Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

1451308216খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : নির্বাচনের ওপর ক্ষমতাসীনরা অশুভ প্রভাব বিস্তারের পরিকল্পনা করেছে অভিযোগ করে এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহবান জানিয়েছেন খালেদা জিয়া।
বিকালে গুলশান কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন পৌর নির্বাচনের ভোটগ্রহনের দুইদিন আগে দেশবাসীল প্রতি ভোট দেয়ার আহবান জানান। একই সঙ্গে দলের মনোনীত মেয়র প্রার্থীকে ধানের শীর্ষ ভোট দিতে দেশাসীর প্রতি আবেদনও জানান তিনি।
তিনি বলেন,গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অংশ হিসেবে আমরা পৌর সভা নির্বাচনে্ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছি। আমরা শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দেশবাসীর প্রতি আমার আহবান, আপনারা সবাই মিলে দলে দলে ব্যাপক সংখ্যায় ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের ভোট রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করুন। শাসক দল নির্বাচনের ওপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের যে পরিকল্প না করেছে, তা শান্তিপূর্ণ পন্থায় ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ান।
আমরা দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই, আসন্ন পৌর মেয়র নির্বাচনে আমাদের মনোনীত প্রার্থীদেরকে ধানের শীষে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ভুমিকা রাখবেন।
পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি নির্বাচন কমিশন নাকচ করে দেয়ার পর আবারো অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনা মোতায়েনের দাবিও জানান বিএনপি চেয়ারপারসন।
জানুয়ারি থেকে টানা তিন মাসের বিরোধী আন্দোলনে গুলশানের কার্যালয়ে অবস্থান শেষে কয়েকটি রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বক্তব্য দিলেও ৮ মাস পর এই প্রথম বিএনপি চেয়ারপারসন আনুষ্ঠানিকভাবে সংবাদ সম্মেলনে আসলেন। সর্বশেষ গত ২৫ এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনের প্রচারনার শেষ দিনে এই কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছিলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেয়ার সময়ে খালেদা জিয়ার টেবিলের সামনে ধানের শীর্ষ প্রতীক ছিলো। সংবাদ সম্মেলনের পর তিনি সেই প্রতীক হাতে নিয়ে সাংবাদিকদের দেখান।
সংবাদ সম্মেলনে কোনো প্রশ্ন নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।৩০ মিনিট স্থায়ী বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসন দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, আইনশৃঙ্খলা, পৌর নির্বাচন, ২০১৪ সালের একদলীয় জাতীয় নির্বাচনসহ সরকারের অপশাসনের চিত্র তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্য কয়েকটি বেসরকারি টেলিভিশন সরাসরি সম্প্রচারের সকল আয়োজন করলেও তারা কেউ সরাসরি সম্প্রচার করতে পারেনি বলে সংবাদ সম্মেলনের পর প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান অভিযোগ করেন।
পৌর নির্বাচনে ক্ষমতাসীনরা ব্যাপকভাবে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ নির্বাচনকে প্রহসনের পরিণত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধী দলের অফিস ও প্রার্থীদের ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারনায় বাঁধা দেয়া, ভয়-ভীতি প্রর্দশন, গ্রেপ্তার ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। কেবল তাই নয়, বিরোধী দল সমর্থক ভোটার ও সম্ভাব্য এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে।
সস্ত্রাসী ছাড়াও আইনশৃঙ্খলঅ বাহিনীর একশ্রেনীর সদস্যকেও এই অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। শাসক দলে সন্ত্রাসীরা বিভিণ্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া ও হামলা চালালেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না।
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে তিনি বলেন,শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আচরণবিধি বেপরোয়াভাবে লঙ্ঘন করে চলেছেন। এর কিছু কিছু খবর সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হলেও মামুলি কারণ দশানো নোটিশ এবং তারপর লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন দায় সারছে।
সেনা মোতায়েনের দাবি আবারো জানিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ আমরা জানি কত ভয়াবহ পরিস্থিতি হলে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করবেন। আমরা জানি সেনা মোতায়েন কমিশন ও সরকারের এতো অনাগ্রহ কেনো?
