খোলা বাজার২৪, শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৫ : দক্ষিণ এশীয় ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হয়েছে অথচ ত্রিবান্দ্রামের লোকজনই জানেই না এ খবর! কেরালায় ফুটবলের সৌরভ ফিরিয়ে আনতে সাফ ফুটবলের যে আয়োজন, তা প্রথম দিনে ধাক্কা খেয়েছে ৫০ হাজার লোকের স্টেডিয়ামে মাত্র শ দেড়েক দর্শকের উপস্থিতিতে! প্রথমত এই আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টের খবর মানুষ জানে না, দ্বিতীয়ত জানানোর প্রয়োজনও মনে করে না আয়োজকরা।
স্টেডিয়ামটাও ত্রিবান্দ্রাম শহর থেকে ট্যাক্সিতে এক ঘণ্টার পথ, জনমানবহীন এক জনপদে। উদ্বোধনী ম্যাচে দর্শক সংকটে যেমন টুর্নামেন্ট ধাক্কা খেয়েছে, তেমনি এত সুন্দর স্টেডিয়ামে অব্যবস্থাপনার ছবি ফুটে উঠেছে শুরু থেকেই। উদ্বোধনী ম্যাচে নেপাল-ভুটান দুই দলই প্রায় একই রঙের জার্সি পরে মাঠে নামে এবং রেফারিও ম্যাচ চালিয়ে গেছেন। পরে বিরতিতে গিয়ে নেপাল লাল জার্সির বদলে নীল জার্সি পরেছে।
আন্তর্জাতিক ফুটবলে এ ধরনের ঘটনাকে হাস্যকর ছাড়া আর কিছু বলার জো নেই। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে আফগানিস্তানের জার্মান কোচ পিটার সেগ্রেট অভিযোগের ঝাঁপি খুলে বসেছিলেন। সরব হয়েছিলেন তাঁদের থাকার রুমের স্বল্পতা এবং প্র্যাকটিস ফিল্ড ঠিকঠাক না পাওয়ার জন্য। তাঁর সঙ্গে সুর মিলিয়ে ভারতীয় দলের কোচ স্টিফেন কনস্ট্যানটাইনও ধুয়ে দিয়েছিলেন আয়োজকদের। এই ব্রিটিশ কোচের চোখে, ‘কোনো কিছুই ঠিকঠাক হচ্ছে না।’ অভিযোগকারীদের ক্ষোভের লক্ষ্যবস্তু ডব্লিউএসজি (ওয়ার্ল্ড স্পোর্টস গ্রুপ), যারা দীর্ঘদিন ধরে এ টুর্নামেন্ট আয়োজন করে আসছে বিভিন্ন দেশে।
এবার করছেন স্থানীয় ত্রিবান্দ্রাম ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনকে সঙ্গে নিয়ে নবনির্মিত গ্রিনফিল্ড স্টেডিয়ামে। তাই বলে দায়িত্ব এড়াতে পারে না দক্ষিণ এশীয় ফুটবল ফেডারেশনও (সাফ)। এই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক হেলালের দাবি দলগুলো নিয়ম না মানায় সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে, ‘আফগান কোচের বাড়াবাড়ি এটা। আফগানিস্তানের ২৭ সদস্যের দল আসার কথা, এসেছে ৪১ সদস্য। এত বেশি লোক এলে তো আয়োজকদের পক্ষে এক হোটেলে রাখা সম্ভব নয়। ভারতীয় দলও তাই করেছে। দলের নির্দিষ্ট আয়তনের কথা মাথায় রেখেই ডাব্লিএসজি হোটেল বুকিং করেছে। তা ছাড়া বড়দিনের উৎসবের কারণে হোটেলগুলোতে নতুন করে রুম পাওয়া বেশ কঠিন।’
প্র্যাকটিস ফিল্ড নিয়ে যে ভজঘট লেগেছে, এ বিষয়ে সাফ সম্পাদক উল্টো দলগুলোকেই দায়ী করেছেন, ‘আগে আয়োজকদের এক রকম প্র্যাকটিসের সূচি দিয়ে পরে অন্য সময়ে আফগানিস্তান মাঠে গেলে তো সমস্যা হবেই। তখন ওখানে অন্য দলের প্র্যাকটিস সূচি থাকে। একটা প্র্যাকটিস ফিল্ড একদম নিজেদের জন্য চায় তারা। এটা তো কোনোভাবে সম্ভব নয়।’ আসলে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ ভারতে হলে এমন হবেই। ছয়বার চ্যাম্পিয়ন হওয়া ভারতীয় ফুটবল দলের মতো আয়োজকরাও এ টুর্নামেন্টকে তেমন গুরুত্ব দেয় না। সাম্প্রতিককালে ভারতে অনুষ্ঠিত কয়েকটি আসরেও তা দেখা গেছে, নেপাল-বাংলাদেশ-পাকিস্তানে হলে যেমন একটা ফুটবলীয় আমেজ থাকে, ভারতে এলে তা হারিয়ে যায়। ২০১১ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাফেও কোনো আলোড়ন ছিল না। যতই আইএসএল হোক, ফুটবল-প্রিয়তায় অনেক পেছনে ভারত।
তাদের ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে ফুটবলের চেয়ে বিদেশি তারকারাই থাকে মানুষের আকর্ষণের কেন্দ্রে। হেলাল যোগ করেছেন মিডিয়ার অনাগ্রহের কথাও, ‘মিডিয়ার একটা বড় ভূমিকা রাখা উচিত টুর্নামেন্ট সফল করার জন্য। কিন্তু এখানকার মিডিয়াও অতটা আগ্রহী নয় ফুটবলে।’ সব মিলিয়ে ভারতের ফুটবলতীর্থ কেরালায় সোনালি অতীত ফিরে আসার জোর কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রেসবক্সে বসে খাঁ-খাঁ গ্যালারি যদি হয় ফুটবলবিরাগের উপসর্গ, তবে সেটি উপশমের লক্ষণ নেই স্থানীয় পত্র-পত্রিকায়। মালয়ালাম ভাষা তো আর পড়া সম্ভব নয়, তবে স্থানীয় এবং সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকগুলো কেরালা সংস্করণে সাফ ফুটবলের খবরাখবরের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের কেরালা সংস্করণ এ টুর্নামেন্টের চেয়ে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড কোচ লুই ফন হালের ভবিষ্যৎ নিয়ে বেশি চিন্তিত। স্থানীয় মাতৃভূমি পত্রিকায় শ্রীলঙ্কা-নেপাল ম্যাচের খবর আছে বটে, তবে দেখে বোঝার উপায় নেই টুর্নামেন্টে খেলছে তাদের নিজেদের দল ভারতও। নাহ্, সাফের পালে সমর্থনের হাওয়া লাগার মৃদু সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে না ভারতের একদার ফুটবলতীর্থে!