Sun. May 4th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

42খোলা বাজার২৪,রবিবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৫: বেতন কাঠামোর বৈষম্য নিরসনে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দাবি চলতি মাসের মধ্যে মেনে না নিলে একযোগে সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ করার হুমকি দিয়েছেন তারা।
রোববার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ হুমকি দেন।
তিনি বলেন, ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি থেকে অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি জানানো হয়েছে। এই মাসের মধ্যে দাবি না মানলে ২ জানুয়ারি ফেডারেশনের সভা থেকে কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
“সেটা কমপ্লিট শাটডাউনের মতো কর্মসূচিও হতে পারে।”
অধ্যাপক ফরিদ বলেন, “আমরা শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার ব্যাঘাত না ঘটিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করেছিলাম। এখন আমাদের পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে। নিজেদের মর্যাদার প্রশ্নে এখান থেকে ফিরে যাওয়ার আর কোনো সুযোগ নেই।”
গত ৬ ডিসেম্বর বৈঠকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত শিক্ষকদের তিনটি দাবি মেনে নেওয়ার প্রতিশ্র“তি দিলেও বেতন কাঠামোর গেজেটে তার মধ্যে প্রথম দুটির প্রতিফলন ঘটেনি বলে তিনি অভিযোগ করেন।
“অর্থমন্ত্রী কথা দিয়ছিলেন, কিন্তু রাখেননি; আমরা প্রতারিত হয়েছি। উনার মতো বয়োজ্যেষ্ঠ একজন মন্ত্রীর কথায় মূল্য না থাকলে আমরা আর কার উপর আস্থা রাখব?”
শিক্ষকদের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রজ্ঞাপন জারির আগে ওই দিনের বৈঠকে যে তিনটি দাবি বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তি অর্থমন্ত্রী দিয়েছিলেন, সেগুলো হচ্ছে- অষ্টম বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সপ্তম জাতীয় বেতন কাঠামোর অনুরূপ সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বহাল থাকবে এবং এক্ষেত্রে সপ্তম বেতন স্কেলে বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে না; জ্যেষ্ঠ সচিবদের জন্য সৃষ্টি করা সুপার গ্রেডে সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপকদের একটি অংশকে শতকরা হারে উন্নীত করার বিধান এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের প্রারম্ভিক বেতন সপ্তম গ্রেডে সম্ভব না হলে অষ্টম গ্রেড থেকে শুরু করা হবে।
কিন্তু প্রজ্ঞাপনে প্রথম দুটি দাবির প্রতিফলন ঘটায় সব প্রতিশ্র“তি পূরণ করে অষ্টম বেতন কাঠামো সংশোধনের পর আবার গেজেট প্রকাশের দাবি জানিয়ে অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।
তবে তৃতীয় প্রতিশ্র“তিটি পূরণ করায় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন শিক্ষকরা।
গত ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা সর্বোচ্চ ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন ৮ হাজার ২৫০ টাকা মূল ধরে সরকারি কর্মচারীদের জন্য অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদন দেওয়ার পর তাতে জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের অবনমন ঘটেছে অভিযোগ তুলে গত কয়েক মাস ধরে আন্দোলন চালিয়ে আসছেন দেশের ৩৭টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বলছেন, আমলারা নিজেদের জন্য বিশেষ গ্রেড তৈরি করলেও শিক্ষকদের সিলেকশনগ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক পদটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। ফলে অধ্যাপকরা আমলাদের নিচের স্কেলে থাকছেন।
তাদের দাবির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অষ্টম বেতন কাঠামো অনুমোদনের দিনই ‘বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’-কে দায়িত্ব দেয় মন্ত্রিসভা।
এরপর ১৬ সেপ্টেম্বর অর্থমন্ত্রীকে প্রধান করে এই কমিটি পুনর্গঠনের মাধ্যমে শিক্ষকদের বেতন ও মর্যাদা নিয়ে আপত্তি বিবেচনা করে তা মীমাংসার দায়িত্ব দেওয়া হয়।
শিক্ষামন্ত্রী ছাড়াও এই কমিটিতে শিল্প, বাণিজ্য ও আইনমন্ত্রী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী এবং অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়।
কিন্তু এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে অষ্টম বেতন কাঠামো চূড়ান্ত করার কথা বলে প্রজ্ঞাপন জারি করে প্রতারণা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক এএসএম মাকসুদ কামাল।
এর ব্যাখ্যায় সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, একদিকে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের দেওয়া প্রতিশ্র“তি ‘রক্ষা করা হয়নি’, অন্যদিকে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘বে আইনিভাবে’ একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে।
তার অভিযোগ, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে অত্যন্ত চাতুর্যের সঙ্গে এই পরিপত্রটি জারি করে সেটিকে ১ নভেম্বর তারিখে বেতন বৈষম্য দূরীকরণ সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির সভার গৃহীত সুপারিশ বলে চালানো হয়েছে।
“আমরা মাননীয় আইনমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর মাধ্যমে জানতে পেরেছি যে, এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত বেতন বৈষম্য নিরসন সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি নেয়নি। পরিপত্রের ওই সিদ্ধান্ত যে সভায় নেওয়া হয়নি- অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাননীয় প্রতিমন্ত্রীও তা নিশ্চিত করেছেন।”
পরিপত্রটি অর্থমন্ত্রী ছাড়া বেতন বৈষম্য নিরসন কমিটির অন্য কোনও সদস্য কর্তৃক অনুসমর্থিত বা অনুস্বাক্ষরিত হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
“পরিপত্রটি মন্ত্রিসভা কমিটির সিদ্ধান্ত পরিপন্থি একটি বিকৃত ও বিতর্কিত দলিল, যা বিদ্যমান আইনের দৃষ্টিতে গুরুতর অপরাধও বটে।”
মাকসুদ কামাল বলেন, ওই পরিপত্রে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল উঠে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যেষ্ঠ অধ্যাপকদের গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ তে যাওয়ার ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে একটি কমিটির পুর্বানুমোদনক্রমে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক তা কার্যকর করার কথাও বলা হয়েছে।
“আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত ১৯৭৩ সালের বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের সরাসরি পরিপন্থি এবং তা বাস্তবায়নের এখতিয়ারও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের নেই।”
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক নাজমা শাহীন, অধ্যাপক এজেএম শফিউল আলম ভূইয়া, অধ্যাপক নিজামুল হক ভূইয়া, অধ্যাপক আবুল মনসুর আহমদ, অধ্যাপক লাফিফা জামাল উপস্থিত ছিলেন।