অতীতেও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন নির্বাচন ‍সুষ্ঠূ  ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই আমরা আবারো পৌর নির্বাচনে সেনা মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি। নিজ উদ্যোগেই এই কাজটি করার সাংবিধানিক ক্ষমতায় নিবার্চন কমিশনের রয়েছে।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন নির্বাচনের কথা উল্লেখ করে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে খালেদা জিয়া বলেন, ‘‘ কলংকিত সেই নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের তথাকথিত বিরোধী দলটিও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীত্ব নিয়ে সরকারেও অংশ হয়ে আছে। এই অদ্ভুত ব্যবস্থা কোনোক্রমেই গণতন্ত্র নয়। ওই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহনযোগ্যতা পায়নি।
ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের নৈতিক বৈধ্যতার সংকট রয়ে গেছে। এই সংকট কাটাতে প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ নির্দলীঢ ব্যবস্থার অধীনে সবার অংশগ্রহনমূলক নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
আসন্ন পৌর নির্বাচনে গণমাধ্যমের ওপর সরকার ও নির্বাচন কমিশনের বিধি-নিষেধের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এবার সাংবাদিকরা যাতে নির্বাচন চলাকালে তাদের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভবে পালন করতে না পারেন, তারজন্য নানা ধরণের অপচেষ্টা চলছে। ভোট কেন্দ্রে গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছ্।সাংবাদিকদের অনুমতিপত্র দেওয়ার ব্যাপারে সরকার দলের নেতাদের গোপন মতামত নেয়া হচ্ছে।কেবল তাই নয়, এই সরকার বিকল্প মিডিয়ার উপরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মিডয়া ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের ওপরও খবরদারি করছে।
পৌর নির্বাচনে ভোটারদের প্রতি আহবান জানিঢেয় একটি বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন,সরকারের পরোক্ষ চাপের কারণে ইলেক্ট্রনিক মিডয়াগুলো সেই বিজ্ঞাপনটি প্রচারে রাজি হয়নি। এসব ঘটনা সরকারের অগণতান্ত্রিক আচরণ আরো ন্যাক্কারজনকভাবে ফুটে উঠেছে। তাই আমরা বিশ্বাস করি, এসব সীমাবদ্ধতার মধ্যেও এবারের পৌর নির্বাচননে গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা আগের মতো সাহসের সঙ্গে সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বলিষ্ট ভুমিকা পালনে সচেষ্ট থাকবেন।
সারাদেশে জঙ্গি উত্থানের প্রসঙ্গে তার সরকারের আমলে নেয়া পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘‘ ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সময়ে আওয়ামী লীগের শাসনামলে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটেছিলো। কিন্তু তারা সেটা দমন না করে বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপিয়ে দিয়েছিলো। আমরা পরবর্তিকালে সেই জঙ্গিবাকে সাফল্যের সঙ্গে দমন করতে পেরেছি। দেশে বিলুপ্তপ্রায় জঙ্গিবাদীরা এখন আবেো নতুন শক্তিতে সংগঠিত হয়েছে কিনা এবং তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে কিনা তা নিয়ে সবখানে সংশয় ও উতকন্ঠা সৃষ্টি হয়েছে।
এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরণের বিপদকে সম্মিলিতভাবে ও জাতীয় ঐক্যসৃষ্টির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। চারদিকে অশুভ আলামত ও বিপদজনক সব হামলার ঘটনার ব্যাপারে আমি সকলকে সর্তক ও সজাগ থাকার আহবান জানাচ্ছি। দেশে যাতে কোনোভাবেই নৈরাজ্যকর নিরাপত্তা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সেদিকে আমি সকলকে নজর রাখতে বলবো।
সংবাদ সম্মেলনে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, আসম হান্নান শাহ, জমিরউদ্দিন সরকার, আবদুল মঈন খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, যুগ্ম  খালেদা জিয়ার প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান, বিশেষ সহকারি শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস প্রমূখ নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
