খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : দুদিন আগে আইসিসির বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার হয়েছেন জশ হ্যাজলউড। পুরস্কারটি মুস্তাফিজুর রহমানও কি পেতে পারতেন না?
আইসিসি বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচন করে আসলে ভোটিং কমিটি। সম্পূর্ণ স্বাধীন এ কমিটির ভোটে যে খেলোয়াড় বেশি ভোট পান তিনিই বিজয়ী। ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৪ থেকে ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫—এ সময়সীমার পারফরম্যান্সই বিবেচনা করা হয়েছে বর্ষসেরা খেলোয়াড় নির্বাচনে।
এ সময়ের পারফরম্যান্সে হ্যাজলউড অনেক এগিয়েই। তিন সংস্করণে অস্ট্রেলীয় পেসারের উইকেট ৫৮, সেখানে মুস্তাফিজের ২৫। অবশ্য মুস্তাফিজ খেলেছেনই বা কটা ম্যাচ? অভিষেক হয়েছে জুনে। জুন থেকে সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ খেলেছে মাত্র দুটি সিরিজ। উল্লিখিত সময়ের মধ্যে তিন সংস্করণে মুস্তাফিজের ম্যাচ সংখ্যা ১১, সেখানে হ্যাজলউড আইসিসির বেঁধে দেওয়া সময়কালে খেলেছেন ২০ ম্যাচ।
বর্ষসেরা উদীয়মান ক্রিকেটার না হলেও এ মাসের শুরুতে আইসিসির বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে ঠিকই জায়গা করে নিয়েছেন তরুণ তুর্কি। ওই দলে অবশ্য হ্যাজলউড জায়গা পাননি। মুস্তাফিজ এ বছর যা পেয়েছেন, তাতে কোনো আক্ষেপই থাকার কথা নয় তাঁর।
গত ২৪ এপ্রিল পাকিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পা রাখা। এরপরের গল্পটা ‘এলামৃদেখলামৃজয় করলাম’-এর মতো! ভারতের বিপক্ষে অভিষেক ওয়ানডেতে ৫ উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ। পরের ম্যাচে ৬ উইকেট নিয়ে আবারও ম্যাচসেরা, সঙ্গে হয়ে গেলেন ক্যারিয়ারের প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১১ উইকেট নেওয়া প্রথম বোলারও। মুস্তাফিজের আগে প্রথম দুই ওয়ানডেতে ১০ উইকেট ছিল ব্রায়ান ভিটরির।
জুলাইয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্ট অভিষেকও হলো দুর্দান্ত। ক্রিকেটের বড় দৈর্ঘ্যে খেলতে নেমেই পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সুযোগ। হ্যাটট্রিক না হলেও রেকর্ড বইয়ের আরেকটি অধ্যায়ে নাম লিখিয়েছিলেন মুস্তাফিজ। টেস্ট ইতিহাসে চার বলে তিন উইকেট নেওয়ার ঘটনা আছে মোট ৩৭টি। সে তালিকায় যোগ হলেন মুস্তাফিজও। ওই টেস্টে ম্যাচ সেরাও হয়েছিলেন বাঁহাতি পেসার। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ওয়ানডে ও টেস্ট দুই ধরনের ক্রিকেটে অভিষেকেই ম্যাচ সেরা হওয়ার প্রথম কীর্তি গড়েছিলেন সাতক্ষীরা পেসার।
এ বছর তিন সংস্করণে ১৬ ম্যাচে উইকেট পেয়েছেন ৩৬টি। ওয়ানডেতে কমপক্ষে ১০ উইকেট নিয়েছেন, এমন বোলারদের বোলিং গড়ে সবার ওপরে মুস্তাফিজই। তাঁর বড় অস্ত্র ‘কাটার’কে তো রীতিমতো শিল্পে রূপ দিয়েছেন। মুস্তাফিজের মায়াবী কাটারে ঘোল খেয়েছেন মহেন্দ্র সিং ধোনি, ক্রিস গেইল, শহীদ আফ্রিদিদের মতো বড় বড় তারকারা! তূণে যোগ করছেন নতুন নতুন অস্ত্র। বলের গতি বেড়েছে, পরিস্থিতি বুঝে ইয়র্কার-বাউন্সার দিতে পারছেন বেশ। সব মিলিয়ে মুস্তাফিজই ২০১৫ সালে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আবিষ্কার!
নতুন বছরে তরুণ তুর্কির প্রধান কাজ, নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়া।