Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

10খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫: সীমিত সম্পদ নিয়ে জনগণের জীবনমান উন্নয়নে বাংলাদেশের সফলতার ব্যাপক প্রশংসা করে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ সেলিম জাহান বলেছেন, আরও এগিয়ে যেতে বাংলাদেশের আর কোনো সাহায্য নয়, প্রয়োজন বাণিজ্য ও অভিবাসন ক্ষেত্রে ‘নানা ধরনের সুযোগ’।
মানব উন্নয়ন ও জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন কার্যালয়ের পরিচালক বাংলাদেশের নাগরিক সেলিম মনে করেন, “আমাদের জন্য আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা ‘খুব অর্থহীন’। তৈরি পোশাক ও রেমিটেন্স থেকে আমাদের ৩০ বিলিয়ন ডলারের বেশি আয় হয়, যেখানে আনুষ্ঠানিক উন্নয়ন সহযোগিতা বাবদ আসে মাত্র দুই বিলিয়ন ডলার।”
“আমরা বাণিজ্য ও অভিবাসন ক্ষেত্রে নানা ধরনের সুযোগ চাই, যেগুলো আমরা প্রত্যাশাও করি।”
২০০০ সালে জাতিসংঘ প্রণীত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যর (এমডিজি) মেয়াদ শেষ হচ্ছে চলতি মাসে। জানুয়ারি থেকেই শুরু হবে আরও বৃহৎ পরিসরে এসডিজি কর্মপরিকল্পনা; যার মেয়াদ ২০৩০ সাল পর্যন্ত।
সেলিম জাহান ১৯৯২ সালে জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচিতে (ইউএনডিপি) যোগ দেওয়ার আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন।
জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন কার্যালয়ের উপপরিচালক হিসেবে ১৯৯৩ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত নয়টি বৈশ্বিক মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রণয়নের ‘কোর টিমের’ সদস্য ছিলেন তিনি।
মানব উন্নয়ন, দারিদ্র ও ঝুঁকি, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি, বৈষম্য, সুষম প্রবৃদ্ধি, এমডিজি ও ২০১৫ পরবর্তী উন্নয়ন এজেন্ডা বিশেষজ্ঞ সেলিম জাহান গত ২০ ডিসেম্বর ঢাকায় জাতিসংঘ মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।
এতে বলা হয়, মানব উন্নয়ন সূচকগুলোতে ‘ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে’ বাংলাদেশ। গত ২০ বছরে বাংলাদেশের মানব উন্নয়ন সূচক বেড়েছে ৬৮ ভাগ।
প্রতিবেশী ভারত ও পাকিস্তানের তুলনায় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় কম হলেও গড় আয়ু, শিশু মৃত্যু ও নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে রয়েছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়।
২০ বছর আগে এই তিন দেশেই গড় আয়ু ছিল প্রায় ৫৫ বছর। বর্তমানে বাংলাদেশে এই গড় আয়ু ৭১ বছরের বেশি; যেখানে ভারত ও পাকিস্তানে তা প্রায় ৬৬ বছর।
জনগণের জীবনমানের উন্নয়নের মাধ্যমে এটা সম্ভব হয়েছে বলে মনে করেন জাতিসংঘ কর্মকর্তা সেলিম জাহান।
‘অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও মানব উন্নয়নের মধ্যে কোনো স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “আমরা এক জায়গা থেকেই শুরু করেছিলাম। কিন্তু আমাদের গড় আয়ু বর্তমানে তাদের (ভারত-পাকিস্তান) থেকে বেশি।”
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট নীতি, সামাজিক ও সুরক্ষা খাতে ক্রমাগত ব্যয় বৃদ্ধি, জনগণের সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনী শক্তি এবং নারীর ক্ষমতায়ন মানব উন্নয়নে বাংলাদেশের সফলতার পেছনে কাজ করেছে।
বাংলাদেশ সরকার ছয় মাসের মাতৃত্বকালীন যে ছুটি দিচ্ছে তা অনেক উন্নত দেশেও নেই- জানিয়ে জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ জাহান বলেন, এর পাশাপাশি এনজিও, গণমাধ্যম ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতো সিভিল সোসাইটির সংস্থাগুলোর বক্তব্য সরকারকে প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নীতি প্রণয়নে সহযোগিতা করেছে।
মানব উন্নয়ন অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে জনগণের সুযোগ বাড়িয়ে দেয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “মানব উন্নয়ন সূচকে বাংলাদেশের সফলতা ব্যাপক।”
শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও পুষ্টি এবং সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টির সক্ষমতা বাড়ায় এই সফলতা।
এসময় মানব উন্নয়নে সব স্তরের মানুষের অংশগ্রহণের ওপর জোর দেন জাতিসংঘের এই বিশেষজ্ঞ।
‘বৈষম্য’ চিহ্নিতকরণ এসডিজি অর্জনের এক ‘এন্ট্রি পয়েন্ট’ হতে পারে মন্তব্য করে সেলিম বলেন, এমডিজি বাস্তবায়নের অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে এসডিজি অর্জনে সহায়তা করবে।
দীর্ঘদিন জাতিসংঘে কর্মরত এই বাংলাদেশি বলেন, “বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। আমরা বাংলাদেশকে নিয়ে খুবই আশাবাদী। দেশের বাইরে যারা থাকেন তারা মনে করেন, আমাদের জনগণের সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবনী ও ঘুরে দাঁড়ানোর শক্তি অনেক বেশি; আর সে কারণেই আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।”
এসময় যুব সমাজকে নিয়েও আশার কথা শুনিয়ে ঋণ এবং প্রযুক্তিগত সহায়তার মাধ্যমে তাদের জন্য নতুন নতুন সুযোগ সৃষ্টির পরামর্শ দেন তিনি।
বাংলাদেশ যানজট বা পরিবেশগত যেসব সমস্যায় আছে সেগুলো উন্নয়ন প্রক্রিয়ারই অংশ বলে মনে করেন জাতিসংঘের মানব উন্নয়ন কার্যালয়ের পরিচালক সেলিম।