২০ দলীয় জোট নেতাদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আবদুল হালিম, বিজেপির আন্দালিব রহমান পার্থ, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, ইসলামি ঐক্যজোটের মজিবুর রহমান পেশোয়ারী, জাগপার শফিউল আলম প্রধান, খন্দকার লুতফর রহমান, এনডিপির খন্দকার গোলাম মূর্তাজা, লেবার পার্টির মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, এনপিপির ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, মুসলিম লীগের এএইচএম কামরুজ্জামান খাঁন, ন্যাপ গোলাম মোস্তফা ভঁইয়া, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, ন্যাপ-ভাসানীর আজহারুল ইসলাম, সাম্যবাদী দলের সাঈদ আহমেদ, জমিয়তের উলামে ইসলামের মাওলানা মহিউদ্দিন ইকরাম প্রমূখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ, আস্সালামু আলাইকুম।
বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে আমি প্রথমেই স্বাধীনতা যুদ্ধের অমর শহীদদের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জানাচ্ছি অভিবাদন। অনেক দিন পর আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর উদ্দেশে কিছু কথা বলার জন্য আজকের এই আয়োজন। চিকিৎসার জন্য দুই মাস আমি দেশের বাইরে ছিলাম। বর্তমানে আপনাদের ও দেশবাসীর দোয়ায় আল্লাহ্র রহমতে অনেকটাই সুস্থ  আছি। আপনারা জানেন, লন্ডনে আমার পরিবারের সদস্যদের ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পেয়েছি। এটি আমার জন্য ছিল একদিকে পরম আনন্দের, অন্যদিকে গভীর বেদনার। আমার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকো আমার কাছ থেকে অনেক দূরে বিদেশে অবস্থানকালে আমাদের ছেড়ে চিরতরে চলে গেছে। আমি দেশবাসীর কাছে কৃতজ্ঞ, তারা কোকোর শেষযাত্রায়বিপুলভাবে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন।তার জানাযায় লাখ লাখ মানুষসমবেত হয়েছিল। এর মাধ্যমে দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছে যে, শত অপপ্রচার সত্তে¡ও তারা আমাদেরকে ভুল বোঝেনি। এই নীরব ভালোবাসা সক্রিয় সমর্থনে পরিণত হলে কোনো নিষ্ঠুর ফ্যাসিবাদীর পক্ষেই ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি চিকিৎসার জন্য বিদেশে গেলেবিভ্রান্তি ছড়ানো হয়েছিল যে, আমি আদৌ দেশে ফিরবো না। আমি বরাবরই বলেছি যে, দেশের বাইরে আমার কোনো ঠিকানা নেই। বাংলাদেশই আমার একমাত্র ঠিকানা। যতদিন বাইরে ছিলাম প্রতি মুহূর্তেই ভাবনায় ছিলো দেশ। মনে পড়তো নির্যাতিত ও অধিকার-বঞ্চিত দেশবাসীর কথা। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি, কখন দেশে ফিরব।
উপস্থিত সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি বিদেশে অবস্থানকালে দেশে উদ্বেগজনক কিছু ঘটনা ঘটেছে এবং এখনও বিক্ষিপ্তভাবেঘটে চলেছে। বিদেশীরা আক্রান্ত হচ্ছে। ভিন্নমতের মানুষের ওপর সশস্ত্র চোরাগোপ্তা হামলা চলছে। ধর্মীয় সমাবেশ, মসজিদ ও অন্যান্য উপাসনালয় আক্রান্ত হচ্ছে। নিরাপত্তা বেষ্টনির ভেতরেও ঘটছে বোমা হামলার মতো সন্ত্রাসী ঘটনা। এ সবের পেছনে কারা জড়িত তা নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায় থেকে পরস্পর-বিরোধী নানামুখী বক্তব্য আসছে।দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও এসব ঘটনায় উদ্বিগ্ন। আওয়ামী লীগের ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদের শাসনকালে দেশে পবিত্র ইসলাম ধর্মেরঅপব্যাখ্যা করে জঙ্গীবাদের উত্থান হয়েছিলো।কিন্তু তারা সেই জঙ্গীদের দমন না করে বিরোধীদলের উপর  দোষ চাপিয়ে নির্যাতন চালাবার পথ বেছে নিয়েছিলো।আমরা পরবর্তীকালে সেইজঙ্গীবাদকে সাফল্যের সঙ্গে দমন করতে পেরেছিলাম। বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় জঙ্গীবাদীরা এখন আবারো নতুন শক্তিতে সংগঠিত হয়েছে কি-না এবং তাদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছে কি-না, তা নিয়ে সবখানে সংশয় ও উৎকণ্ঠার সৃষ্টি হয়েছে। এটা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এক অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ধরণের বিপদকে সম্মিলিতভাবে এবং জাতীয় ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হবে। চার দিকের অশুভ আলামত ও বিপজ্জনক সব হামলার ঘটনার ব্যাপারে আমি সকলকে সতর্ক ও সজাগ হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। দেশে  যাতে  কোনোভাবেই নৈরাজ্যকর নিরাপত্তা পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে দিকে আমি সকলকে নজর রাখতে বলবো।