় ওই ধরনের কোনও মেয়েকে ছেড়ে দিয়ে, অন্য কোনও মেয়েকে নিয়ে থাকছে ওই ধরনের কোনও ছেলে। আর, এ ভাবেও কলকাতার সোনাগাছি সহ এই শহর এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন যৌনপল্লিতে এখন যৌনকর্মী হিসেবে পরিচয় বহন করে চলেছেন উচ্চশিক্ষিত বহু মহিলা। সুত্র- কোলকাতা২৪