Sat. May 3rd, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

2খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : বন্দর নগরীতে গ্রেপ্তার ‘জেএমবি সদস্যের’ তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র বলে গোয়েন্দা পুলিশের দাবি; তারা বলছে, এদের একজন একজন ইসলামী ছাত্র শিবিরে যুক্ত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলে আসছেন, বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় সাম্প্রতিক জঙ্গি হামলায় জামায়াত-শিবিরের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হকও সম্প্রতি বলেন,“এই পর্যন্ত যারা (জঙ্গি হামলাকারী হিসেবে) গ্রেপ্তার হয়েছেন, অধিকাংশই জামায়াত-শিবিরের লোক।”
শনিবার সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চট্টগ্রাম নগরীর নালাপাড়া, কাজীর দেউরী ও কসমোপলিটন এলাকায় অভিযান চালিয়ে নাইমুর রহমান নয়ন (২৫), ফয়সাল মাহমুদ (২৬) ও শওকত রাসেলকে (২৬) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, রাসেলের স্বীকারোক্তির ভিত্তিতে হাটহাজারি উপজেলার আমান বাজার এলাকায় জেএমবির আঞ্চলিক কমান্ডার ফারদিনের বাসার সন্ধান পায়; সেখান থেকে রাইফেল, বিস্ফোরক ও সামরিক পোশাক উদ্ধার করা হয়।
অভিযানে থাকা গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সন্তোষ চাকমা বলেন, “তিনজনই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী। নয়ন ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল বলে আমরা জেনেছি।”
তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আলী আজগর চৌধুরী বলেন, “পুলিশ আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে তাদের আইডি নম্বর দিতে বলেছি। পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
নয়ন, ফয়সাল ও রাসেল ‘দলবেঁধে’ চলাচল করতেন এবং বিশ্ববিদ্যলয়ের সহপাঠীদের সঙ্গে তাদের তেমন যোগাযোগ ছিল না বলে দাবি করেন এসআই সন্তোষ।
পুলিশ বলছে, বিভিন্ন সময়ে নাম আসা জেএমবি কমান্ডার মো. ফারদিন ওরফে নোমানও গ্রেপ্তারকৃতদের সহপাঠী ছিলেন। তবে তার ড্রপআউট হয়েছে। একসঙ্গে পড়াশোনা করায় তাদের সঙ্গে ফারদিনের পরিচয় ছিল।
নিজেদের জেএমবি সদস্য হিসেবে স্বীকার না করলেও ফারদিনের সঙ্গে যোগাযোগের বিষয়টি তারা স্বীকার করেছেন বলে জানান এসআই সন্তোষ।
ফারদিনের বাসা (জেএমবির আস্তানা) থেকে উদ্ধার এমকে-১১ রাইফেলটি বান্দরবান থেকে সংগ্রহ করা জানিয়ে তিনি বলেন, “রাইফেলটি আনার সময় ফারদিনের সঙ্গে নয়ন, ফয়সাল ও রাসেলও ছিল।”
গত ২৩ সেপ্টেম্বর নগরীর সদরঘাট থানার মাঝিরঘাটে সাহা করপোরেশনে ছিনতাইয়ের ঘটনায় ফারদিন আহত হন।
“তখন সে মাঝিরঘাট থেকে পালিয়ে তার আমান বাজারের বাসায় যায়। এরপর রাসেল তার প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য ওষুধ নিয়ে সেখান গিয়েছিল।”
মাঝিরঘাট থেকে আমান বাজার
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলেন, মাঝিরঘাটে ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে জেএমবিকে নিয়ে সন্দেহ হয় তাদের।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর মাঝিরঘাটে দুই ছিনতাইকারী তাদের সঙ্গে থাকা বিস্ফোরকের বিস্ফোরণে মারা যান। তাদের লাশ তখন বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন হয়েছিল।
পরে তদন্ত চালাতে গিয়ে এতে জঙ্গি সম্পৃক্ততার বিষয়টি প্রকাশ পায়। তাদের একজন মো. রফিক ও অন্যজন মো. রবিউল বলে জানতে পারে পুলিশ।
নিহতদের শরীরে গ্রেনেডের স্প্লিন্টার পাওয়া গিয়েছিল, যা ছিনতাইকারীরা সাধারণত ব্যবহার করে না। এ থেকে জঙ্গিদের জড়িত থাকার সন্দেহ হয় বলে গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তার জানান।
“এর সূত্র ধরে অক্টোবর মাসের প্রথম দিকে মাহবুবুর রহমান ওরফে খোকন ও মো. শাহজাহান ওরফে কাজল নামে দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়; যাদের ছোটভাই রফিক।”
একই সময়ে বুলবুল আহমেদ সরকার ওরফে ফুয়াদ ও মো. সুজন ওরফে বাবুকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
৫ অক্টোবর কর্ণফুলী থানার খোয়াজনগর এলাকায় একটি বাসায় অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ গ্রেনেডসহ তৌফিকুল ইসলাম ওরফে জাবেদ ওরফে রানাকে গ্রেপ্তার করা হয়, যিনি জেএমবির সামরিক কমান্ডার ছিলেন বলে গোয়েন্দাদের দাবি।
গ্রেপ্তরের পরদিন ভোরে নগরীর অক্সিজেন এলাকায় গ্রেনেড উদ্ধার অভিযানের সময় বিস্ফোরণে জাবেদ নিহত হন বলে পুলিশ জানায়।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা বাবুল বলেন, “ওই সময় ফুয়াদের কাছ থেকে ফারদিনের নাম জানা গিয়েছিল। ফারদিন স্থানীয়ভাবে জেএমবির খরচ চালাত।”
গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সন্তোষ বলেন, ফারদিনের সন্ধানে বিভিন্নভাবে তদন্ত করতে গিয়ে শনিবার নয়ন, ফয়সাল ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।
“তাদের ব্যাপারে তদন্তের পাশাপাশি ফারদিনের সন্ধানে অভিযান চলছে,” বলেন তিনি।