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আগামী পরশু ৩০ ডিসেম্বর দেশে ২শ’৩৪টি পৌরসভায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এখন  নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। এই নির্বাচনটি খুবই তড়িঘড়ি করে ঘোষণা করা হয়েছে। রেওয়াজ থাকা সত্বেও সময় স্বল্পতার অজুহাতে ইলেকশন কমিশন এ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কোনো আলাপ-আলোচনারপ্রয়োজন বোধ করেনি। অথচ এবারের মেয়র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে দলীয় ভিত্তিতে। জাতীয় নির্বাচনের দলীয় প্রতীক এই স্থানীয় নির্বাচনে মেয়র প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত নেওয়া খুবই প্রয়োজন ছিলো বলে আমরা মনে করি। দেশবাসী দেখেছেন, ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন বছরের পর বছর ধরে অনুষ্ঠিত না হলেও সে ব্যাপারে নির্বাচন কমিশনের কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি। শাসক দলের সুবিধাজনক সময়ের জন্য তারা দীর্ঘদিন অপেক্ষা করেছে। আমাদের দলের পক্ষ থেকে আমরা পৌর নির্বাচনের মনোনয়নপত্র দাখিলের সময় মাত্র ১০ দিন পিছিয়ে দেওয়ার আহবান জানিয়েছিলাম। কিন্তু খোঁড়া যুক্তি তুলে নির্বাচন কমিশন তা মানেনি।
নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরির ব্যাপারেওকমিশন অনাগ্রহ প্রকাশ করেছে। এরমধেই এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে, আসন্ন পৌর নির্বাচনকেও প্রহসনে পরিণত করার সব আয়োজন সম্পন্ন করা হয়েছে। বিরোধীদলের অফিস ও প্রার্থীর ওপর হামলা, সমর্থকদের হত্যা, প্রচারণায় বাধা দেওয়া, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গ্রেফতার ও হুমকি চরম আকার ধারণ করেছে। বিরোধীদল সমর্থক ভোটার ও সম্ভাব্য এজেন্টদের ভোটকেন্দ্রে না যাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি দেখানো হচ্ছে। সন্ত্রাসী ছাড়াও আইন-শৃক্সখলাবাহিনীর একশ্রেণীর সদস্যকে এই অপকর্মে ব্যবহার করা হচ্ছে। সরকারি দলের সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন নির্বাচনী এলাকায় প্রকাশ্যে অস্ত্রের মহড়া দিচ্ছে, সশস্ত্র হামলা চালাচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। ভোটকেন্দ্র দখলের হুমকিও দেওয়া হচ্ছে। শাসক দলের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আচরণবিধি  বেপরোয়াভাবে লংঘণ করে চলছেন। এর কিছু কিছু খবর সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হলেও মামুলি কারণ দর্শানো নোটিশ এবং তারপর লোক দেখানো দুঃখ প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন দায় সারছে। ইতিমধ্যে ক্ষমতাসীনদের আচরণবিধি লংঘণ রোধে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা কামনা করেছে নির্বাচন কমিশন। এর মাধ্যমে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে নিজেদের অসহায়ত্ব ও অক্ষমতাই প্রকাশ করেছে।
চাপ ও ভয়-ভীতি দেখিয়ে অনেক জায়গায় বিরোধীদলের প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেয়া হয়নি এবং প্রত্যাহারে বাধ্য করা হয়েছে। এই প্রক্রিয়ায় ৭ জন মেয়র ও ১শ’৩২ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়েছে।  বর্তমান অদ্ভুত সরকারের তথাকথিত বিরোধীদলের এক নেতা, যিনি আবার প্রধানমন্ত্রীরও দূত, তিনি বলেছেন যে, ভোটের দিন সকাল নয়টার মধ্যেই ভোট শেষ হয়ে যাবে। এক মন্ত্রীও বলেছেন যে, ভোট হওয়ার আগেই নাকি বিএনপি’র পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে।
