খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : রাজধানীর মিরপুরের যে বাসা থেকে জঙ্গি আটকের পাশাপাশি বোমা-বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে সেখানকার বাসিন্দারা সব সময় ‘দলবেঁধে’ চলতেন বলে তাদের এক প্রতিবেশী জানিয়েছেন।
মিরপুরের শাহ আলী থানার ৯ নম্বর রোডের ‘এ’ ব্লকের ছয়তলা বাড়ির উপর তলার দুটি ফ্ল্যাটে বৃহস্পতিবার অভিযান চালান আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।
১৬টি ‘হাতে তৈরি গ্রেনেড’, দুটি হাতবোমা এবং বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম উদ্ধারের পাশাপাশি সেখান থেকে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) শীর্ষ পর্যায়ের ‘নেতা’ বলে পুলিশ বলছে।
যে ফ্ল্যাট থেকে বোমা ও বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে সেটি প্রায় চার মাস আগে নজরুল নামে এক ছেলে ১০ হাজার টাকায় ভাড়া নেন বলে বাড়িওয়ালার ছেলে সারোয়ার হোসেন ভুইয়া অপু জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, “পাশের কলেজের চারজন ছাত্র থাকবে বলে বাসাটি ভাড়া নেওয়া হয়েছিল।”
ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় ছয় তলা এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল গত কয়েক মাস ধরে। ঢাকার মিরপুরের শাহ আলী এলাকায় ছয় তলা এই ভবনের একটি ফ্ল্যাট জঙ্গি আস্তানা হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছিল গত কয়েক মাস ধরে। অভিযানের সময় ওই ভবনের পাশে পুলিশ সদস্যরা। অভিযানের সময় ওই ভবনের পাশে পুলিশ সদস্যরা। পরবর্তীতে তাদের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তার কাছ থেকে আর কোনো তথ্য মেলেনি।
তবে এই ভবনের সামনের সরু রাস্তার ওপারে ছোট ছোট ঘরে থাকা টিনশেড বাড়ির বাসিন্দারা জানান, ঘর ছাড়া অন্য জায়গা না থাকায় রাস্তার পাশে আড্ডার সময় তাদের চোখে পড়েছে ওই ভবনের ছয়তলার বাসিন্দাদের।
বৃহস্পতিবার বাড়িটিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানের সময় কথা হয় সেখানকার কয়েকজন বাসিন্দার সঙ্গে।
এক গৃহবধূ বলেন, প্রায় প্রতিদিন সন্ধ্যার পর কিছু তরুণকে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে দলবেঁধে ঢুকতে দেখতেন তিনি। আবার বেরোতেও দেখা যেত। বাসায় ঢোকা-বেরোনোর সময় কারো সঙ্গে তেমন কথা বলতে দেখা যায়নি এদের কাউকে।
তাদের আচরণ কখনোই জঙ্গিদের মতো মনে হয়নি জানিয়ে তিনি বলেন, সাধারণ ছাত্রের মতোই মনে হয়েছে সব সময়। তারা সবাই মাথা নিচু করে বাসায় ঢুকতেন।
২২ থেকে ৩০ বছর বয়সী এই যুবকদের কখনই একা কাউকে দেখা যায়নি বলে জানান তিনি।
অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের ঘটনা সম্পর্কে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। অভিযান চলাকালে সাংবাদিকদের ঘটনা সম্পর্কে জানাচ্ছেন পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম। জিন্সের প্যান্টের উপরে গেঞ্জি এবং কেডস পরেই তাদের বেশিরভাগ সময় দেখা যেত বলে জানান ওই টিনশেড বাড়ির বাসিন্দা এক তরুণী।
“তবে প্রত্যেকের কাঁধেই ব্যাগ থাকত। কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যেসব ব্যাগ বহন করে এসব ব্যাগই তাদের কাঁধে দেখা যায়,” বলেন তিনি।
গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তা ছানোয়ার হোসেনও বলেছেন, তাদের বাসায় জিন্সের প্যান্ট, গেঞ্জি ও কেডস পাওয়া গেছে। তাদের আচরণও ‘আধুনিক’ ছেলেদের মতোই।
তবে সন্ধ্যা পর্যন্ত তাদের পরিচয় জানায়নি পুলিশের কোন সদস্য।
অভিযান চলাকালে দুপুরে মহানগর পুলিশের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ওই বাসা থেকে যেসব হাতে তৈরি গ্রেনেড উদ্ধার করা হয়েছে সেগুলো এর আগে পুরান ঢাকার হোসাইনী দালান, কামরাঙ্গীর চরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে উদ্ধার গ্রেনেডের মতোই।
আগেরদিন গ্রেপ্তার জেএমবির একজনের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই বাসায় অভিযান চালানো হয় জানিয়ে তিনি বলেন, “এখানেই বোমা তৈরি করা হতো বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখানকার তৈরি গ্রেনেডই হোসাইনী দালানে নিয়ে হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে।