খোলা বাজার২৪,শনিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৫: বাগমারায় কাদিয়ানি জামে মসজিদে শুক্রবার জুমার নামাজের সময় আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী নিহত হলেও বেঁচে যাওয়া ভাগ্যবান তিনজন রাজশাহী মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। যাদের গা ঘেঁষে নামাজের কাতারে দাঁড়িয়েছিলো কালো জ্যাকেট, নীল রঙের জিন্সের প্যান্ট এবং মুখে মাফলার প্যাঁচানো হামলাকারী যুবকটি।
হামলার পর গুরুতর আহত ওই তিনজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তারা সাংবাদিকদের কাছে হামলার ঘটনার পূর্ব-পর তুলে ধরেন। এসময় তারা ওই হামলাকারী যুবকের সঙ্গেও কথা বলেছেন বলে জানিয়েছে। এসময় হামলাকারী মচমৈলে তার এক বন্ধু আছে তার সঙ্গেই বেড়াতে এসেছেন বলে মুসল্লিদের জানায়। সে নিজেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের ছাত্র বলে পরিচয় দেয়।
শুক্রবার মসজিদের ভেতরে ঠিক কি ঘটে ছিলো আহতরা তাদের মুখ দিয়েই সে বিভৎস ঘটনার বর্ণনা করেন এভাবে।
সৈয়দপুর গ্রামের স্কুলছাত্র নয়ন (১২) জানান, মসজিদে কোরআন শিক্ষার তালিম চলছিলো কয়েকদিন থেকেই। তার বয়সের গ্রামের কয়েকজনের সঙ্গে সেও কয়েকদিন থেকেই মসজিদে ছিলো। শুক্রবার আজানের পরে নামাজের প্রস্তুতি শুরু হয়। ওজু করে পেছনের সারিতে নামাজ পড়ার জন্য দাঁড়ায় সে। প্রথম রাকাত নামাজ শেষ হওয়ার পরে দ্বিতীয় রাকাতের রুকুতে গিয়েই বিকট শব্দ তার কানে আসে। ডান কোমরে আঘাত অনুভব করে সে। নামাজ থেকে ছিটকে অল্প দূরে পড়ে যায়। এরপরে সে আর কিছুই বলতে পারে না।
একই গ্রামের সাহেব আলী তালুকদার (৪০) জানান, মসজিদে ওই যুবককে তিনি অনেক আগে থেকেই লক্ষ্য করেছেন। পেছনে দাঁড়িয়ে আত্মঘাতি হামলাকারী সুন্নত নামাজ পড়ছিলো। নামাজের ফাঁকে তাকে সামনের সারিতে যাওয়ার জন্য বলেন। এরপর সে ‘আত্মঘাতি হামলাকারী’ জুমার নামাজ শুরুর সময় সামনের সারিতে তার ডান পাশে এসে দাঁড়ায়। সে একেবারেই স্বাভাবিক ও শান্ত ছিলো। এসময় তার মধ্যে কোনো চঞ্চলতা দেখা যায়নি। রুকুতে যাওয়ার পরেই বিকট শব্দ। এরপরেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন তিনি।
আহত ময়েজ উদ্দিন তালুকদার (৩৫) জানান, মসজিদে মোট দুই কাতারে নামাজ হচ্ছিলো। তিনি দ্বিতীয় অর্থাৎ শেষ কাতারে বসেছিলেন। আত্মঘাতী হামলাকারী তার সামনের সারিতেই ছিলো। মসজিদে প্রবেশের সময় হামলাকারীকে নামাজ পড়তে দেখেছিলেন তিনি। অপরিচিত মুখ হিসেবে কয়েকবার তার দিকে তাকিয়েও ছিলেন। জুমার নামাজে দাঁড়ানোর পর প্রথম রাকাত ভালোভাবেই শেষ হয়। দ্বিতীয়বার রুকুতে একটি শব্দ হয়। এরপরেই দেখা যায় সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা আত্মঘাতী হামলাকারী রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এরপরেই নিজের তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন তিনি এবং দেখতে পান যে তারও শরীর থেকে রক্ত ঝরছে।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সান্তু জানান, হামলাকারী যুবকটি ছিলেন বহিরাগত। মসজিদে নামাজ পড়ার আগে স্থানীয়ার তার পরিচয় জানতে চাইলে অচেনা ওই যুবক জানিয়েছিলেন, মচমৈলে তার এক বন্ধু আছে। তার সঙ্গেই বেড়াতে এসেছেন। হামলাকারী নিজেকে রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউশনের ছাত্র হিসেবে পরিচয় দেন।
এদিকে বাগমারার মচমৈল চকপাড়া গ্রামটি প্রত্যন্ত পল্লীতে। যোগাযোগ ব্যবস্থা একেবারেই নাজুক। এ এলাকায় বসবাস করে কাদিয়ানি সম্প্রদায়ের কিছু লোকজন। মচমৈল চকপাড়া কাদিয়ানি জামে মসজিদে তারা নামাজ আদায় করেন। বোমা হামলার সময় মসজিদে নামাজ আদায় করছিলেন ২৫ থেকে ৩০ জন মুসল্লি। এর মধ্যে পর্দা টানিয়ে নারী মুসল্লিরাও নামাজ পড়ছিলেন।
এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বলেন, বোমা বিস্ফোরণ ঘটানো ওই যুবকের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), পুলিশের স্বতন্ত্র বিশেষায়িত তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনসহ (পিবি আই) পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।
স্থানীয় লোকজন জানান, ২০০০ সালে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। আহমদিয়া সম্প্রদায়ের ২৫/৩০ লোকজন এই মসজিদে নামাজ আদায় করে আসছেন। তবে হাটবাজে মসজিদের মুসল্লি সংখ্যা বাড়ে।