এসব কথা থেকেই সকলের সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে যে, পৌর নির্বাচনকে কী ধরণের প্রহসনে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়ে সরকার এগুচ্ছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি করেছি। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এ দাবি নাকচ করে বলা হয়েছে যে, সেনাবাহিনী মোতায়েনের মতো পরিস্থিতি না-কি সৃষ্টি হয়নি। আমরা জানি না, আর কত ভয়াবহ অবস্থা হলে নির্বাচন কমিশন সেনা মোতায়েনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করবেন।আমরা জানি না, নির্বাচনী দায়িত্বে জাতীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েনের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন ও সরকারের এতো অনীহার কারণ কি? সকলেই এ বাস্তবতা স্বীকার করবেন যে, আমাদের প্রশাসন ও আইন-শৃক্সখলা বাহিনী ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবের কারণে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেনা। ফলে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের স্বার্থে নির্বাচনী দায়িত্বে সেনা মোতায়েন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। অতীতেও সেনাবাহিনীর সহায়তায় বিভিন্ন নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। তাই আমরা আবারও পৌর নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানাচ্ছি। নিজ উদ্যোগেই এই কাজটি করার সাংবিধানিক ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনের রয়েছে। তারা যদি একটি স্বাধীন জাতীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তাহলেইআসন্ন পৌর নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হতে পারে। আর তা হলেই বর্তমান নির্বাচন কমিশন তাদের হারানো ভাবমূর্তি ফিরে পেতে পারে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
এবারেই প্রথম মেয়র নির্বাচন দলীয় ভিত্তিতে এবং দলীয় প্রতীক ব্যবহার করে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনটি পরিপূর্ণভাবে দলীয় ভিত্তিতে হচ্ছে না। কাউন্সিলর প্রার্থীরা দলীয় প্রতীক ব্যবহার করতে পারছেন না। একটা জগাখিচুড়ি ব্যবস্থায় নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আমার মনে হয়, এর পেছনে সরকারের ঘোর দুরভিসন্ধি রয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করেনি। কারণ জাতীয় দাবি ছিল নির্বাচনটি হতে হবে নির্দলীয়-নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে।  এর আগে পঞ্চদশ সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধানটি সংবিধান থেকে বিলুপ্ত করা হয়। সৃষ্টি হয় নজিরবিহীন রাজনৈতিক সংকট।
সেই সংকটের মধ্যেই প্রধান বিরোধী দল বিএনপিসহ অধিকাংশ রাজনৈতিক দল বর্জিত এবং ভোটারবিহীন সেই তথাকথিত নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছে বিদায়ী সংসদ বহাল রেখেই।স্বাভাবিকভাবেই সেই তথাকথিত নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ ৫ শতাংশের বেশি ছিল না। ১শ’৫৪টি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় একক প্রার্থীকে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়; যা সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১শ’৫১টি আসনের বেশি। কলংকিত সেই নির্বাচনের পর গঠিত সংসদের তথাকথিত বিরোধী দলটিও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রিত্ব নিয়ে সরকারেরও অংশ হয়ে আছে। এই অদ্ভুত ব্যবস্থা কোনোক্রমেই গণতন্ত্র নয়। এই নির্বাচন দেশে-বিদেশে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। ফলে ক্ষমতাসীন সরকারের নৈতিক বৈধতার সংকট রয়ে গেছে। এই সংকট কাটাতে প্রয়োজন একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় ব্যবস্থার অধীনে সবার অংশগ্রহণমূলক নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
