Fri. Jun 20th, 2025
Logo Signature
Agrani Bank
Rupali Bank
Advertisements

21খোলা বাজার২৪, সোমবার, ২৮ ডিসেম্বর ২০১৫ : দলভিত্তিক পৌরসভা নির্বাচনে প্রচারের শেষ দিন ভোটারদের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে, পথসভা ও ঘরোয়া সভায় ভোট চাইছেন প্রার্থীরা।
বুধবার দেশের ২৩৪ উপজেলায় ভোট সামনে রেখে সোমবার মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত প্রচার চালানোর সুযোগ রয়েছে তাদের।
৩০ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে গুছিয়ে ফেলেছেন নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং কর্মকর্তারা।
দলভিত্তিক প্রথম পৌর নির্বাচন শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণভাবে শেষ করতে পারাকেই বড় ‘চ্যালেঞ্জ’ বলে মনে করছেন নির্বাচন কমিশন সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “প্রচার শেষ হতে যাচ্ছে। আমরা ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছি। ইতোমধ্যে বিধি ভঙ্গ ও নানা ধরনের অভিযোগ যাচাই করে কিছু ব্যবস্থা নিয়েছি। এখন ভোটের দিন সুষ্ঠুভাবে ভোট সম্পন্ন করাই বড় চ্যালেঞ্জ।”
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, এবার আওয়ামী লীগের ২২৮ জন এবং বিএনপির ২২৫ জন মেয়র প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন। এর মধ্যে ২২২টি পৌরসভায় নৌকা ও ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থীরা আছেন মুখোমুখি লড়াইয়ে।
মোট ২০টি দল এই নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে; মেয়র পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছেন ২৮৮ জন, যাদের অনেকেই প্রধান দলগুলোর বিদ্রোহী প্রার্থী। এই পদে নারী প্রার্থী রয়েছেন ২০ জন।
বুধবার ২৩৪টির পর ৭ জানুয়ারি ভোট হবে সিঙ্গাইর পৌরসভায়। এই ২৩৫ পৌরসভায় মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১২ হাজারেরও বেশি প্রার্থী রয়েছেন বলে ইসি কর্মকর্তারা জানান।
ভোটের শুরু থেকে প্রচারের শেষ পর্যন্ত বিধিলঙ্ঘন ও হামলা-সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে অর্ধশতাধিক পৌরসভায়। ইসির মনিটরিং কমিটি এমন ৭৮টি পৌরসভার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রে অভিযোগের সত্যতা না পাওয়ার কথা বলেছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দীন আহমদও শেষ মুহূর্তের প্রচারে বিশৃঙ্খলা এড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন।
‘কিছু এলাকায়’ মারপিট-সংঘর্ষ হওয়ার কথা স্বীকার করে রোববার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, অন্যায়ভাবে কেউ ভোটে জিতলে আদালত রয়েছে বিচারের জন্য। সংক্ষুব্ধ যে কেউ আদালতে যেতে পারেন।
“সোমবার থেকে পরিস্থিতি সামাল দিতে মাঠে নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম থাকছে। সঙ্গে সব এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকছে। আশা করি, প্রচারের শেষ দিন পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে।”
তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনী এলাকায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এ পর্যন্ত শতাধিক প্রার্থী-সমর্থকদের জরিমানা করেছেন। বিধি লঙ্ঘনে পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করতে পারে ইসি।
নির্বাচন কমিশন ইতোমধ্যে ছয়জন সাংসদকেও সতর্ক করে নোটিস দিয়েছে। দুজন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বদলি, ছয়জন ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সেইসঙ্গে রিটার্নিং কর্মকর্তারা স্থানীয়ভাবে অন্তত এক ডজন প্রার্থীকে কারণ দর্শাতে বলেছেন।
এ অবস্থায় সুষ্ঠুভাবে ভোট আয়োজন নিয়ে আওয়ামী লীগে ‘স্বস্তি’ থাকলেও বিএনপি ও জাতীয় পার্টি শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে।
ক্ষমতাসীন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নির্বাচন কমিশনে এসে বলেছে- বিদ্যমান ভোটের পরিস্থিতি ‘ভালোই’ রয়েছে। তবে ক্ষমতাসীনদের প্রতি ইসি ‘নির্দয় আচরণ’ করছে।
অন্যদিকে বিএনপির প্রতিনিধিরাও রোববার সিইসির সঙ্গে দেখা করে বলেছেন, পরিস্থিতির ‘অবনতি’ হচ্ছে। ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ ইসিকেই নিশ্চিত করতে হবে।
মেয়র পদে ২০টি দলের সাড়ে নয়শ’ প্রতিদ্বন্দ্বী
এবার মেয়র পদে আওয়ামী লীগের ২২৮ জন, বিএনপির ২২৫ জন ও জাতীয় পার্টির ৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে ২৮৮ জন, যার মধ্যে অর্ধশতাধিক আওয়ামী লীগ-বিএনপি’র বিদ্রোহীরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন।
এছাড়া এলডিপি’র একজন, জেপি ছয় জন, সিপিবি চার জন, ন্যাপ একজন, ওয়ার্কার্স পার্টি আটজন, বিকল্পধারা’র একজন, জাসদ ২১ জন, বাসদ একজন, তরিকত ফেডারেশন একজন, এনপিপি ১৭ জন, পিডিপি একজন, ইসলামী ঐক্যজোট একজন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস একজন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ৫৭ জন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ তিন জন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি একজন, খেলাফত মজলিস-এর একজন প্রার্থী রয়েছে।
বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত ১৪১
এবার মেয়র, সাধারণ ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে এক হাজার ২৪৩ জন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী রয়েছে।
এর মধ্যে মেয়র পদে সাত জন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৯৪ জন ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৪০ জন প্রতিদ্বন্দ্বী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন।
এই ১৪১ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় বাকি প্রার্থীরা ভোটের মাঠে থাকবে।
প্রচারণা শেষ ও বহিরাগত নিষিদ্ধ
ভোটের শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে মাঠের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে যে কোনো ধরনের অনিয়মের ক্ষেত্রে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর (সোমবার) রাত ১২টা থেকে ১ জানুয়ারির মধ্যরাত পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোনো ব্যক্তি জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা তাতে যোগদান করতে পারবেন না। এছাড়া কোনো মিছিল বা শোভাযাত্রা করতে পারবেন না।
এই সময়ের মধ্যে এ ধরনের কোনো কার্যক্রম করা হলে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তাদের ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
২৮ ডিসেম্বর রাত ১২ টার আগেই বহিরাগতদের (যারা ভোটার বা বাসিন্দা নন) নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার থেকে পরবর্তী সাতদিন অস্ত্রের লাইসেন্সেধারীদের অস্ত্রসহ চলাফেরা না করা, অস্ত্রবহন ও প্রদর্শন না করার বিষয়ে জেলা প্রশাসকদের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।
ইসির অনুমোদনের পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খান স্বাক্ষরিত পরিপত্রে এ সব নির্দেশনা বিভিন্ন বাহিনীর প্রধান, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, নির্বাচন কমিশন ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তা বরাবর পাঠানো হয়েছে।