Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

29খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : ক্যামেরা, লাইট্স, সাউন্ড— অ্যাকশন। এ সব তো জানা ছিল। জানা ছিল আরও। যেমন, একটা ছবি শুট করতে গেলে তার স্ক্রিপ্ট থাকবে। থাকবেন পরিচালক। কলাকুশলী। থাকবে একটা গোটা ইউনিট। কিন্তু, ডায়েরিটা খুলেই চোখ কপালে উঠে গিয়েছিল এক পুলিশ কর্তার। সেখানে পাতার পর পাতায় তালিকার মতো করে লেখা বিভিন্ন চরিত্রের নাম। যেমন অফিসের বস-সেক্রেটারি, জামাই-শাশুড়ি, শালি-জামাইবাবু, হানিমুন কাপল। আর চরিত্রের নীচে সে সম্পর্কে অল্প কয়েকটি শব্দে ছোট করে নোট। দেখে বোঝার উপায় নেই, সেগুলি আসলে এক একটা স্ক্রিপ্ট।
ডায়েরি লেখক এক জন চলচ্চিত্র পরিচালক। পুলিশ কর্তার প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, তাঁরই নির্দেশনায় ওই স্ক্রিপ্ট থেকে শুটিং চলছিল। কোথায় চলছিল শুটিং? খাস সল্টলেকে। অতি পরিচিত এক বিয়েবাড়ি ভাড়া করে। বাড়ির মালিক-সহ গোটা টিমকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। কারণ, যে সে ছবি নয় ওঁরা নীল ছবির শুটিং করছিলেন। সল্টলেকে নীল ছবি? অবাক হবেন না। শুধু সল্টলেক নয়, কলকাতা শহরের বিভিন্ন জায়গাতে এমন ছবির শুটিং হওয়াটা নাকি আকছার ঘটনা। শুধু কলকাতা নয়, রাজ্যের বেশ কিছু জায়গাতেই হয় এমন শুটিং। পুলিশ কর্তাদের একাংশের এমনই দাবি।
অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কারা?
পুলিশ সূত্রে জানা যাচ্ছে, কলকাতার বিভিন্ন জায়গায় যারা ব্লু-ফিল্মে কাজ করেন তাঁদের বেশির ভাগেরই অন্য পেশা রয়েছে। গোয়েন্দা দফতরের এক পদস্থ অফিসারের কথায়, শতাংশের হিসেবে খুব কম হলেও গৃহবধূরাও আসেন এই পেশায়। বাড়তি আয় তো বটেই, কোনও কোনও ক্ষেত্রে শুধুমাত্র মজা নিতেই অনেকে ‘অভিনয়’ করতে চলে আসেন। অন্য এক পুলিশ অফিসার জানাচ্ছিলেন, বেশ কিছু দিন ধরেই তাঁরা অভিযোগ পাচ্ছিলেন কলকাতার একটি নামী কলেজের বেশ কিছু ছাত্রী কলেজে আসার কিছু ক্ষণের মধ্যেই বেরিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন দিন নানা সময়ে। কিন্তু, কোথায় যায়, কেন যায় সে ব্যাপারে কিছু বোঝা যাচ্ছিল না। অভিযোগ পেয়ে খোঁজখবর করতেই জানা গেল, তারা শহরের একটি অভিজাত এলাকায় এক ফ্ল্যাটে যায়। পরে অভিযান চালিয়ে জানা যায়, ওই ফ্ল্যাটে ব্লু-ফিল্মের শুটিং হত। কলেজছাত্রীদের পাশাপাশি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট থেকে কল সেন্টার কর্মী, এমনকী থিয়েটার শিল্পীও— নানা পেশার ভিড় জমেছে এখন ব্লু ফিল্মের দুনিয়ায়। বয়স যত কম, নির্মাতাদের কাছে তাঁর চাহিদা তত বেশি। দেখতে সুন্দর হওয়ার পাশাপাশি আবেদনের উন্নত মাত্রাবোধও এ ক্ষেত্রে বিচার্য। কাজ পাওয়ার জন্য এগুলি অগ্রাধিকার পায়। শুধু কাজ পাওয়া নয়, পারিশ্রমিকও সেই হিসেব করেই হয়। বয়স কিন্তু তাদের ১৮ থেকে ৩০-এর মধ্যেই।
নীল ছবির শুটিং-এ গ্রেফতার হওয়া এক তরুণী পুলিশের কাছে জানিয়েছেন, তিনি পেশায় থিয়েটার কর্মী। মফস্সলের একটি নাট্যদলে অভিনয়ের পাশাপাশি তিনি সিনেমাতেও কাজ করতে চেয়েছিলেন। খোঁজখবর করতে করতে যোগাযোগ হয় এক জনের সঙ্গে। তিনিই সিনেমার নাম করে নীল ছবিতে নামান ওই তরুণীকে। টাকাপয়সা মন্দ নয়। প্রতি দিনের হিসেবে কাজ করলে প্রায় হাজার আড়াই টাকা পারিশ্রমিক মেলে। আর ঘণ্টাকয়েকের কাজ শেষে ফিরে যাওয়া যায় থিয়েটারের আশ্রয়ে।
তবে নির্মাতাদের চোখ থাকে সব সময় তরুণ মডেলদের দিকে। মডেলিংকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়া ছেলেমেয়েদের অনেকের কাছেই প্রস্তাব আসে নীল ছবির। টলিউডে পেশা শুরু করা এক তরুণ অভিনেতা কেরিয়ারের প্রথম দিকে এমন প্রস্তাব পেয়েছিলেন। দিঘা এবং শঙ্করপুরের হোটেলে কাজ করার প্রস্তাব মেলে। সেই তরুণের তখন পারিশ্রমিক ছিল দৈনিক হাজার টাকা। নীল ছবি তাঁকে দিন প্রতি পাঁচ হাজারের হাতছানি দিয়েছিল। কিন্তু, কোনও কারণে সেই প্রস্তাবে রাজি হতে পারেননি তিনি। কারণ ওই ছবি ইউটিউবে ছাড়া হবে বলে তাকে জানানো হয়েছিল। ইন্ডাস্ট্রির লোকজন জানতে পারলে কেরিয়ারের শুরুটাই নষ্ট হয়ে যাবে ভেবে তিনি আর এগোননি।