দলীয় ভিত্তিতে পৌর মেয়র নির্বাচন করার ব্যবস্থা সরকার করেছে  সেই সংকট থেকে উত্তরণের দূরাশা নিয়ে। তারা এই নির্বাচনে সকল রকম অনিয়মের মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দিয়ে দেশবাসী এবং পৃথিবীকে দেখাতে চায় যে, তাদেরও জনপ্রিয়তা আছে। সেই অসৎ উদ্দেশ্যেই আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রশাসন ও পেশিশক্তি ব্যবহার করে তারা নির্বাচনী ফলাফল ছিনতাই করতে চায়।আপনারা দেখেছেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তারা ন্যক্কারজনকভাবে প্রশাসন,আইন-শৃক্সখলা বাহিনী ও নির্বাচন কমিশনের দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে সরকার-সমর্থক প্রার্থীদের পক্ষে প্রকাশ্যে ব্যবহার করেছে। নির্বাচনকে তারা আবারো হুন্ডা-ডান্ডা-গুন্ডার নির্বাচনে পরিণত করেছে। এবার পৌর নির্বাচনেও তার পুনরাবৃত্তির পাঁয়তারা চলছে।আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর প্রতি আমার আহবান,আপনারা সবাই মিলে দলে দলে ব্যাপক সংখ্যায় ভোট কেন্দ্রে হাজির হয়ে সর্বশক্তি দিয়ে নিজেদের ভোটের মর্যাদা রক্ষায়আপ্রাণ চেষ্টা করবেন। যারা আপনাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে, যারা আপনাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের অপকৌশলে সরিয়ে দিয়েছে, তাদের ভোট চাইবার কোনো অধিকার নেই। জনতার ঐক্যবদ্ধ শক্তি যে-কোনো স্বৈরশাসকের অসৎ উদ্দেশ্যকে ব্যর্থ করে দেবার জন্য যথেষ্ট। আমরাও শেষ পর্যন্ত নির্বাচনী যুদ্ধে অবিচল থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। শাসক দল নির্বাচনের উপর অশুভ প্রভাব বিস্তারের যে পরিকল্পনা করেছে তা শান্তিপূর্ণ পন্থায় ঐক্যবদ্ধভাবেরুখে দাঁড়ান।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
বিএনপি স্থানীয় সরকারের প্রতিটি নির্বাচনেই অংশগ্রহণ করে আসছে। ৫টি সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীরা বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। এসব নির্বাচনকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখিয়ে শাসক দল বলেছে যে, তারা নির্বাচনে কারচুপি করে না। মনে রাখা দরকার, এই নির্বাচনগুলো হয়েছিল জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগে। সেই সময় সরকার দেখাতে চেয়েছিল যে, তাদের অধীনেই সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব। তাদের উদ্দেশ্য ছিলো বিরোধীদল যেন ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ফলাফল দেখে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনেইজাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি হয়। কিন্তু তাদের সেই ষড়যন্ত্র উন্মোচিত হয়েছে। ৫টি সিটি করপোরেশনে জনগণের নির্বাচিত ৫জন মেয়রকেই সরকার বরখাস্ত করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে অনেক নির্বাচিত বিরোধীদলীয় পৌর মেয়র ও উপজেলা চেয়ারম্যানকেও বরখাস্ত করা হয়েছে। এতে তাদের গণতন্ত্র-বিরোধী চরিত্র আরও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটারবিহীন সংসদ নির্বাচন, উপজেলা পরিষদ ও ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আপনারা শাসক দলের সন্ত্রাস, দখলদারী ও ন্যক্কারজনক কারচুপির চিত্র অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এবং পেশাদারিত্বের মনোভাব নিয়ে প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে তুলে ধরেছেন। আপনাদের সততা ও বস্তুনিষ্ঠতার কারণে দেশবাসী এবং বিশ্ববাসী জানতে পেরেছে আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে কখনো কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয় না। আমি জানি, এবার সাংবাদিকরা যাতে নির্বাচন চলাকালে তাদের পেশাগত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে না পারেন তার জন্য নানা ধরণের অপচেষ্টা চলছে।  ভোটকেন্দ্রে সাংবাদিকদের প্রবেশাধিকারের ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। সাংবাদিকদের অনুমতিপত্র দেওয়ার ব্যাপারেও সরকারি দলের নেতাদের গোপনে মতামত নেয়া হচ্ছে।এই সরকার বিকল্প মিডিয়ার উপরেও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক মিডিয়া ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উপরও খবরদারি করছে।এই নির্বাচনে ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়ে আমরা একটি বিজ্ঞাপনচিত্র প্রচার করতে চেয়েছিলাম। সরকারের পরোক্ষ চাপের কারণে ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো সে বিজ্ঞাপনটি প্রচারেও রাজি হয়নি।এসব ঘটনায় সরকারে অগণতান্ত্রিক আচরণ আরো ন্যক্কারজনকভাবে ফুটে উঠেছে।এতো সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আমরা বিশ্বাস করি, এবারের পৌর নির্বাচনে আপনারা আগের মতোই সাহসের সঙ্গে সত্যকে তুলে ধরার ক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভ‚মিকা পালনে সচেষ্ট থাকবেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আপনারাই সংবাদ দিচ্ছেন, প্রায় প্রতিদিনইসারা দেশে বিএনপির নেতা-কর্মীদেরমিথ্যা মামলায় ঢালাওভাবে গ্রেফতার করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য বিরোধীদল ও ভিন্নমতকে ধ্বংস করে কার্যত বাকশালের মতো একদলীয় শাসন পাকাপোক্ত করা। বর্তমান সরকারের নিষ্ঠুর দমননীতির ফলে আমাদের বহু নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। অনেকে গুম হয়েছেন। তাদের স্বজনেরা, মায়েরা ও বোনেরা গুম হয়ে যাওয়া সন্তান ও ভাইদের ছবি বুকে ধারণ করে আহাজারি করছেন। আমরা বিশ্বাস করি, বীরের এই রক্তস্লোত, মায়ের এই অশ্রুধারা কখনো বৃথা যাবে না। আপনারা জানেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই নাজুক। দ্রব্যমূল্যের ক্রমাগত ঊর্ধ্বগতির ফলে জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশী-বিদেশী বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে না। কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য দাম না পেয়ে কৃষিকাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের নামে চলেছে লুঠপাঠের মহোৎসব। ব্যাংকিংখাত অচল হয়ে পড়ছে সীমাহীন দুর্নীতিতে। শেয়ার বাজারে অবাধ লুণ্ঠণে নিঃস্ব হয়েছে অসংখ্য পরিবার। জনগণের সম্পদ লুণ্ঠন করে বিপুল অর্থ বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অর্থনীতি নিয়ে আশাবাদী হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্তমান অর্থনৈতিক নৈরাজ্য, বিশৃক্সখলা ও অব্যবস্থাপনা এবং দুর্নীতি ও লুঠপাঠ অব্যাহত থাকলে পরিস্থিতির আরও ভয়াবহ অবনতি ঘটবে।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রতিষ্ঠিত  বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল একটি উদার গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল। আমরা বিশ্বাস করি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম অঙ্গীকার গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠিত করতে না পারলে মুক্তিযুদ্ধের আকাক্সক্ষা ও স্বাধীনতার প্রত্যাশাই অপূর্ণ থেকে যাবে। বিজয়ের এই মাসে আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে যে সাম্য, সামাজিক ন্যায়বিচার ও মানবিক মর্যাদার কথা বলা হয়েছে, তার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই বাংলাদেশের জনগণের কাক্সিখত মুক্তি অর্জন সম্ভব। এই বিশ্বাস থেকে আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বারবার লড়াই-সংগ্রামের পথে অর্জন করেছি গণতন্ত্র। দুর্ভাগ্য জাতির, শহীদের রক্তে অর্জিত সেই গণতন্ত্র বারবার লুণ্ঠিত হয়েছে। আজ আবার আমাদেরকে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক কঠিন সংগ্রামে নিয়োজিত হতে হয়েছে।সেই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অংশ হিসাবেই আমরা আসন্ন পৌর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয়েছি।
আপনাদের মাধ্যমে আমরা দেশবাসীকে অনুরোধ জানাই, আসন্ন পৌর মেয়র নির্বাচনে আমাদের মনোনীত প্রার্থীদেরকে ‘ধানের শীষ’ প্রতীকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করবেন। আপনাদের অধিকার ও গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে ভ‚মিকা রাখবেন।
প্রিয় সাংবাদিকবৃন্দ,
আমি আপনাদেরকে এবং আপনাদের মাধ্যমে প্রিয় দেশবাসীকে আসন্ন ইংরেজি নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। আজকের সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত হবার জন্য আপনাদের সকলকে জানাই অশেষ ধন্যবাদ।